নওগাঁর কবিরাজের দায়েরকৃত মামলায় সাংবাদিক গ্রেফতার

নিউজ প্রতিবেদক, নওগাঁঃ
নওগাঁ থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক প্রথম সংবাদ’ পত্রিকার সম্পাদক ও জেলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি আজাদ হোসেন মুরাদকে কবিরাজের দায়েরকৃত চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত রোববার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা তাঁকে গ্রেফতার করেন।

 
মামলাটি করেছেন জেলার মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দনরায়নপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে জেলার ‘‘বহুল আলোচিত ভন্ড করিরাজ জাহাঙ্গীর আলম স্বপন”। তিনি পেশায় একজন কবিরাজ। যদিও তিনি নিজেকে পল্লী চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন।

 
মামলার এজহারে কবিরাজ জাহাঙ্গীর আলম উল্লেখ করেছেন, গত ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাংবাদিক আজাদ হোসেন স্বপন কবিরাজের বাড়িতে যান। এ সময় আজাদ হোসেন তাঁর সঙ্গে যাওয়া তিন ব্যক্তিকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সদস্য বলে পরিচয় করে দেন। এনএসআই পরিচয়দানকারী সদস্যরা স্বপনকে গ্রেফতারের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এক পর্যায়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দিতে রাজি হন। ৫০ হাজার টাকা নগদ এবং ৫০ হাজার টাকার একটি চেক তুলে দেন তাঁদের হাতে। এ সময় সাংবাদিক আজাদ হোসেন মধ্যস্তাকারী হিসেবে কাজ করেন।

 
অভিযোগের বিষয়ে গতকাল সোমবার কোর্ট হাজতে সাংবাদিক আজাদ হোসেন তাঁর বিদ্ধে আনা চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করে বলেন, গত ২৬ অক্টোবর সংবাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য স্বপন কবিরাজের বাড়িতে গিয়েছিলাম। ওই দিন আমি সেখানে থাকা অবস্থায় আমার সঙ্গে এনএসআই পরিচয়দানকারী কেউ সেখানে যাননি। স্বপন কবিরাজের বিভিন্ন অপচিকিৎসার কর্মকান্ড-সরেজমিনে পরিদর্শন ও তাঁর সাক্ষাতকার নিতে সেখানে গিয়েছিলাম।

 
তিনি বলেন, গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রেসক্লাব থেকে বের হওয়া মাত্র সাদা পোশাকধারী দুই ব্যক্তি তাঁকে উঠিয়ে মহাদেবপুর থানায় নিয়ে যান। তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর স্বপন কবিরাজের করা মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

 
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহাদেবপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক আজাদ হোসেনকে আদালতের মাধ্যমে গতকাল জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আগামী ১৩ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে রিমান্ড শুনানি রয়েছে।

 
গত কয়েক বছর থেকে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় ওই কবিরাজ বিভিন্ন ঝাঁড়-ফোক, মারপিট ও অপচিকিৎসা করে আসছেন।

 
এ নিয়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বারবার আইনের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে থাকেন।

 
এমতাবস্থায় গত বছর ১৮ নভেম্বর ঝাঁড়-ফোক ও অপচিকিৎসা করার সময় নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. মোজাহার হোসেন পুলিশের সহযোগিতায় হাতেনাতে আটক করেন। পরে ওই দিন রাতেই স্বপনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাঁকে ছয় মাসের কারাদ- দেওয়া হয়। জেল খেটে বের হয়ে আসার পর তিনি আবারও তাঁর পুরনো পেশায় ফিরে যান। তাঁর বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন একেএম মোজাহার হোসেন বুলবুল সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অপচিকিৎসার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। স্বপন কবিরাজের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে শীঘ্রই প্রতিবেন পাঠানো হবে।

 
এদিকে জেলার একুশে পরিষদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
স/শ