নওগাঁ-৬ আসনের এমপি ইসরাফিল আলমের দাফন সম্পন্ন

রাণীনগর প্রতিনিধি:
নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি ইসরাফিল আলমের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। সোমবার বাদ আছর পর থেকে তিন দফা নামাজে জানাযা শেষে ৮:১০ মিনিটে নিজ জন্মভূমি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ঝিনা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মা’র কবরের পাশ্বে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
রাজধানী ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকার পর অবশেষে মারা যান নওগাঁ-৬ (রাণীনগর-আত্রাই) আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি ইসরাফিল আলম। সোমবার সকাল ৬ টা ২০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানসহ অনেক গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে নির্বাচনী আসন রাণীনগর-আত্রাই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বেশকিছু দিন ধরে ফুসফুস, কিডনি এবং ডায়াবেটিক্স জনিত রোগে শারীরিকভাবে অসুস্থতা বোধ করছিলেন এমপি ইসরাফিল আলম। এর মধ্যে তার মা এসেদা রহমান মারা যাওয়ায় তিনি আরো ভেঙ্গে পড়েন। তিনি করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েন এবং তার শারীরিক অসুস্থ্যতা বাড়ায় ৬ জুলাই চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হলে ১৪ জুলাই তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয় এবং ১৫ জুলাই করোনার ফলাফল তার নেগেটিভ আসে। বাসায় আনার পর ১৭ জুলাই অসুস্থ্য হয়ে পরলে তাকে আবার রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২৪ জুলাই রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই দিনই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। তিন দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর সোমবার সকালে মারা যান তিনি।
তার মৃত্যুতে রাণীনগর উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠন, উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক রোকনুজ্জামান রুকু, রাণীনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকমী সহ সবস্তরের জনগন গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
তার নামাজে জানাযায় নওগাঁ জেলা সদর আসনের এমপি ব্যারেস্টার নিজাম উদ্দীন জলিল জোন, সাবেক এমপি আব্দুল মালেক, জেলা প্রসাশক হারুন অর-রশিদ, পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান, রাণীনগর-আত্রাই এলাকার দলীয় নেতাকমী, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রসাশন এবং সবস্ত্ররের লোকজন জানাযায় অংশ গ্রহন করেন।
বেলা তিনটা নাগাদ ঢাকা থেকে একটি হেলিকপ্টার যোগে মরদেহ নিয়ে রাণীনগর হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। এর পর সেখান থেকে লাশবাহি গাড়ী যোগে জন্মভূমি ঝিনা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এমপি ইসরাফিল আলম তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে চাকুরী করার সময় শ্রমিক লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। এর পর ঢাকা মহানগর শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক নিবাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে ইসরাফিল আলম আওয়ামীলীগের মনোয়নয়ন নিয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন বিএনপি জোটের মন্ত্রী আলমগীর কবীর এর কাছে পরাজিত হন। এই সময়কাল রাণীনগর-আত্রাই এলাকা ছিল রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে খ্যাত।
এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোটের প্রাথী আনোয়ার হোসেন বুলুকে পরাজিত করে বিজয়ী হন শ্রমিক নেতা ইসরাফিল আলম। চাকুরী ছেরে দিয়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। নির্বাচিত হবার পর থেকে শক্তহাতে সবহারা ও জেএমবি দমন করেন।
শেষ ২০১৮ সালে আবারও বিএনপি জোটের প্রাথী আলমগীর কবীরকে পরাজিত করে ৩য় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ইসরাফিল আলম। এছাড়া ইসরাফিল আলম নওগাঁ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ফেডারেশনের সভাপতি ও শ্রম মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
তিনি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামে ১৯৬৬ ইং সালে এক সম্ভ্রাান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম আজিজুর রহমান ছিলেন এলাকার কৃষক আন্দোলনের নেতা।