ধর্ষণও গণহত্যার শামিল: ট্রাইব্যুনাল

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: মুক্তিযুদ্ধের সময় হওয়া ধর্ষণ গণহত্যার শামিল। আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। বুধবার কিশোরগঞ্জের সৈয়দ মো. হোসেন ও মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনাল এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

রায়ের পর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় হওয়া ধর্ষণকে জেনোসাইড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। দালিলিক সাক্ষ্য প্রমাণেও কোনও ঘাটতি না থাকে সেদিকে সচেষ্ট ছিলাম। অবশেষে ট্রাইব্যুনাল আজ এই রায়ের মধ্য দিয়ে যুদ্ধকালীন ধর্ষণকে জেনোসাইড ঘোষণা দিলেন।’

তিনি আরও বলেন, দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে আনা চতুর্থ অভিযোগে তারা ধর্ষণকে জেনোসাইড হিসেবে হাজির করেছিলেন এবং ট্রাইব্যুনাল এই অভিযোগে আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।

দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে থাকা ছয় অভিযোগের মধ্যে চতুর্থ অভিযোগ অনুসায়ী, নিকলীর নানশ্রী গ্রামে হিন্দু নারীদের ধর্ষণ ও হিন্দুদের আটকে রেখে নির্যাতনের পর ৩৪ জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আসামি হোসেনের মৃত্যুদণ্ডের রায় এসেছে। একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নারীদের চিহ্নিত করে ধর্ষণের ঘটনাকে আদালত বিবেচনা করেছে জেনোসাইডের সমতুল্য বলে বিবেচনায় নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে ট্রাইব্যুনাল গুলি বা ফাঁসি দিয়ে দুই রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন। বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন। বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী।

এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণ ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরণকে জেনোসাইড (গণহত্যা) উল্লেখ করে প্রথমবারের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। ওই সময় প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ধর্ষণকে গণহত্যার সমতুল্য ঘোষণার বিষয়টি উপস্থাপন করে বলেন, ‘একাত্তরে নারী ধর্ষণ জেনোসাইড হিসেবে ঘোষণার সুযোগ আছে।’

যুক্তিতর্কের পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেীছলেন, ‘এই মামলায় আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণ ও ধর্মান্তকরণকে গণহত্যার সমতুল্য হিসেবে ঘোষণার জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। সেজন্য আন্তর্জাতিকভাবে সংঘটিত বিভিন্ন বিচারের নজির তুলে ধরেছি।’

৬ অভিযোগের প্রথম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তর সালের অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  নিকলীর দামপাড়া গ্রাম ও নিকলী থানা ভবন, সদরের মহাশশ্মান এলাকায় আসামি হোসেন ছয় নারীকে ধর্ষণ, সুধীর সুত্রধরসহ ৩৫ জনকে হত্যা ও বাদল বর্মনসহ চারজনকে নির্যাতন করে।

দুই আসামির বিরুদ্ধে থাকা ছয়টি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, ৫ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও বাকি অভিযোগগুলোতে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ইন্টারপোলের সহায়তা নিয়ে পলাতক আসামির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

দুই আসামির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৯ মে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয় ট্রাইব্যুনালে। এক বছরের কম সময়ের মধ্যেই এই বিচার শেষে মামলাটি সিএভি রাখেন আদালত। তাদের বিরুদ্ধে হত্যার ৬২টি, অপহরণ ও আটক ১১জনকে এবং লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ আড়াইশ বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ ছিল।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন