নতুন ভ্যাট আইন: ব্যবসায়ীরা কতটা প্রস্তুত?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

কারওয়ান বাজারের একটি বড়সড় মুদি দোকান মেসার্স রয়েল জেনারেল স্টোর। এখান থেকে মূলত পাইকারি দরে ভোগ্যপণ্য কিনে নিয়ে যান ছোটখাটো মুদি দোকানিরা।

আগামী অর্থবছরে যে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের নতুন আইন কার্যকর হবে, সেই মোতাবেক কি প্রস্তুতি নিয়েছেন জানতে চাইলে, দোকানী মোহাম্মদ হাসান বিবিসিকে বলেন, পেপার-পত্রিকা মারফৎ জানেন তিনি, কিন্তু সরকারি কোন চিঠি এখন পর্যন্ত পাননি।

মি. হাসান জানাচ্ছেন, তার দোকানে দৈনিক বিক্রি সর্বনিম্ন ৫০ হাজার। অর্থাৎ নতুন আইন অনুযায়ী তিনি ভ্যাটের আওতায় আছেন।

মি. হাসান পুরনো আইনে একটি প্যাকেজ হিসেবে ভ্যাট দিয়ে আসছিলেন এতদিন। কিন্তু নতুন আইনে তাকে শতকরা ১৫ টাকা হারে ভ্যাট দিতে হবে।

এটা অবশ্য সমন্বয় হবে তিনি পণ্য কিনে আনার সময় যে ভ্যাট দিয়েছেন, এবং বিক্রি করার সময় যে ভ্যাট নিয়েছেন, এই দুইয়ের মধ্যে।

এজন্য তাকে হিসেব রাখতে হবে। হিসেবের জন্য প্রয়োজন একটি ইসিআর বা ইলেকট্রনিক ক্যাশ র‍্যাজিস্টার। কম্পিউটারে বেচাকেনা করলে লেনদেনের সফটওয়্যার। আর অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন করতে হবে তাকে।

কিন্তু এসবের কিছুই এখনো করেননি মি. হাসান।

অথচ ব্যবসায়ীদের এসব প্রস্তুতি নেবার সময় দেবার জন্য গতবছরের বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করার কথা থাকলেও করা হয়নি।

আর সার্বিক প্রস্তুতির অভাবের কারণেই ২০১২ সালে পাশ হলেও এখন পর্যন্ত অকার্যকর হয়েই পড়ে আছে আইনটি।

আইন কার্যকর করতে গিয়ে সবচাইতে বাধা আসছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই।

তারা প্যাকেজ ভ্যাট দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।

প্রয়োজনে প্যাকেজের পরিমাণ তারা বাড়াতে আগ্রহী, কিন্তু হিসেব করতে তাদের অনাগ্রহ।

আবার ভ্যাটের হার শতকরা ১৫ ভাগ থেকেও কমাতে চান।

কিন্তু এসব কোন অনাগ্রহেই অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত কর্ণপাত করছেন বলে মনে হচ্ছে না।

তিনি স্পষ্টতই বলে দিয়েছেন এবার নতুন আইন কার্যকর হবেই, হারও কমবে না।

অবশ্য সংবাদপত্রে খবর আসছে, ভ্যাটের আওতামুক্ত পণ্যের সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে বাজেটে।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে নতুন এই আইনের সাথে সমন্বয় করবার কোন প্রস্তুতি ব্যবসায়ীদের নেই।

ঢাকার মৌলভীবাজারের একাধিক বড় ভোগ্যপণ্য বিক্রেতার সাথে কথা বলেছি আমি, তারা নাম প্রকাশ না করবার শর্তে বলেছেন যে তারা কেউই কোন প্রস্তুতি নেননি।

এমনকি শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে তারা এখনো সরকারের সিদ্ধান্ত বদলানোর আশায় আছেন।

মি. মহিউদ্দিন বলছেন, “আইনের মধ্যে কিছু খারাপ দিক আছে, সেগুলোকে ফেলে দিতে হবে”।

“জন-দুর্ভোগ বা জনগণের উপর এক্সট্রিমলি কোন চাপের সৃষ্টি হবে বা জন-দুর্ভোগ অগ্রাহ্য হবে এমন কোন বিষয় আসবে না, এটাই আমার প্রত্যাশা”।

অবশ্য ভ্যাট প্রশাসন যে প্রচারণা চালাচ্ছে, তাতে তারা বলছে, জনগণ সরকারকে ভ্যাট দিচ্ছে, এখানে ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র বাহক হিসেবে কাজ করছে, ফলে এখানে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির বা লোকসানের মুখে পড়তে হবে।

তারা স্রেফ সরকারের পাওনা টাকা সরকারকে পৌঁছে দেবে এক্ষেত্রে।

সরকারের প্রস্তুতি:

এরই মধ্যে ভ্যাট অনলাইন নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে রাজস্ব বোর্ড।

এর জন্য একটি পুরাদস্তুর পৃথক অফিস নেয়া হয়েছে।

অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন ও অন্যান্য কাজ সম্পাদনের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করে চালু করা হয়েছে।

কল সেন্টার বসিয়ে একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে। আর লক্ষাধিক ব্যবসায়ীকে দেয়া হয়েছে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ।

আশা করা হচ্ছে ব্যবসায়ীরা স্ব-উদ্যোগেই তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করবেন এবং অনলাইনে নিবন্ধন করবেন।

কিন্তু যারা করবেন না বা তথ্য গোপন করবেন তাদের কি হবে?

ভ্যাট অনলাইনের উপ-প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন, তারা ব্যবসা বাড়াতে পারবেন না। তিনি তথ্য গোপন করলেও যেখান থেকে পণ্য কিনেছেন সেখান থেকে তথ্য আসবে, ফলে তিনি ধরা পড়ে যাবেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা