নতুন টাকায় ঈদের আনন্দ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: ঈদের বকশিশ মানেই যেন নতুন টাকা। টাটকা কচকচে নোট দিয়ে শিশুদের সীমাহীন আনন্দ এনে দিতে তাই বড়দেরও যেন চেষ্টার কমতি নেই।

ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে নতুন টাকা নিতে ব্যাংকে গ্রাহকদের ভিড় ততই বাড়ছে। প্রতিদিন নারী ও কিশোরসহ প্রায় এক হাজার জন ব্যক্তি সারি ধরে দাঁড়িয়ে নতুন টাকা বদলে নিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে।

ঈদকে সামনে রেখে গত ৮ জুন থেকে নতুন টাকা বিনিময় শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বসাধারণের সুবিধার্থে রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ৩০ তলা ভবনের নিচতলার ক্যাশ কাউন্টারের সামনে নতুন টাকা বিনিময়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ নিয়ে একজন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ৮৭০০ টাকা বদলে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। একজন গ্রাহক যেন একাধিকবার টাকা নিতে না পারে সে জন্য এই ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই পদ্ধতিতে একজন লোকের আঙুলের ছাপ রেখে দেওয়া হয় তিন সপ্তাহ পর্যন্ত। এই তিন সপ্তাহের মধ্যে ওই ব্যক্তি আবার নতুন টাকা নিতে এলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধরা পড়ে যাবেন। এরই মধ্যে এমন বেশ কয়েকজন ধরা পড়ায় তাদের নতুন নোট নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

তবে ব্যাংকে টাকা নিতে এসে ভিড়ের মাঝে পড়ে অনেকেই অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ নতুন টাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি পয়সা দিয়ে নতুন নোট নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছেন। কোনো কোনো টাকার ব্যবসায়ী এলাকা থেকে বিদ্যালয়গামী কিশোর ও গৃহিণীদের ভাড়া করে নিয়ে আসছেন নতুন টাকা তুলতে। তবে জানতে চাইলে কেউই সেটা স্বীকার করতে চান না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও বিষয়টি সেভাবে তদারকি করছেন না।

গত রবিবার নতুন টাকা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসে সারি ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কান্দাপাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম। ঢাকায় এসেছিলেন অন্য একটি দরকারি কাজে। কাজ শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন টাকা নেওয়ার জন্য টোকেন নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

ছেলে-মেয়েরা নতুন টাকা পেলে খুশি হয় বলে গত কয়েক বছর ধরে ঈদের সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন টাকা বদলে নেন তিনি। তবে অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দেখে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘টাকার ব্যবসায়ীদের ভাড়া করা লোকজনই এখানে বেশি। এই কারণেই আমাদের মতো প্রকৃত গ্রাহকদের অনেক ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এবারও একজন গ্রাহককে ৫০ টাকা, ২০ টাকা, ১০ টাকা, ৫ টাকা এবং ২ টাকার নোটের একটি করে বান্ডেল অর্থাৎ মোট ৮ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত নতুন টাকা বদলে নিতে পারছেন। এ ছাড়া কয়েন চাইলে যত খুশি দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহাব বলেন, ‘এবারের ঈদে ছাড়ার জন্য আমাদের কাছে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট মজুদ রয়েছে। তবে আমাদের লক্ষ্য রয়েছে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছাড়ার। ’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শাখা অফিসের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে বিশেষ কাউন্টার খুলে নতুন নোট বিনিময় করা হচ্ছে। রাজধানীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের পাশাপাশি ১৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২০টি শাখা থেকে নতুন নোট দেওয়া হচ্ছে। শাখাগুলো হলো; জনতা ব্যাংকের আবদুল গনি রোড ও রাজারবাগ, সোনালী ব্যাংকের রমনা, অগ্রণী ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড, রূপালী ব্যাংকের মহাখালী, ন্যাশনাল ব্যাংকের যাত্রাবাড়ী, সিটি ব্যাংকের মিরপুর, সাউথইস্ট ব্যাংকের কারওয়ান বাজার, এসআইবিএলের বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, উত্তরা ব্যাংকের চকবাজার, ঢাকা ব্যাংকের উত্তরা শাখা, আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশান, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মোহাম্মদপুর, পূবালী ব্যাংকের সদরঘাট, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মালিবাগ, ওয়ান ব্যাংকের বাসাবো, ইসলামী ব্যাংকের শ্যামলী, মার্কেন্টাইলের বনানী, ব্যাংক এশিয়ার ধানমণ্ডি এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের দক্ষিণখানের এসএমই অ্যান্ড কৃষি শাখা।

ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর গুলিস্তানে নতুন টাকার পসার সাজিয়ে বসেছে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উত্তর পাশের গেটের সামনের পুলিশ ফাঁড়ির সামনেও চলে নতুন টাকার বেচাকেনা। টাকার অঙ্ক ভেদে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি নিয়ে বিভিন্ন অঙ্কের নোটের বান্ডেল বিক্রি করেন এসব ব্যবসায়ীরা। সূত্র: কালের কণ্ঠ