দেশে সফটওয়্যার খাত উন্নয়নে মাইক্রোসফটের অবদান বহুমাত্রিক

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

দেশের সফটওয়্যার খাতের সেরা আয়োজন বেসিস সফটএক্সপোর প্লাটিনাম স্পন্সর সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট। খাতটির উন্নয়নে বহুমাত্রিক ভূমিকাও রাখছে তারা। বিস্তারিত বলছেন মাইক্রোসফট বাংলাদেশের এমডি সোনিয়া বশির কবির। সাক্ষাৎকারে ইমরান হোসেন মিলন

টেক শহর : বেসিস সফটএক্সপোতে মাইক্রোসফটের কী কী আয়োজন থাকছে?

সোনিয়া বশির কবির : এবারের এক্সপোতে মাইক্রোসফট প্লাটিনাম স্পন্সর। সেখানে আমাদের তিনটি সেমিনার হবে। একটি ‘পাবলিক পলিসি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর’। কারণ অনেক কিছু পলিসি মেকিং করে তো সেন্ট্রাল ব্যাংক। আমাদের কোর কিছু বিষয় সে সবের সঙ্গে জড়িত। তাই ডায়ালগটা সেন্ট্রাল ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয় করে।

দ্বিতীয় সেশন হচ্ছে ‘ক্লাউডিং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন উইথ দ্যা ক্লাউড’। এটিতে আমরা দেখাতে চাচ্ছি যে অন্য দেশ কিভাবে লিড করছে  ক্লাউড ট্রান্সফরমেশনে। ওখানে স্টেক হোল্ডাররা থাকবে।

আর যে সেশনটা নিয়ে আমি খুবই প্যাশনেট সেটা হচ্ছে, কোডিং উইথ চিলড্রেন। অনেককেই দেখছি কোডিংটা বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করছে। আমাদের খুবই ইচ্ছে, ক্লাস ওয়ান থেকে যে শিশু তাদের নিয়ে শুরু হোক।

টেক শহর : সেখানে কতজন শিশু অংশ নেবে?

সোনিয়া বশির কবির : আমাদের ৪০০ শিশুর অ্যাকোমোডেশন। এটা ক্লাস ওয়ান টু ক্লাস ফোর পর্যন্ত। আমরা ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা ২০০ শিশু নিয়ে আসবে। আর পাবলিক স্কুল বিশেষ করে বাংলা মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীরা আসবে। আমরা তাদের আসা যাওয়ার জন্য বাসের ব্যবস্থা করে দেবো।

টেক শহর : শিশুদের জন্য কোডিংটা কেনো?

সোনিয়া বশির কবির : কেনো এটা করছি এটা একটু গুরুত্বপূর্ণ। আমার নিজের একটা অবজারভেশন আছে। আমি দেখেছি আজকাল আমাদের বাচ্চারা কেনো যেনো সায়েন্স থেকে সরে যাচ্ছে। তারা বিজনেস পড়ে টেলকো, ব্যাংকিং এর চাকরি পাচ্ছে। তারা সায়েন্স বিমুখ হচ্ছে। তাই আমাদের খুবই ইচ্ছে যে, ক্লাস ওয়ান থেকে যে বাচ্চা, তাদের সামনে বিষয়গুলোর চমকপ্রদ উপস্থাপন করতে। আমরা কিন্তু ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ বা ফোনে ওদের অ্যাপ কিভাবে বানায় তা শেখাবো।

জানি, এখন একদিন শিখলে তাদের কিছু হবে না। কিন্তু ওর ভিতর যে জিজ্ঞাসু মন আছে সেটা জাগবে। জানার চেষ্টা করবে আসলেই তো এটা কি জিনিস। আরও যদি জানতে ইচ্ছে করে তবে তো সে এটা নিজেই ঘাঁটাঘাঁটি করবে।

এখন হয়তো দেখেছেন, কম বয়সের বাচ্চারা ফোন নিয়ে অনেক কিছু করছে। ওদের একটা কনস্ট্রাকটিভ কিছু করতে দেওয়া। এটাই লক্ষ্য।

microsoft.techshohor

টেক শহর : এটা শুধু কী বাংলাদেশে হচ্ছে?

