ধূমপান কি পার্কিনসন্স থেকে বাঁচায়?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পার্কিনসন্স রোগ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অস্বাভাবিক ফলাফল পাচ্ছেন গবেষকরা। সিগারেটের নিকোটিন এই রোগ থেকে বাঁচাতে পারে–এমন তথ্যও উঠে এসেছে কোনো কোনো গবেষণায়।

‘‘এ কথা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, পার্কিনসন্স রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে নিকোটিন। তবে নিকোটিন বলতে শুধু ধুমপান নয়, এর মধ্যে পরোক্ষ ধুমপানও অন্তর্ভূক্ত,” ডয়চে ভেলেকে এমনটাই বলেছেন কিল-এর ক্লিনিক ফর নিউরোলজি-র প্রধান ডানিয়েলা ব্যার্গ।

নিকোটিন যে শুধু সিগারেটে পাওয়া যায় এমন নয়। আলু, টমেটো এবং মরিচের মতো সবজিতেও তা পাওয়া যায়। তবে সেই নিকোটিনের মাত্রা সিগারেটের মতোএত বেশি নয়।

পার্কিনসন্স রোগপ্রতিরোধী হিসাবে নিকোটিনের মতো বেশি সহায়ক আর কিছুই পাওয়া যায়নি বলে জানাচ্ছেন ব্যার্গ। আবার কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ধুমপান এমন কিছু এনজাইমকে উদ্দীপ্ত করে, যেগুলো নার্ভ টক্সিনকে নিস্ক্রিয় করে দেয়।

নিউরোলজিস্ট ব্যার্গ বলেন, ‘‘পার্কিনসন্স রোগ প্রতিরোধে নিকোটিনের কার্যকারিতা এখনো পুরোপুরি জানা সম্ভব না হলেও তাঁদের পার্কিনসন্স রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম। কিন্তু আপনি কাউকে ধুমপান করার উপদেশ দিতে পারেন না, কারণ, এর বাইরেও ধুমপানের অনেক নেতিবাচক ফল রয়েছে।”

কীভাবে পার্কিনসন্স রোগ প্রতিরোধ ও এর চিকিৎসা করা যেতে পারে এবং কোথা থেকে ও কীভাবে এই রোগ হয় বিশ্বব্যাপী এসব বিষয় এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে।

২০১৬ সালে মেডিকেল সাময়িকী ‘ল্যানসেট’-এর এক গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী পার্কিনসন্স রোগীর সংখ্যা ক্যানাডা এবং উত্তর অ্যামেরিকাতে বেশি, যেখানে চিকিৎসাসেবা উন্নত হিসাবে ধরা হয়। তবে আশার দিক হচ্ছে, রোগের মাত্রা অত ভয়াবহ নয়।

‘‘এখানকার কিছু মানুষের মধ্যে জিনগত ব্যাপার রয়েছে। এ কারণে তাঁরা পার্কিনসন্সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকেন, ” বলেন গবেষক ব্যার্গ।

পরিবেশগত দিকও পার্কিনসন্স রোগের ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসাবে কাজ করে থাকে। কীটনাশকসহ পরিবেশগত বিষক্রিয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়ার জন্য ভয়াবহ হতে পারে। নানা কীটনাশক পার্কিনসন্স রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

দক্ষিণ অ্যামেরিকায়ও পরিবেশের বিষক্রিয়ার সঙ্গে পার্কিনসন্স রোগ ছড়ানোর সম্পর্ক পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, যাঁরা ম্যাঙ্গানিজের কাজ করেন, তাঁদের পার্কিনসন্স আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কারণ, ম্যাঙ্গানিজ মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস সেলের জন্য ক্ষতিকর।

দেখা গেছে, জাপান আর আফ্রিকা অঞ্চলের কিছু দেশে পার্কিনসন্স রোগীর সংখ্যা কম। জাপানে এই রোগ কম হওয়ার পেছনে সবুজ চা পান এবং পলিপেনল গ্রহণকে কারণ হিসাবে দেখাচ্ছেন গবেষকরা।

