নওগাঁর নিয়ামতপুরে দুর্দিনে বাঁশ-বেত শিল্পের কারিগররা

শাকিল হোসেন, নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

বাঁশ আর বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে আঁকড়ে রেখেছে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার গুটি কয়েক পরিবার। কিন্তু দিন দিন বাঁশ-বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত উপজেলার কারিগররা।

বর্তমান প্রযুক্তির যুগে উপজেলায় বাঁশ ও বেত শিল্পের তৈরি মনকাড়া বিভিন্ন জিনিসের জায়গা করে নিয়েছে স্বল্প দামের প্লাস্টিক ও লোহার তৈরি পণ্য। তাই বাঁশ-বেতের পণ্য এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে। গ্রামগঞ্জেও ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরি বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় আকর্ষণীয় আসবাবপত্রের কদর কমে যাচ্ছে। অভাবের তাড়নায় এই শিল্পের কারিগররা দীর্ঘদিনের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অনেকে অন্য পেশার দিকে ঝুকে পড়ছে।

তবে শত অভাব অনটনের মাঝেও উপজেলায় হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আজও পৈতৃক এই পেশাটি ধরে রেখেছেন। নিয়ামতপুর উপজেলার বালাতৈড় গ্রামের মাহালীপাড়ায় প্রায় ১৫- ২০ টি পরিবার এই শিল্পটি ধরে রেখেছেন। একদিকে বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে তাদের তৈরি পণ্যের কদর কমে যাওয়ায় জীবন সংসারে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। অপ্রতুল ব্যবহার আর বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্পটি আজ হুমকির মুখে। বাঁশ ও বেত থেকে তৈরি সামগ্রী বাচ্চাদের দোলনা, তালায়, র‌্যাগ, পাখা, ঝাড়ু, টোপা, ডালী, মাছ ধরার পলি, বেড়া, খলিশানসহ বিভিন্ন প্রকার আসবাবপত্র গ্রামাঞ্চলের সর্বত্র বিস্তার ছিল। এক সময় যে বাঁশ ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় পাওয়া যেত সেই বাঁশ বর্তমান বাজারে কিনতে হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। সেই তুলনায় বাড়েনি এসব পণ্যের দাম।

স্থানীয় কারিগর শ্রীমতি রানী, ফারজানা, মেরিনা রানী, তাপস রায়সহ বেশ কয়েকজন বলেন, নিয়ামতপুরে আমরা হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আজও এ কাজে নিয়োজিত আছি। একটি বাঁশ থেকে ৩-৪ টি ডালি তৈরি হয়। বাজারে একটি ডালির মূল্য পাওয়া যায় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি পণ্য থেকে সামান্য কিছু টাকা লাভ হয়। তবে আগের মতো আর লাভ হয় না। সীমিত লাভ দিয়েই পরিবার চালানো অতি কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা আরও বলেন, খেয়ে-না খেয়ে অতিকষ্টে ধার দেনা ও বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে কোনরকম বাপ-দাদার এই পেশাকে আঁকড়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। সরকারি ভাবে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দিলে এ এলাকার পরিবারগুলো আরোও ভালো মানের পণ্য তৈরি করতে পারবে। এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবে।

নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতিটি পেশার মানুষকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বাঁশমালীদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

এস/আই