নওগাঁয় চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা


সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

নওগাঁয় কোরবানি উপলক্ষে পশুর চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে চামড়া প্রস্তুতের মূল উপকরণ লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। এছাড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে বিগত বছরের বকেয়া পাওনা টাকা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন ব্যবসায়ীরা। চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে সরকারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড়ের পাশেই ‘চামড়া পট্টি’। আর কয়েকদিন পরেই নতুন চামড়া আসবে। তাই পুরোনো চামড়া বিক্রি করে গুদাম খালি করে সংস্কারে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, জেলায় প্রতি মৌসুমে চামড়া লবণজাত করতে প্রয়োজন হয় অন্তত ৩৫০ মেট্রিক টন লবণ। কিন্তু সম্প্রতি প্রতিবস্তায় মোটা লবণের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এতে বাড়বে চামড়া সংরক্ষণের খরচ। তাই সংরক্ষণের অভাবে চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঢাকার ট্যানারি মালিকের কাছে তারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ট্যানারি মালিকরা সে দামে কেনেন না। এছাড়া বিগত বছরের প্রায় ১০ কোটি টাকা ট্যানারি মালিকদের কাছে তাদের বকেয়া পাওনা রয়েছে। এসব টাকা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে চামড়া শিল্প।

নওগাঁ চামড়া পট্টির শ্রমিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোরবানির সময় মৌসুমি প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করলেও সারাবছর কাজ করেন প্রায় ৫০০ জন। চামড়া সংরক্ষণের জন্য এরইমধ্যে আমরা গুদাম ঘরগুলো সংস্কারের কাজ করছি। ঈদের দিন থেকে আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যাবে।

চামড়া ব্যবসায়ী শাহিনুর ইসলাম বলেন, প্রতিবছর সরকার কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী আমরা চামড়া কিনি। চামড়া কিনে লবনজাত করার পর ট্যানারি মালিকরা চামড়া না কিনে পিছুটান দেয়। যদি ট্যানারি মালিকরা জেলা পর্যায়ে এসে চামড়া কিনতো তখন আমাদের জন্যও সুবিধা হতো এবং দামও পাওয়া যেত। আমরা চামড়া প্রস্তুত করে ঢাকায় গিয়ে ট্যানারি মালিকদের দিয়ে আসতে হয়। চামড়া পচনশীল পণ্য। তখন একপ্রকার জিম্মি হয়ে তাদের দেওয়া দামে বিক্রি করতে হয়। সরকার যে দাম বেঁধে দেয় সে দামে আর বিক্রি করা সম্ভব হয় না। বকেয়া পাওনা টাকা পরিশোধ না করে বছরের পর বছর আমাদের ঘোরানো হচ্ছে।

নওগাঁ চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রায় ৩০ বছর থেকে চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গত প্রায় ১০ বছর থেকে ব্যবসায় মন্দা চলছে। গত বছর প্রায় ৭০ লাখ টাকার চামড়া কিনেছিলাম এবং বিক্রিও হয়েছে। গত বছরসহ বিগত বছরের প্রায় ৪০ লাখ টাকা বকেয়া পাওনা আছে। বর্তমানে লবণের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত বছর লবণ ১৫ টাকা ৯০ পয়সা কেজিতে কিনলেও এবছর ২১ টাকা কেজি। জেলায় প্রায় ৩৫০ মেট্রিক টন লবণের প্রয়োজন হয়। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা। গরুর একটি চামড়ায় ১২০ টাকার লবণ, ৩০ টাকা শ্রমিক ও ১০ টাকা পরিবহনে খরচ হয়। এখনো বকেয়া টাকা ট্যানারি মালিকরা পরিশোধ করেনি। এবছর চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।

নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ সভাপতি মো. মোমতাজ হোসেন বলেন, গত বছর জেলায় প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার পিস চামড়া প্রস্তুত করা হয়েছিল। যার বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। এবছরও একই পরিমাণ চামড়া কিনে প্রস্তুত করা হবে।

তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে বকেয়া হতে শুরু করে। জেলার প্রায় দুই শতাধিক চামড়া ব্যবসায়ী ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। ওই টাকা পাওয়া গেলে আবারও ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াবেন। সরকার ট্যানারি মালিকদের সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এসব সুবিধা জেলা পর্যায়ে চামড়া ব্যবসায়ীরা পেলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। জেলা পর্যায়ে সরকারি সুবিধা না পেলে আগামীতে হয়ত এ শিল্পটি টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।