নওগাঁর আত্রাইয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভয়াশ্রমের মৎস্য নিধনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক,নওগাঁ:
নওগাঁর আত্রাইয়ে বেআইনিভাবে অভয়াশ্রমের মৎস্য নিধনের অভিযোগ পাওয়া গেছে ৫নং বিশা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দর্শন গ্রামের মৎস্যজীবী বেলাল হোসেন গত ৪ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও সরেজমিনে জানা গেছে, আত্রাই নদীর সুদারানা নামক স্থানে ২০০৮ সালে সরকার ০.৩০ হেক্টর জায়গা জুড়ে “সুদরানা দহ” অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। ফলে সেখানে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। মুলত অভায়াশ্রমটি মৎস্যজীবীদের জন্য ঘোষনা করা হলেও ক্ষমতার জোরে স্থানীয় বিশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মোল্লা তাঁর লোকজন দিয়ে বেআইনীভাবে উক্ত অভয়াশ্রমের মাছ নিধন করছেন। তিনি ২০০৮ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরই স্থানীয় প্রকৃত মৎস্যজীবীদের লাঠির জোরে অভয়াশ্রম থেকে বিতাড়িত করে নিজের দখলে নেন অভয়াশ্রমটি। এতে করে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা দিন কাটাচ্ছেন অনাহারে।
আরো জানা গেছে, তিনি অভয়াশ্রমটি দখলে নেওয়ার পর ১৩-১৪ সালের দিকে প্রকৃত মৎসজীবীরা চেয়ারম্যানের লোকজনকে মাছ ধরতে বাঁধা দিলে তাদের দু গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে সুদরানা গ্রামের মৎস্যজীবী ওপেন প্রামানিকের ছেলে জমসেদ গুরুত্বর আহত হয়, এবং কয়েকদিন বাদেই তিনি মারা যান। এবং দর্শন গ্রামের জুমল প্রামানিকে ছেলে গোলাম তার লাঠিয়াল বাহিনীর মারপিটে চিরদিনের মত পঙ্গু হয়ে পড়ে আছেন।
দর্শন গ্রামের মৎস্যজীবী বেলাল হোসেন বলেন, আব্দুল মান্নান মোল্লা চেয়ারম্যান হওয়ার পর সরকার ঘোষিত এই অভয়াশ্রমটি তিনি দখলে নেন প্রকৃত মৎস্যজীবীদের এখানে নামতে দেয়না। তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে প্রায় ১০ বছর হতে এ অভয়াশ্রমটি দখল করে খাচ্ছে।  এতে ৪ থেকে ৫’শ জন মৎস্যজীবীর হক নষ্ট হচ্ছে। তার লাঠিয়াল বাহিনীর ভয়ে কেউ কোন কথা বলার সাহস পায়না।
দর্শন গ্রামের শেখ মো: সজিব হোসেন বলেন, আমরা জানি অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষেধ। কিন্তু চেয়ারম্যান তার লোকজন দিয়ে অভয়াশ্রমে কাঠা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত মাছ ধরতেছে আমাদের মত প্রকৃত মৎস্যজীবীদের ভিড়তে দিচ্ছে না।
সুদারানা গ্রামের আরতি রানী বলেন, আমরা প্রকৃত পক্ষে হাওলদার বংশের আমি একজন হাওলদারের স্ত্রী আমরা আগে এখানে মাছ ধরে জিবীকা নির্বাহ করেছি। সরকার এখানে অভয়াশ্রম ঘোষণার পর আমরা আর মাছ ধরতে পারছিনা কিন্তু বর্তমানে ক্ষমতার জোরে চেয়ারম্যান তার লোকজন দিয়ে প্রতিদিন মাছ ধরছে। আর আমরা মৎস্যজীবীরা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি।
এ ব্যাপারে বিশা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মোল্লার সাথে সাংবাদিক পরিচয়ে অভয়াশ্রমের ব্যাপারে জানতে চাইলে পরে কথা বলব বলে ফোন কেটে দেন। পরে আর তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আত্রাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্মা সাহাদত হোসেন ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে জানান, সরকার ২০০৮ সালে এখানে অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছিল কিন্তু বর্তমানে এটি বিলিন হয়ে গেছে। এরপর চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান সেখানে প্রায় ১ কিঃমিঃ জায়গা জুড়ে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সরকারী ২ লাখ টাকা খরচ করে ছোট্র একটা অভয়াশ্রম বা কাঠা তৈরি করে সেখানেই সে মৎস্য শিকার করতেছে। সরকারী টাকা খরচ করে অভয়াশ্রম করে তাতে আবার মাছ ধরবে এটা তো হতে পারে না। এর প্রেক্ষিতে একটা অভিযোগ আমরা পেয়েছি এবং দ্রুত এটি সমাধান করা হবে।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানাউল ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, “সুদরানা দহ” অভয়াশ্রমের ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমি এটার ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি তিনি রিপোর্ট দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সচেতন মহলের দাবী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে আত্রাই নদীর মৎস্য অভয়াশ্রমগুলোর মা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ হরিলুট হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় অবাধে চলছে এসব মাছ চুরি। এলাকাবাসীর দাবী দ্রুত অভয়াশ্রম গুলি সংস্কার করে প্রকৃত মৎসজীবী পরিবারের মাঝে ফিরিয়ে দিয়ে সরকারের রাজস্ব আয় ভান্ডার গড়ে তোলার।
স/শ