নবীজির প্রতি ভালোবাসার চিঠি

প্রিয় মানুষকে নিয়ে লিখতে বসলে হাজারও শব্দমালা ঘুরঘুর করে মগজে। কলমের ডগায় তরতরিয়ে আসতে থাকে অক্ষর। ধবধবে সাদা খাতা ভরতে থাকে কালো রঙের কালিতে।

হৃদয়ের সব কথা বাক্য হয়ে সন্নিবেশিত হয় কাগজে। আর যদি সেই মানুষটি হয় জগৎ সংসারের শ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যাকে সৃষ্টি না করলে সৃষ্টি করা হতো না এই পৃথিবী। অবলীলায় ভেসে ওঠে ঊষর মরুর সেই বাসিন্দার কথা। যার শুভাগমনে সার্থক হলো ধরা। সফল হলো জিনও ইনসান। যার সংস্পর্শে ধন্য হলো সৃষ্টিকূল। পরিণত হলো সৎচরিত্রবান জাতিতে।

খোশবু ছড়ালো পৃথিবীর আনাচে-কানাচে। তার দর্শনে অন্তরে সৃষ্টি হলো খোদায়ী নূরের তাজাল্লি। পিপাসার্ত চোখ একনাগারে চেয়ে থাকল তার অপরূপ সৌন্দর্যের দিকে। পিপাসা মেটাল মহাপুরুষের দিদারে। নবচেতনায় সতেজ হলো জাহিলি যুগের মূর্তিপূজক আত্মাগুলো। সন্ধান পেলো ইমানি অমৃতজলের।

হে দয়ার নবী! সৃষ্টিকর্তার লীলা যে চির রহস্যঘেরা। কে জানে কখন কাকে সিক্ত করে তার করুণা। তাই তো চৌদ্দশ বছর আগের মূর্খ আরব জাতি ধন্য হলো আহমদী নূরের সওগাতে। তাদের জন্ম সার্থক হলো মরু মক্কার এতিম দুলালের সেই মোহিনী রুপ দেখে।

মুহাম্মদী নবুয়াতের অরুণালোকে স্মাত হলো মক্কার বলাভূমি পর্যন্ত। নবীর পদভারে ধন্য হলো আরবের অলিগলি। কিন্তু বঞ্চিত হলাম আমি চৌদ্দশ বছর পর পৃথিবীতে এসে। কপালে জোটেনি তোমার দর্শন। এই দুঃখে ক্ষত-বিক্ষত আমার কোমল হুদয়। ব্যথাতুর আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ।

শুনেছি তোমার ভেতরে মহান প্রভু অপরূপ রূপ মহিমার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাই তো হাজার বছরের পরও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তোমার রওজার জিয়ারতের জন্য পঙ্গপালের ন্যায় ছুটে যায় মুসলমান। স্বর্গীয় জ্যোতিরময়তায় প্রশান্তি লাভ করে পাষাণশয্যা হৃদয়।

হে প্রিয়তম মুহম্মদ! হতবাগা এই বাঙালি তোমার যুগে জন্ম না হওয়ায় বঞ্চিত হয়েছে সরাসরি দর্শন থেকে। দেখতে পারিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানবকে। যিনি দুপুরের সূর্যের মতো দীপ্ত প্রদীপ হয়ে আলো ছড়িয়ে ছিলেন আঁধার যুগে।

মুষলধারে বৃষ্টিবর্ষক পরিপূর্ণ মেঘমালারূপী নবজীবনদাতা হয়ে পথ দেখিয়ে ছিলেন সব ধরনের কুসংস্কারে নিমজ্জিত ভ্রষ্টজাতিকে।

বিশ্বমানবের প্রতি তার এতই স্নেহ ছিল যে, তাদের কষ্টদায়ক বস্তু তার জন্য অসহনীয় এবং তাদের জন্য মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী। পৃথিবীতে আসলেন তিনি পিপাসা নিবারক সুমিষ্ট ঝনরারূপী মেহেরবান ও দয়ালু হয়ে। সে যুগের হাজারও মানুষের চোখ ধন্য হয়েছে প্রিয় নবীর দর্শনে। পরম তৃপ্তিসহ দেখেছে তার রূপ।

হে প্রিয়তম নবী! তোমাকে সরাসরি দর্শন-সৌভাগ্য লাভে না হয় বঞ্চিত হলাম, তাই বলে কি নবীর সংস্পর্শে ধন্য স্মৃতিবিজড়িত মদিনা, যেখানে শায়িত প্রিয় নবী মুহম্মদ (সা.) সেখানেও ঘুরে দেখে নিজের চোখকে ধন্য করার সুযোগ হবে না! কপালে কি জুটবে না রওজা পাকের জিয়ারত? যার নুরানি উৎকর্ষতা চন্দ্র-সূর্যকেও ম্লান করে দেয়।

সালাম জানাতে কি পারব না নবীর কবরের কাছে দাঁড়িয়ে? যেখানে আছে ভূ-পৃষ্ঠের বেহেশতি বাগান। দেখতি কি পারব না কালের সাক্ষী হয়ে থাকা নবীজির স্মৃতিময় মক্কা মদিনা। জানি না এজন্মে দেখার সুযোগ হবে কিনা। কিন্তু তার পরও তোমার অসীম দয়ার কাছে ভিক্ষা চাচ্ছি হে প্রভু! মক্কা মদিনায় যাওয়ার তাওফিক দান করো।

হে প্রিয়তম মুহম্মদ! এসব কিছুই যদি কপালে না থাকে তার পরও তো একটা সুযোগ আছে তোমার দিদারের। স্বপ্নের বাতায়নের পথেও কি নসিব হতে পারে না একবার তোমার দর্শন। শুনেছি যে চোখ তোমার প্রেমের সুরমা একবার মেখেছে স্বর্গ-মর্তের সব সৌন্দর্যের মোহ থেকে তার চিরমুক্তি ঘটেছে। পাথর নাকি সোনা হতো তোমার পরশগুনে।

পাষাণ হৃদয়ও নাকি মোম হতো তোমার দৃষ্টিতে। তা হলে এদিকে হোক না একবার সেই করুণার দৃষ্টি। তোমার নূরের তাজাল্লির একটুখানি পরশ লাভের আশায় দুহাত পেতেছে এই বাঙালি ভিখারি। দোহাই তোমার প্রেমের! বঞ্চনার দহনে আর দগ্ধ করো না এই অভাগাকে।

পরিশেষে শোনো হে প্রিয়তম মুহম্মদ! তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের আকুতি যেভাবেই হোক একবার হলেও স্বপ্নের ভেতরে দেখা দিয়ে ধন্য করো আমাকে। সার্থক করো এই জীবনের একটি চাওয়াকে। তোমার জন্যই যে সাজিয়েছি আমার এই হৃদয়ের সিংহাসন। যেখানে শুধু তুমিই থাকবে চিরজীবন।

 

সূত্রঃ যুগান্তর
facebook sharing button