সোনিয়া বশির কবির : মাইক্রোসফট এটা শুধু বাংলাদেশে করছে না। পৃথিবীর অনেক দেশেই মাইক্রোসফট এই প্রোগ্রামটা করে থাকে।

টেক শহর : ভবিষ্যতে এসব শিশুদের কোডিং নিয়ে মাইক্রোসফটের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা।

সোনিয়া বশির কবির : হ্যাঁ। এটা সবে শুরু। আমরা মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে স্কুলে স্কুলে যাবো। ইয়াং যারা বাচ্চা মানে ক্লাস ওয়ান থেকে বাচ্চাদের আমরা কোডিং করাতে কাজ করবো। এটা বলা যায় সেই কাজ শুরুর একটা ওরিয়েন্টেশন।

টেক শহর : মাইক্রোসফট এবারের বেসিস সফটএক্সপোর প্লাটিনাম স্পন্সর। আমরা বলতে পারি মাইক্রোসফট দেশীয় সফটওয়্যার খাতের উন্নয়নে, সম্প্রসারণে একটা অবদান রাখতে চাচ্ছে। একটু বিস্তারিত যদি বলেন।

সোনিয়া বশির কবির : পৃথিবীটা এখন তো অনেক বদলিয়েছে। মাইক্রোসফটের প্রোডাক্টও বদলিয়েছে। মাইক্রোসফটের মূল ম্যাসেজ হচ্ছে, আমরা এখানেও স্থানীয় কোনো সফটওয়্যারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছি না। আমরা এখানে কো-অপারেট করতে আসছি, কোলাবরেট বা একসঙ্গে কাজ করতে, একে অপারের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে এসেছি। কখনোই কমপিট করছি না।

কারণ আমাদের সবই ব্যাকএন্ড সফটওয়্যার। আর যে সফটওয়্যার তৈরি হয় সেগুলো ফ্রন্টএন্ড। আমাদের উপরে রেইসড করে, ব্যাকএন্ড ব্যবহার করে দেশীয় সফটওয়্যার যদি তা লিড করে তাহলে তারা মাইক্রোসফটের একটা ব্র্যান্ড ব্যবহার করতে পারছে।

এজন্য অবশ্য আমাদের দুইটা অফার আছে। যে কোনো আইটি রিলেটেড বিজনেস, ইভেন কেউ যদি এক্সেল ব্যবহার করে সেলাই করে, রান্না করে এটা কোনো ব্যাপার না। শুধু আইটি ব্যবহার করছে বা রিলেটেড, সেখানে ট্রেড লাইসেন্স ফাইভ ইয়ার্স অ্যান্ড লেফট, মাইক্রোসফটের যেসব সফটওয়্যার আছে এবং তা ফ্রি দিচ্ছি।

আর যারা স্টুডেন্ট আছেন, যেকোনো স্টুডেন্ট যদি তার ব্যবসা করতে চাচ্ছে তাকেও আমরা ফ্রি সফটওয়্যার দিচ্ছি। আমাদের অল প্রোডাক্ট আছে।

এভাবে আমরা ইন্ডাস্ট্রিকে বলছি যে একটা সফটওয়্যার এখন কেউ যদি কেউ ব্যাকএন্ডে মাইক্রোসফটকে রেখে তাদের সফটওয়্যার উন্নয়ন করে তবে সেখানে কমফোর্ট পায় কাস্টমাররা। তখন কাস্টমাররা ভাবে, না এখানে মাইক্রোসফট আছে ব্যাকএন্ডে। কারণ ডেটা, স্টোরেজ এগুলো নিয়ে কাস্টমাররা সতর্ক থাকে। তখন একটা আস্থা পায়।

microsoft

টেক শহর : দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০২১ সাল নাগাদ পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় আনতে দেশীয় সফটওয়্যারকে নিয়ে মাইক্রোসফটের পরিকল্পনা কী?

সোনিয়া বশির কবির : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে, আমাদের যে স্বপ্ন দেশে ২০২১ সালের মধ্যে খাতটিতে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করবো। এটা করার জন্য কিন্তু অনেক কিছু লাগবে। শুধু নিজে ভালো সফটওয়্যার হলে হবে না। ওইখানে মাইক্রোসফট কিভাবে সাহায্য করতে পারে সেটা নিয়ে কাজও করছে। একটা তো হচ্ছে আমাদের ব্যাকএন্ড সাপোর্ট, তারপরে মেন্টরিং, গ্রুমিং, কিভাবে সফটওয়্যার স্কিলস তৈরি করতে হবে সেটা আমরা দেখবো।

মাইক্রোসফট এই স্বপ্ন পূরণে কিন্তু কাজ করে যাচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির দিকে নিচ্ছি। তাদের বিনামূল্যে সফটওয়্যার দিচ্ছি। আমার অফিসে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী আসে। যারা ইন্টার্ন করছে। আমি নিজে পড়াচ্ছি তাদের। কিভাবে বিজনেস প্ল্যান করতে হবে, কিভাবে সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করতে হবে এসব। তো এটা সেই স্বপ্ন পূরণের এবং এই খাত থেকে আগামীতে আরও বড় স্বপ্ন দেখার হাতিয়ার তৈরি করে। সাহস যোগায়।

সূত্র : টেকশহর