নতুন আসরে নতুন ‘নিয়ম’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: বাইলজের ৩.১ ধারা নিয়ে হঠাৎই কাল ভীষণ সোচ্চার বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) গভর্নিং কাউন্সিল! ঘটা করে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দেওয়া হলো, ওই ধারা অনুযায়ী পূর্ববর্তী ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে এখনো চুক্তি নবায়ন হয়নি। সেটি না হওয়া পর্যন্ত তারা বিশেষ করে রংপুর রাইডার্সের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারটিকে বৈধতা দিতে রাজি নন।

নিয়মানুযায়ী চার বছর মেয়াদি বিপিএলের নতুন ‘চক্র’ শুরু হওয়ার কথা আগামী ৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া সপ্তম আসর দিয়েই। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টটি বছরের এই সময়েই শুরু হয়। গত ডিসেম্বরে সব শেষ জাতীয় নির্বাচনের কারণে অবশ্য ষষ্ঠ আসর পিছিয়ে শুরু হয়েছিল এই বছরের জানুয়ারিতে। ওই আসর দিয়েই শেষ হয় ছয় বছর মেয়াদি আগের চক্র। সেটি শেষ মানেই আবার নতুন করে চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিরই তা অজানাও নয়। তাহলে সেই জানা ব্যাপারটিই নতুন করে কাল আবার জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন কেন? তা-ই যদি হবে, তাহলে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ আসরের ফাইনালের পরই তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কেন করা হলো না?

এসব প্রশ্নে সুচিন্তিত কোনো জবাব নেই। যদিও সেই সংবাদ সম্মেলনের পেছনে ‘বিশেষ উদ্দেশ্য’ যে রয়েছে, সেটি বুঝতেও কারো সমস্যা হয়নি কোনো। কারণ এটি আয়োজিত হলো গত ৩১ জুলাই ঢাকা ডায়নামাইটস ছেড়ে সাকিবের রংপুর রাইডার্সে যোগ দেওয়ার তিন দিন পর! বিপিএলের পঞ্চম আসরের চ্যাম্পিয়ন দলটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক সাদেকও টেনে আনলেন ভিন্ন উদ্দেশ্যকেই, ‘‘হঠাৎ করে সাকিব রংপুর রাইডার্সে যোগ দেওয়াতেই এখন তারা সোচ্চার হয়েছে। বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে যখন আঘাত হেনেছে, তখনই এসব চুক্তি নবায়নের ব্যাপারগুলো তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নতুন নতুন নিয়ম করা এবং ‘এ প্লাস’ ক্যাটাগরি না রাখার পাঁয়তারা চলছে।

বিপিএলের এই ‘বিশেষ গোষ্ঠী’ বলতে তিনি ঢাকা ডায়নামাইটসকেই বুঝিয়েছেন। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সুবিধার জন্যই নানা নিয়ম-কানুন করার অভিযোগ প্রতি আসরেই শোনা যায়। তার ওপর এই দলটি ক্রিকেটাঙ্গনে ‘ক্ষমতাসীন’ বলেও পরিচিত। কারণ ঢাকা ডায়নামাইটসের মালিক বেক্সিমকো গ্রুপ খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসানের কর্মস্থল। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকও ওই প্রতিষ্ঠানেরই চাকুরে। কালকের সংবাদ সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন গভর্নিং কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ সোহেলও। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, এঁদের কেউই কোনো বক্তব্য রাখলেন না। বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস শুরুতেই বলে দিলেন, ‘আজ আপনাদের যা বলার বলবেন মাহবুব আনাম। সব প্রশ্নের উত্তরও দেবেন তিনিই।’ বিসিবি পরিচালক মাহবুব গভর্নিং কাউন্সিলে কোনো পদে নেই বলেই জালাল এটুকুই শুধু বলতে পারলেন, ‘উনি প্রতিবছর বিপিএলের নিলাম পরিচালনা করে থাকেন।

‘নিলাম পরিচালনাকারী’ বললেন, ‘বিসিবির সঙ্গে কারো চুক্তি হয়নি। তারা (রংপুর রাইডার্স) যা করেছে, এর সঙ্গে বিসিবি বা বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের কোনো সম্পর্ক নেই। এটিকে আমাদের গ্রাহ্য করারও দরকার নেই। প্রয়োজন নেই এটি নিয়ে আলোচনা করারও।’ সাকিবের সঙ্গে রংপুরের চুক্তিকে অবৈধও বলেছেন মাহবুব, ‘যারা কাজ করছেন, তারা যদি নিজেদের অবস্থান না জানেন, সেটি তো আমাদের দেখার বিষয় নয়। চুক্তি (সাকিবের সঙ্গে) যেটি করেছে, এর কোনো বৈধতা নেই। যেটি বৈধ চুক্তি নয়, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার কোনো যৌক্তিকতাই আমি দেখি না।’ সেই সঙ্গে এই ঘোষণাও তিনি দিয়েছেন যে, ‘নিয়মের মধ্যে যেতে হবে। কারো জন্য তো নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করা যাবে না। যদি নতুন চক্র শুরু হয় এবং বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল যদি নতুনভাবে শুরু করে, তাহলে কোনো খেলোয়াড় (নির্দিষ্ট) কোনো দলের সঙ্গে আগেই যুক্ত হতে পারবে না।’ এ ক্ষেত্রে তাঁর যুক্তি, ‘‘ইতিমধ্যে আরো দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য আমরা ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) চেয়েছি (এবার আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে সপ্তম আসর করার পরিকল্পনা)। নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্যও তো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ দিতে হবে।

সেটি দেওয়ার কথা উচ্চারিত হচ্ছে সাকিব রংপুরে যোগ দেওয়ার পরে, আগে নয়। ‘আইকন’ বা ‘এ প্লাস’ ক্যাটাগরির নিয়ম বদলানোর ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে। অথচ তামিম ইকবালের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ছেড়ে খুলনা টাইটানসে কিংবা মুশফিকুর রহিমের চিটাগং ভাইকিংস ছেড়ে কুমিল্লায় খেলার খবরে এত দিন কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি। সেটি হলো সাকিব ডায়নামাইটস ত্যাগ করার পরই। নতুন চক্রে নতুন নিয়মের কথা বলা হলেও ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক এউইন মরগানকে কিন্তু পুরনো নিয়মেই দলভুক্ত করেছে ডায়নামাইটস। দুজন বিদেশিকে সরাসরি চুক্তিবদ্ধ করার পুরনো নিয়ম অনুসরণ করেছে আরো কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজিও। কিন্তু ‘যত নিয়ম’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন হলো কিনা সাকিব রংপুরে যোগ দেওয়ার পর!