দেড় মাস পর মিনু খুললেন রাজশাহী মহানগর বিএনপি কার্যালয়ের তালা

নিজস্ব প্রতিবেদক: কমিটি ঘোষণার ঘোষণার জের ধরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেওয়ার পর অবশেষে সমঝোতার বরফ গলেছে। দেড় মাস পর সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুকে সঙ্গে করে নিয়ে মহানগর বিএনপির কর্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তালাবন্ধ থাকা কার্যালয় খুলে দেন মহানগর বিএনপি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক সহ-সভাপতি নজরুল হুদা।

তবে এ সময় মহানগর বিএনপির নব ঘোষিত কমিটির সভাপতি রাজশাহীর বরখাস্তকৃত মেয়র মোহাম্মাদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বা তার কোনো কর্মী সমর্থককে সেখানে দেখা যায়নি।

  • তালা খুলে দেওয়ার পর সমঝোতা প্রশ্নে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আগের ও বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন বলেন, একটি গোষ্ঠী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ভুল বুঝিয়ে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছিল। কিন্তু উদ্ভুত পরিস্থিতির পর চেয়ারপারসনের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। তিনি সব ঠিক করে দিবেন বলে সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন।

অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। ওই কমিটিতে রাজশাহী বিএনপির শীর্ষ নেতা সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুসহ দলের ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে আর ভুল বোঝাবুঝির কেনো অবকাশ নেই। আগামীতে মিনুর নেতৃত্বেই রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে সবাই মাঠে থাকবেন বলেও জোর গলা দাবি করেন এই বিএনপি নেতা।

  • এদিকে, মহানগর বিএনপি কার্যালয়ের তালা খুলে দেওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় মিজানুর রহমান মিনু দাবি করে বলেন, তাদের মধ্যে কেনো ভেদাভেদ নেই, কোন্দল নেই। কমিটি ঘোষণার পর দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির জের ধরে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তবে চেয়ারপারসনের নির্দেশে তিনি বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনরতদের বুঝিয়ে এক টেবিলে এনেছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর এ মাসের মধ্যেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে বলেও দাবি করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ মোঃ রফিকুল ইসলাম দুলাল, শহিদুন্নাহার কাজী হেনা, রাজপাড়া থানা বিএনপি’র সভাপতি মোঃ শওকত আলী, মতিহার থানা বিএনপি’র সভাপতি মোঃ আনসার আলী, রাসিকের প্যানেল মেয়র আনোয়ারুল ইসলাম আজব (২৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর), আরও উপস্থিত ছিলেন শাহ মুখদম থানা বিএনপি’র সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান শরীফ, বোয়ালিয়া থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম মিলু, শাহ মুখদম থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, রাজপাড়া থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলী হোসেন, যুবদল নেতা ওয়ালিউল হক রানা, বিএনপি নেতা মোঃ শফিউল আলম বুলু, ওয়াশকরনী ডাইমন্ড, মতিহার থান বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাজমুল হক ডিকেন, বোয়ালিয়া থানা বিএনপি’র সংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইকবাল হোসেন দিলদার, শাহ মুখদম থানা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক জুবায়ের আহম্মেদ বাবু, রাজপাড়া থানা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ পারভেজ পিন্টু, রাসিক কাউন্সিলর বৃন্দ ও বিএনপি নেতা যথাক্রমে বেলাল আহমেদ, লিটন, মনি, টুনু, টিটো, মঞ্জু, সৌরভ শেখ, মাহবুব সাইদ টুকু, মনি, মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়িকা মুসলিমা বেলী (কাউন্সিলর), শামসুন্নাহার (কাউন্সিলর), মহিলা দলনেত্রী বিথী। আরও উপস্থিত মহানগর যুবদল নেতা হাসনাইন হিকোল, লাল্টু, ফায়ারিং, ফখরুল, ডিমপল, বিপ্লব, জনি। মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার, সুমন, রিমন, আনন্দ, মহানগর তাঁতী দলের সভাপতি ইমন,  ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইলিয়াস বিন কাশেম, মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি শিবলী। রাবি ছাত্রদলের সহ-সভাপতি রাহী। শাহ মুখদম থানা ছাত্রদলের সভাপতি কামরুজ্জামান মিলন, রাজপাড়া থানা ছাত্রদলের সভাপতি ওয়াসিম জাবেদ মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম আপেল, মতিহার থানা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক টিয়া, শাহ মুখদম থানা ছাত্রদল সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল সাদাত শাহান প্রমুখ।

  • এর আগে রাজশাহী মহানগর বিএনপির নতুন কমিটির দুই শীর্ষ পদ ঘোষণার পর মহানগর বিএনপি অফিসে তালা ঝুলানো হয় ২৮ ডিসেম্বর। রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুর পক্ষের সমর্থকরা তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় মহানগর বিএনপির নতুন কমিটিতে মিনুকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।

গত ২৭ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা ও মহানগরের নতুন কমিটির ঘোষণা আসে কেন্দ্র থেকে। এতে দীর্ঘ সাত বছর পর দুই কমিটির শীর্ষ চারটি পদের তিনটিতেই নতুনদের নেতৃত্বে আনা হয়। ওই দিন দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থানীয় গণমাধ্য কর্মীদের এই তথ্য জানানো হয়।

  • এতে মহানগর বিএনপির সভাপতি পদ থেকে বিএনপির উপদেষ্টা ও সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনুকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে।

এছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বরখাস্তকৃত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে মহানগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে মহানগর কমিটি থেকে দীর্ঘ দিন পর ছিটকে পড়েন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিনু।

স/আর