দ্বি-রাষ্ট্র নীতিতে সুর বদলে বেকায়দায় ট্রাম্প

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন আলাদা রাষ্ট্র হবে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জাতিসংঘের গৃহীত এই নীতিকেই সমর্থন করে আসছিলো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সম্প্রতি সে অবস্থান থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তিনি জানান, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে ‘দ্বি-রাষ্ট্র নীতি’ দরকার আছে বলে তিনি মনে করেন না। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কার্যত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা লাভের প্রক্রিয়াকেই অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিলেন হোয়াইট হাউসের নয়া প্রশাসক।

 

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যু সমাধান প্রক্রিয়ায় তার এই বক্তব্য জল ঘোলা করার শামিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এই অবস্থানকে হঠকারী বলেও উল্লেখ করছেন তারা। এজন্য জাতিসংঘের তরফ থেকেও শাসানি হজম করতে হয়েছে মার্কিন কমান্ডার ইন চিফকে। এমনকি বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছে খোদ নিজের নিয়োগকৃত কূটনীতিকদের।

ট্রাম্প গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন সফররত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমি দুই পক্ষের মধ্যে ‘মহান শান্তি চুক্তি’ করতে চাই। এ জন্য চাই দুই পক্ষের আপস। দুই পক্ষকেই সংঘাত সমাধানের উপায় নির্ধারণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে উভয়কেই ছাড় দিতে হবে।

 

কিন্তু এই বক্তব্যের পরই তিনি বলে ওঠেন, সংকট নিরসনে দ্বি-রাষ্ট্র নীতি বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আর চাপ দেবে না। এই অবস্থান শিথিল করা হবে।

 

কার্যত নতুন নতুন বসতি স্থাপন করে ফিলিস্তিন দখল করতে থাকা ইসরায়েলের পক্ষে এই বক্তব্য দিয়ে ফের সাফাই বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া ট্রাম্প। তিনি বলেন, দুই রাষ্ট্র বা এক রাষ্ট্র যেটাই হোক, দুই পক্ষ যেটা পছন্দ করবে সেটাই আমি পছন্দ করবো, মানবো। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা যে নীতিতে খুশি আমিও তাতে খুশি।

 

দ্বি-রাষ্ট্র নীতি থেকে তার সরে আসার আভাসের পরই ট্রাম্পকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলে দেন, ‘দ্বি-রাষ্ট্র নীতির কোনো বিকল্প নেই। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যা করার দরকার তা-ই করতে হবে।

 

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পথ সুগম করার ‘দ্বি-রাষ্ট্র নীতিতে’ এতোদিন ধরে জাতিসংঘ, আরব লিগ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও সমাধান দিয়ে আসছিলো।

 

ট্রাম্প সে অবস্থান বদলের আভাস দেওয়ায় মার্কিন বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রায় মীমাংসা হতে যাওয়া একটি ইস্যুতে জল ঘোলা করে আপদ ডাকছেন ট্রাম্প। এতে মধ্যপ্রাচ্যে যে ইস্যুটি সমাধান হতে যাচ্ছিল সেটি নতুন করে ডালপালা মেলবে।

 

এই অবস্থায় খোদ ট্রাম্পেরই নিয়োগকৃত কূটনীতিকরা বিরক্তি প্রকাশ করছেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালে এ ব্যাপারে কোনো রাখঢাকও করেননি। তিনি ট্রাম্পের বক্তব্যের একদিন পর ১৬ ফেব্রুয়ারি ঠিক বিপরীত সুরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই ‘দ্বি-রাষ্ট্র নীতি’কে সমর্থন করে। এমনকি ট্রাম্প ভুল বলেছেন বলেও বক্তব্যে স্পষ্ট করে দেন হ্যালে। রাষ্ট্রদূত বলেন, কেউ যদি মনে করে যুক্তরাষ্ট্র তার নীতি থেকে সরে আসছে তবে ভুল করছে।

 

ট্রাম্পের নিজের ঘর থেকে যেমন তার অবস্থানের বিরোধিতা হয়ে আসছে, তেমনি তাকে কড়া কথা শোনাতে পিছপা হচ্ছে না ফিলিস্তিনিরাও। এরমধ্যেই ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রধান সমঝোতাকারী সায়েব এরেকাত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে দিয়েছেন, ‘ট্রাম্পের ভিশন আসলে বর্ণবাদেরই প্রকাশ’। ‘দ্বি-রাষ্ট্র নীতি’ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান এরেকাত।

 

এই অবস্থায় প্রশ্ন, ঘরের লোকদের এই বিরোধিতা আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হুঁশিয়ারিও কি লাগাম টানতে পারবে ট্রাম্পের নীতি নিয়ে ‘ছেলেখেলায়’?

সূত্র: বাংলা নিউজ