পারকিনসন্স কি?
বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির সমস্যা ভিন্ন হতে পারে এই রোগে। পারকিনসন্স রোগের ৮টি প্রাথমিক লক্ষণ তুলে ধরা হল।

হাতের লেখার পরিবর্তন অনুভূত হয় এবং হাতের লেখায় জড়তা দেখা দেয় অথবা সিগনেসার বা স্বাক্ষর করতে হাত কাঁপে অথবা বড় বড় অক্ষরে লেখা শুরু করলেন শেষে এসে লেখাগুলো ছোট হতে শুরু করে। এ ব্যাপারে শিকাগোর রাশ ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের নিউরোলজিস্ট ড. দেবোরাহ হল উল্লেখ করেছেন, শিক্ষকের ব্লাকবোর্ডে লেখা যদি ছাত্রদের বুঝতে কষ্ট হয় এবং বাক্য যদি জড়িয়ে লেখা হয়, এমন অবস্থা পারকিনসন্স ডিজিজের প্রাথমিক লক্ষণ।

নাশিকারন্ধে যদি ঘ্রাণ শক্তি হ্রাস পায় অর্থাত্ আপনি যদি খাবার বা ফুলের ঘ্রাণ কম অনুভব করেন তাহলে বুঝতে হবে এটা একটি পারকিনসন্স লক্ষণ।

যদি বার বার ঘুমের সমস্যা হয় এবং মাঝে মধ্যে যদি সারারাত দুচোখ বুজাতে না পারেন তা হলে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।বার বার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেসন হয় এবং একই সঙ্গে যদি ঘুমের সমস্যা ও চলাফেরা ও হাঁটতে সমস্যা হয় তাহলে সতর্ক থাকতে হবে।

ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ পারকিনসন্স রোগের একটি অন্যতম লক্ষণ। এ ব্যাপারে ক্যালিফোর্নিয়ার সিডারস- সাইনাই মেডিক্যাল সেন্টারের মুভমেন্ট ডিজঅর্ডারের পরিচালক ড. মাইকেল টাগলিয়াটি উল্লেখ করেছেন, যাদের পারকিনসন্স রোগ থাকে তাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক রাসায়নিক পদার্থের অভাব থাকে এবং রক্তে নিউরোট্রান্সমিটার যেমন: সেরোটিনিন কম থাকার জন্য অবসাদ দেখা দেয়। ড. টাগলিয়াটি এক্ষেত্রে ডিপ্রেশনের দ্রুত চিকিত্সার পরামর্শ দেন।

ন্যাশনাল পারকিনসন্স ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এই ধরনের রোগে হাত বা আঙ্গুল কাঁপতে পারে। আর অতিরিক্ত মানসিক অবসাদ অথবা অনন্দঘন মুহূর্তে বা অধিক এক্সাইটমেন্ট-এর সময় সমস্যাটি অধিক প্রকট হয়। এছাড়া ট্রেমার বা হাত কাঁপা শুরু হবার আগে আক্রান্তদের ঘ্রাণশক্তি হ্রাস, ঘুমের সমস্যা ও উদ্বেগ থাকে তীব্র।

পারকিনসন্স-এ আক্রান্তদের হাত পায়ের জয়েন্ট ষ্টিফ বা শক্ত হয়ে যায় এবং চলাফেরায় সমস্যা দেখা দেয়। এধরনের সমস্যায় হাঁটা-চলা, দাঁত ব্রাশ করা, শার্টের বোতাম লাগানোর সমস্যা, এমনকি ফল ও তরকারি কাটার সময় জড়তা অনুভূত হয়।

বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, পারকিনসন্সের প্রাথমিক লক্ষণের ক্ষেত্রে সফটার ভয়েস অথবা মাসকড ফেস বা কণ্ঠস্বরে জড়তা এবং এক্সপ্রেশনলেস ফেস দেখা যাবে। আবার অনেক সময় অনেকে খুবই আস্তে কথা বলবে অথবা অতি দ্রুত কথা বলবে। এই রোগ শুধু শরীরের গতিকেই শ্লথ করে তাই নয়, ক্ষেত্র বিশেষ মুখমণ্ডলের মাংস পেশি বা ফেসিয়াল মাসল-এর ভঙ্গিমাও কমে যায়।