নওগাঁ সদরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যায়ভাবে বাদ দেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ:
নওগাঁ সদর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে এবং যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।  রোববার শহরের মুক্তির মোড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

 
মুক্তিযোদ্ধা আনিছুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল আনছারি, গোলাম মোস্তফা, আব্দুল খালেক, মোয়াজ্জেম হোসেন, তাছের আলী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আতিকুর রহমান।

 
সমাবেশে বক্তারা বলেন, নতুন করে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার নামে নওগাঁ গেজেটভুক্ত ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। অথচ তাঁরা সবাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া গেজেটভুক্ত নয় কিন্তু অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করেছিলেন এ ধরণের আরও ৬৫৫ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুপারিশ করা হয়নি। এদের মধ্যেও অনেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন বলে বক্তারা দাবি করেন। অথচ কাগজ সন্তোষজনক নয় এবং স্বাক্ষী যথাযথ নয়- এমন ব্যক্তিদেরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুপারিশ করা হয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।

 
সমাবেশে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধা তাছের আলী বলেন, ‘আমি ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। আমার ব্যাচ নাম্বার ছিল ৪১১৫। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ৩৭ বছর ধরে একটি ব্যাংকে চাকরি করেছি। এখন তালিকা থেকে আমার নাম পড়ায় পরিবারের কাছে এবং প্রতিবেশিদের কাছে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না। অথচ আমার গ্রাম থেকেই দুইজন অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুপারিশ করা হয়েছে। যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।’

 
মু্ক্তিযোদ্ধা সিরাজুল আনছারি বলেন, ‘আমার সঙ্গে যুুদ্ধ করেছেন এমন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু তাদের নাম সুপারিশ করা হয়নি। অথচ ভুয়া সার্টিফিকেট ও মিথ্যা সাক্ষী হাজিরকারী  অনেককে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুপারিশ করেছে এই কমিটি।

 


বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের মধুপুর ক্যাম্পে আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। ভারতের তালিকায় (কল্যাণ ট্রাস্ট) আমার নাম রয়েছে। যথাযথ কাগজপত্র ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। অথচ এইবার নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের নামে আমার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। লজ্জায়, ঘৃনায় এখন আমার কাউকে মুখ দেখানোর অবস্থা নেই।’

 
অভিযোগের বিষয়ে যাচাই-বাছাই কমিটির কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রতিনিধি সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নওগাঁ জেলা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই যাচাই-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এখানে অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি করা হয়নি। এরপরেও কেউ বিক্ষুপ্ত হয়ে থাকলে তাঁদের আপিল করার সুযোগ রয়েছে। যথাযথ কাগজপত্র ও সাক্ষী-প্রমাণ হাজির করতে পারলে তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ এখনও রয়েছে।

 
সদর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে ১ হাজার ২৯ জন অলাইনের মাধ্যমে আবেদন করেন। যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষে সদর উপজেলায় ৩৭১ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে  সুপারিশ করে যাচাই-বাছাই কমিটি। গত ৩০ মে এই তালিকা টানানো হয়। তালিকা টানানোর ১৫ দিনের মধ্যে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন করতে বলা হয়েছে।

স/শ