নওগাঁয় ৫০ হাজার লোক পানি বন্দি

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ:
উজান থেকে নেমে আসা আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৮টি স্থান ভেঙে গেছে। এরমধ্যে মান্দায় ৬টি, আত্রাইয়ে ১টি ও পত্নঈতলায় ১টি। বন্যার পানিতে জেলার রাণীনগর, আত্রাই, মান্দা, পত্নীতলা, বদলগাছী, ও ধামইরহাট উপজেলায় তলিয়ে গেছে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। এতে প্রায় ৫০ হাজার লোক পানি বন্দি হয়ে গেছে। আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় মান্দায় নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এছাড়া ছোট যমুন নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নওগাঁ শহর রক্ষা বাঁধ উপচে এবং বাঁধের আউটলেট (নদী থেকে পানি বের করে দেওয়ার নালা) নওগাঁ শহরের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে এর ফলে শহরের ডিগ্রির মোড়, বিহারীকলোনী, উকিলপাড়া, জেলাপ্রশাসকের বাসভবন, পুরাতন কোর্ট এলাকা, সুপারীপট্টি, কালিতলা মহল্লা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। উকিলপাড়া সড়ক, কাচাড়ী সড়ক, কেডি’র মোড় থেকে মুক্তিরমোড় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেল থেকে সোমবার দুপুরে মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তীর সংরক্ষণ বাঁধের আটটি স্থান ভেঙ্গে যায়। উপজেলার বুুড়িদহ সুজনসখির ঘাট, শহরবাড়ী, চকবালু, কয়লাবাড়ি, দারিয়াপুর, চকরামপুর, পার নুরুল্যাবাদ, নুরুল্যাবাদ উত্তরপাড়া ও কয়াপাড়া কলেজমোড় এলাকায় আত্রাই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে উপজেলার প্রসাদপুর, নুরুল্যাবাদ, মান্দা সদর, বিষ্ণুপুর, কশব, পরানপুর, কালিকাপুর ও তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফসলের মাঠ ডুবে গেছে ও ভেসে গেছে লাখ-লাখ টাকার মাছ। বাঁধের রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় সোমবার সকাল থেকে জেলার আত্রাই উপজেলার সঙ্গে মান্দার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

নওগাঁর ছোট যমুনা নদীতে পানি বিপদ সীমার ৮৮ সেন্টিমিটার, ধামইরহাট উপজেলার শিমুলতলী আত্রাই নদী ১৭০ সেন্টিমিটার, মান্দায় আত্রাই নদী জোতবাজার ১১১ সেন্টিমিটার এবং আত্রাই উপজেলার আত্রাই নদীতে ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বর্তমানে অসহায় পরিবারগুলো বিশ্ববাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। সোমবার পর্যন্ত কোন সরকারী সাহায্য বা ত্রাণ তাদের কাছে না পৌছায় মানবেতন জীবন যাপন করছেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উঠায় সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফসলের ক্ষেত ডুবে যাওয়া কৃষকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছে কৃষকরা।

মান্দা উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, বন্যা নিন্ত্রয়ন বেঁড়ি বাঁধ রোববার ভেঙে যাওয়া এলাকায় পানি প্রবেশ করে। পানি বাড়তে থাকায় বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমার বাড়িটি পানিতে ডুবে গেছে। এখন সবাইকে নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জরুরী সমন্বয়সভা ডেকেছে। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহাঃ ইমাজ উদ্দিন প্রামানিক এবং জেলা প্রশাসক ড. মোঃ আমিনুর রহমান এই সমন্বয়সভায় অংশগ্রহন করেন।

মান্দা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ইতোমধ্যে প্লাবিত এলাকাবাসীদের জন্য ২৫ হাজার টাকা ও ৫ টন চাল বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে এবং এটি অব্যহত থাকবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, রবিবার পর্যন্ত জেলায় আউশ ও আমনসহ বিভিন্ন ফসলি জমির প্রায় ৮ হাজার ৫৭২ হেক্টর নিমজ্জিত ছিল। পানি বৃদ্ধিতে অনেক স্থানে রাস্তার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া বাঁধ ভেঙে গিয়ে সোমবার পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম আমিনুর রহমান বলেন, বন্যার কারণে দুই উপজেলার ২২ টি বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পানি নেমেগেলে আবারও শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া বন্যার কারণে কেউ যদি স্কুলে আশ্রয় নিতে চায় নিতে পারে। স্কুল কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অনুমতি দেয়া আছে।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, নদীতে পানির চাপ থাকায় বেশ কয়েকটি স্থানে ভেঙে গেছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে রাস্তার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যখন রাস্তার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত তখন আমাদের কিছুই করার থাকেনা।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে বন্যা কবলিত খোঁজখবর রাখা হয়। এছাড়া দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে সহেযোগীতা করার আশ্বাস দেন।

স/অ