ধিক তাদের যারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিয়েও তাচ্ছিল্য করলো ।। রফিকুল ইসলাম

গত ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় দেশের রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করার পরপরই এ নিয়ে কাজ শুরু করি আমি। উদ্দেশ্য রাজশাহীর তালিকায় কারা এলো, কারা বাদ পড়লো। তালিকা ধরে খুঁজতে খুঁজতে ৮৯ নম্বর তালিকায় গিয়ে আটকে গেলো চোখ। ‘ওমা এ যে দেখি স্বাধীনতার জন্য যারা লড়াই করছেন, তাদের নামও এখানে।’ এই নামগুলো দেখে কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না। বার বার তালিকা পাওয়া লিংকটা ঠিক ঠাক আছে কিনা দেখতে থাকলাম। শেষে নিশ্চিত হলাম হ্যাঁ, ঠিকই আছে। এটাই তালিকা সরকার কর্তৃক ঘোষিত রাজাকারের। এই তালিকাতেই আমাদের রাজশাহীর গর্ব ৫ ব্যক্তিকেও (গোলাম আরিফ টিপু, এ্যাড. মহসিন আলী, এ্যাড. আব্দুস সালাম, এক সময়ের জনপ্রিয় জেলা প্রশাসক আহমেদ আব্দুর রউফ ও জনপ্রিয় পুলিশ সুপার এসএস আবু তালেব) কে বা কারা নাম উঠিয়ে দিয়েছেন স্বদর্পে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে আমি কালের কণ্ঠের মফস্বল সম্পাদক সাদেক ভাই ও বার্তা সম্পাদক শামীম ভাইকে অবগত করি। এরপর রাজশাহীর সেই গর্ব ৫ ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। তাদের কয়েকজন আমার নিকট থেকে বিষয়টি জেনে মর্মাহত হন। তারপর সংবাদটি পাঠায়। সংবাদটি পাঠানোর পরে ওইদিন রাত ১২ টার দিকে শামীম ভাই আবার ফোন দিয়ে বললেন, রফিক আপনার নিউজটা ঢাকা এডিশনে রাখবো কি? নিউজটা ঠিক আছে তো? কাল কিন্তু নিউজটা নিয়ে তোলপাড় হবে। তাকে অভয় দিলাম, ভাই ঠিক আছে। কোনো সমস্যা নাই। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর এ নিয়ে কালের কণ্ঠে প্রথম সংবাদটি প্রকাশ হয়। এরপর দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয় প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা নিয়ে ন্যাক্কারজনক সেই ঘটনাটি। এখন কথা হচ্ছে, এই সমালোচনার জেরে দুদিন পরে হয়তো তালিকায় নাম থাকবে না রাজশাহীর জনপ্রিয় এই পাঁচ ব্যক্তির। এর সঙ্গে জড়িতদেরও হয়তো কিছুই হবে না। কারণ তারা নিশ্চয় অনেক প্রতাপশালী। না হলে কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরও রাজাকারের তালিকায় নিয়ে আসতে পারে এমন সাহস কার আছে? তবে আমি ধিক্কার জানায় তাদের, যারা এমন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলো। জাতি তোমাদের ক্ষমা করবে না কখনো।

 

লেখক: দৈনিক কালের কণ্ঠ, রাজশাহীর ব্যুরো প্রধান।