নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণে বিভ্রান্তি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বর্তমানে দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাংলা ব্যাকরণ। বিজ্ঞান বিভাগ, মানবিক বিভাগ, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ এবং দাখিল পর্যায়ে বাংলা ২য় পত্র একটি আবশ্যিক বিষয়। তাই বাংলা দ্বিতীয়পত্রে ভালো করার জন্য নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বইটি পাঠের বিকল্প নেই। এনসিটিবি কর্তৃক প্রকাশিত উক্ত বইটি হলো বাংলা ব্যাকরণের মূলভিত্তি।

কিন্তু আমি নিজে এবং আমার মতো দেশের আরও অনেক শিক্ষার্থীর কাছে এই বইটি আতঙ্কস্বরূপ। আর এই আতঙ্কের মূল কারণ হলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিষয়গুলোকে জটিলভাবে উপস্থাপন এবং বিভিন্ন জায়গায় অপ্রত্যাশিত কিছু ভুল-ভ্রান্তি। তাই আমরা এসবকিছু জেনে শুনেও সহজ একটি বিষয়কে জটিলভাবে আয়ত্ত করছি। যার ফলে কিছুদিন পরে তা আবার ভুলে যাচ্ছি।

শিশুদেরকে যেমন জুজুর ভয় দেখিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়, তেমনি আমাদেরও এসএসসি পরীক্ষার কথা চিন্তা করে বইয়ের ভুল বিষয়গুলো অসংশোধিত রূপে বারবার মুখস্থ করতে হচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শুরু করে স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মুখস্থ করার মতো অসহনীয় যন্ত্রণার স্বীকার।

কিন্তু এতে করে কী লাভ হচ্ছে? বাংলা দ্বিতীয়পত্রে বহু-নির্বাচনী প্রশ্ন আসে মোট ৩০টি। একজন শিক্ষার্থী বইটি ভালোভাবে পড়ার সময় জটিল জায়গাগুলোতে আটকে যায় এবং সঠিক উত্তর নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মুখে পড়ে।

এক্ষেত্রে বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষকের শরণাপন্ন হলে তারা ভুলগুলো দেখিয়ে দেন। কিন্তু শেষমেশ ওই জুজুর ভয়ের মতোই আমাদের ভুল বিষয়গুলোকে মুখস্থ করতে হচ্ছে। কারণ একটাই– পরীক্ষায় ভালো করতে হবে।

নিম্নে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বইটিতে আমার কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব তুলে ধরছি:

বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বইটিতে ১৭ নং পৃষ্ঠায় ধ্বনিতত্ত্বের আলোচনায় বলা হয়েছে, ‘উষ্মধ্বনিঃ শ,ষ,স,হ– এ চারটি বর্ণ দ্যোতিত ধ্বনি উচ্চারণের সময় আমরা শ্বাস যতক্ষণ খুশি রাখতে পারি। এগুলোকে বলা হয় উষ্মধ্বনি বা শিশধ্বনি। এ বর্ণগুলোকে বলে উষ্মবর্ণ।’

এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, উষ্মবর্ণ মোট ৪ টি। যথা: শ,ষ,স,হ। কিন্তু একই অধ্যায়ের ২৩ নং পৃষ্ঠায় একটি লাইনে সরাসরি বলা হয়েছে যে, ‘শ,ষ,স – এ তিনটি উষ্মবর্ণ।’ তাহলে প্রশ্ন হলো, কোনটা সঠিক?

আবার ৪৩ নং পৃষ্ঠায় শেষের দিকে কিছু বিশেষ বিসর্গ-সন্ধির কথা বলা হয়েছে-

বাচঃ+পতি= বাচস্পতি

ভাঃ+কর= ভাস্কর

অহঃ+নিশা= অহর্নিশ

অহঃ+অহ= অহরহ

এখানে বাচস্পতি ও ভাস্কর বিসর্গ-সন্ধির নিয়মগুলোর মধ্যে ৫ নং নিয়মের অন্তর্গত এবং অহরহ ২ নং নিয়মের অন্তর্গত।

তাহলে প্রশ্ন হলো, নিয়ম দ্বারা সাধিত বিসর্গসন্ধিগুলোকে কেন বিশেষ বিসর্গ-সন্ধির কাতারে ফেলা হলো? এভাবেই তো একজন শিক্ষার্থী জটিলতার মুখে পড়ে। আরেক জায়গায়, ৪৫ নং পৃষ্ঠায় বাংলা স্ত্রীবাচক প্রত্যয় এর ৩ নং নিয়মের উদাহরণ হিসেবে অভিসারি-অভিসারিণী শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু, বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলা ভাষার অভিধান হতে জানতে পারি, অভিসারী ও অভিসারিণী শব্দ দুটি তৎসম শব্দের অন্তর্গত।

তাহলে প্রশ্ন হলো, বাংলা স্ত্রীবাচক প্রত্যয় এর উদাহরণে কেন উক্ত শব্দ দুটি স্থান পেল?

কাজেই একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি যেসকল সমস্যার মুখে পড়েছি তার আংশিক তুলে ধরলাম মাত্র। পুরো বইটি বিশ্লেষণ করলে এরকম আরও অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জটিলতা পাওয়া যাবে যা আমাদের মতো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য বোঝাস্বরূপ। তাই দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে, দেশের ব্যাকরণবিদগণ, বাংলা একাডেমি ও NCTB এর কাছে আকুল আবেদন যে, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বইটি পুনরায় যাচাই-বাছাই করে ভুল-ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে সংশোধন করা হোক।

এতে করে দেশের সকল মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। মনের মধ্যে সংশয় নিয়ে মুখস্থ করা থেকে বের হয়ে এসে আমরা উজ্জ্বল আলোর পথে নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে পারবো তথা বাংলা ভাষাকে আরও গভীরভাবে জানতে পারবো।