নওগাঁয় জ্ঞাতিভোজ অনুষ্ঠান পণ্ডের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ: নওগাঁর মান্দায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আয়োজিত জ্ঞাতিভোজ অনুষ্ঠান পণ্ড করার অভিযোগ উঠেছে মান্দার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাবিবুল হাসানের বিরুদ্ধে। সোমবার দুপুরে উপজেলার সতীহাট বাজারের গনেশপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনের সরকারি ফাঁকা জায়গায় তারা এর আয়োজন করেন। কিন্তু অফিস চলাকালীন এর আয়োজন করায় মান্দার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাবিবুল হাসান এ অনুষ্ঠানের সামিয়ানা খুলে নিতে বলেন। এ ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়সহ স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের কালীপদ দাস প্রায় ১৫ দিন আগে মারা যান। কালীপদ দাস মারা যাওয়ার তার পরিবারের লোকজন জ্ঞাতিভোজের জন্য হিন্দু-মুসলিমসহ প্রায় ৫শ’ জন লোকের জন্য খাবার আয়োজন করে। জ্ঞাতিভোজের জন্য স্থানীয় গণেশপুর ভূমি অফিসের তহসিলদার রফিকুল ইসলামকে অবগত করে অফিসের সামনের সরকারি ফাঁকা জায়গা ব্যবহারের জন্য অনুমতিও নেন। বৃষ্টির হাত থেকে জ্ঞাতিভোজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্যে ছামিয়ানা টাঙ্গিয়ে চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা করেন।
ঘটনার পর কালীপদ দাসের ছোট ছেলে শ্রী লক্ষ্মন অভিযোগ করে বলেন, বৃষ্টিতে যেন জ্ঞাতিভোজ বিঘ্ন না হয় সে জন্যই কয়েক ঘন্টার জন্য ছামিয়ানা টাঙ্গানো হয়েছিল। কিন্তু দুপুরে খাবার পরিবেশনের আগ মূহুর্তে মান্দা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাবিবুল হাসান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কোন কথা না শুনে আমাদের দুই ভাইকে দিয়েই টাঙ্গানো ছামিয়ানা, চেয়ার, টেবিলসহ সবকিছু দ্রুত সরিয়ে নিতে বলেন। এতে আমরা সবকিছু সরিয়ে নিতে বাধ্য হই। এখন দাওয়াতের লোকজন চলে এসেছে তাদের বসতে এবং খাবার দিতে না পারায় চলে গেছেন অনেকে।
কালিপদ দাসের বড় ছেলে শ্রী রঘুনাথ অভিযোগ করে বলেন, আমরা গরীব মানুষ। অনেক কষ্ট করে লোকজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে ধর্মীয় অনুয়াযী বাবার আত্মার শান্তির জন্য জ্ঞাতিভোজের আয়োজন করেছিলাম। খাবার দিতে না পারায় এখন লোকজন এসে চলে যাচ্ছে। এটা যে কী কষ্টের তা বুঝাতে পারবো না।
বাজারের জয়া মেডিকেল ষ্টোরের স্বত্বাধিকারী এবং আমন্ত্রিত অতিথি উজ্জ্বল কুমার বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয়ের উপস্থিতির সময় আমি সেখানে ছিলাম। আমার সামনেই তিনি কোন কথা না শুনে কালিপদের দুই ছেলেকে দিয়ে বাঁশ খাম, ছামিয়ানা, চেয়ার, টেবিল সরিয়ে নিতে বাধ্য করেন।  আমরা উপস্থিত সকলে এসিল্যান্ড স্যারকে অনুরোধ করছি, কিন্তু তিনি তা শোনেননি। আমরাও না খেয়ে ফিরে এসেছি।
তিনি আরো বলেন, শহর এলাকার অধিকাংশ অনুষ্ঠানই সরকারি সম্পত্তিতে করা হয়ে থাকে। কিন্তু এ ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়সহ স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এবিষয়ে গণেশপুর ভূমি অফিসের তহসিলদার রফিকুল ইসলাম জানান, অনুষ্ঠান করার জন্য আমি অফিসের সামনে ফাঁকা জায়গায় অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসে কেন ছামিয়ানা, চেয়ার, টেবিল সরিয়ে নিতে বলেছেন তা জানা নেই।
মান্দা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাবিবুল হাসান জানান, অফিস চলাকালীন কেউ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারেন না। এ জন্যেই ছামিয়ানা, চেয়ার, টেবিল সরিয়ে নিতে বলা হয়। পরে ছামিয়ানা ভেঙ্গে খাবারের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান জানান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান (জ্ঞাতিভোজ) চলাকালে এগুলো সরিয়ে নিতে বলার বিষয়টি অমানবিক কাজ। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স/শা