নতুন মঞ্চে যেভাবে কার্যকর দুজনের ফাঁসি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

অর্ধযুগ আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে তৈরি দুটি নতুন ফাঁসিকাষ্ঠে প্রথমবারের মতো ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। দেড় যুগ আগে এক সিএনজি অটোরিকশা চালককে হত্যার দায়ে দুই পেশাদার ছিনতাইকারী মো.সাইফুল ওরফে শহীদ এবং মো.শহীদুল্লাহ ওরফে শহীদকে পাশাপাশি দুটি ফাঁসিকাষ্ঠে রশিতে ঝুলিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ জুলাই) রাত ১২টা ১ মিনিটে দুজনের ফাঁসি কার্যকরের মধ্যে কার্যত যাত্রা শুরু করেছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের অত্যাধুনিক ফাঁসির মঞ্চ দুটি।

এর আগে ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে স্ত্রী হত্যার দায়ে দণ্ডিত এক আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল।  ২০১১ সালে সাড়ে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মিত হয় দুটি ফাঁসির মঞ্চসহ ৩৫ টি ভবন।

ফাঁসি কার্যকরের সময় উপস্থিত থাকা চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, রাত ১২টা ১ মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।  ফাঁসি কার্যকরের আগে যেসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয় সবই করা হয়েছে।

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, রাত সোয়া ১১টার দিকে সাইফুল ও শহীদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য কারাগারে প্রবেশ করেন।  দুজনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাদের গোসল করানো হয়।  তারা মুরগির গোশত দিয়ে সাদা ভাত খান। এরপর চট্টগ্রাম কারা মসজিদের পেশ ইমাম মো.ইলিয়াছ আজম তাদের তওবা পড়ান।  এরপর দুজনকে জম টুপি পরানো হয়।

তখন ফাঁসির মঞ্চ পুরোপুরি প্রস্তুত।  পাঁচজন জল্লাদ মঞ্চের পাশে অপেক্ষায় আছেন।  মঞ্চের আশপাশে আছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন) অসীম কান্ত পাল, সিনিয়র জেল সুপার মো.ইকবাল কবীর, জেলার মাহবুবুল ইসলাম, নগর পুলিশের উপ কমিশনার (বিশেষ শাখা) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া ও অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো.আব্দুর রউফ এবং জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান।

ঠিক ১১টা ৫৫ মিনিটে জেলা প্রশাসক ও জেল ‍সুপার ভেতরে গিয়ে পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় দুজনকে ফাঁসিকাষ্ঠের সামনে নিয়ে আসেন।  এসময় সাইফুল দোয়া-দরুদ পড়ছিলেন।  শহীদ নিশ্চুপ অবস্থায় হাঁটছিলেন।  জল্লাদরা তাদের মঞ্চে তুলে গলায় রশি পরিয়ে দেয়।

ঠিক রাত ১২টা ১ মিনিটে জেলা প্রশাসক ফাঁসি কার্যকরের সংকেত দেন।  সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবীর হাত থেকে রুমাল মাটিতে ফেলে দেন।  সঙ্গে সঙ্গে লিভার টেনে দেয় জল্লাদরা।  উপর থেকে সাড়ে আট ফুট গর্তে ঝুলে পড়ে দুজন।  সিভিল সার্জন পরীক্ষা করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

এরপর কারাগার থেকে একে একে বেরিয়ে আসেন জেলা প্রশাসকসহ সরকারি কর্মকর্তারা।

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১৯ মে রাতে মিরসরাই উপজেলা সদর থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে তিনজন ফটিকছড়ি যায়।  ফটিকছড়িতে একটি নির্জন স্থানে চালক আজিজকে খুন করে ফেলে রেখে তারা অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায়।

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় উপ কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) অসীম কান্ত পাল জানান, সিএনজি অটোরিকশা চালক নিখোঁজের ঘটনায় মিরসরাই থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।  মামলা নম্বর ০৮ (০৫) ২০০৪।  মরদেহ উদ্ধারের পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়।  মামলায় তিনজনকে আসামি করা হয়েছিল।

২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ আব্দুর রহমান পাটোয়ারি তিন আসামিকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছিল।  হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে সাজা বহাল থাকে।  আপিল বিভাগে মীর হোসেন নামে একজনের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয় বলে জানান অসীম কান্ত পাল।

আপিল বিভাগে ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকার পর সাইফুল ওরফে শহীদ এবং শহীদুল্লাহ ওরফে শহীদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে ব্যর্থ হন।  প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার নথি চট্টগ্রাম কারাগারে এসে পৌঁছানোর পর তাদের ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়।

ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা সাইফুল ওরফে শহীদ মিরসরাই উপজেলার উত্তর হাজীসরাই গ্রামের লেদু মিয়ার বাড়ির কামাল উদ্দিনের ছেলে।  শহীদুল্লাহ ওরফে শহীদ একই উপজেলার মধ্যম সোনাপাড়া গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে।

সূত্র: বাংলানিউজ