দেশে ফিরে কোভিডযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের বাইরে থেকে পড়া-শোনা করে আসা অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী এই করোনযুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন। এখনো অংশ নিতে চান ২০ শিক্ষার্থী এই যুদ্ধে অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছেন। দেশের প্রয়োজনে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দক্ষ সাবেক ও বর্তমান এসব শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, ‘চীনে করোনা প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছিলেন কাজী পরাগ। দেশটির ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষণা ল্যাবের এ শিক্ষার্থী দেশে ফিরে আসেন গত ফেব্রুয়ারি মাসে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন।

তবে দেশে ফিরে বসে থাকেননি তিনি। দেশে ফেরার পর যখন করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং নতুন নতুন ল্যাব এর প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে তখনই মলিকুলার বায়োলজিস্ট বন্ধু ও সহপাঠীদেরকে সাথে নিয়ে সেচ্ছাসেবক হিসাবে সামনে এগিয়ে এসেছেন তিনি।
ঝুঁকি জেনেও করোনা পরীক্ষায় ব্যবহৃত রিয়েল টাইম পিসিআর পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে শুরু করে করোনা পরীক্ষার কাজ করে চলছেন এখনও। যার পুরোটাই করছেন স্বেচ্ছাশ্রমে।

শুধু কাজী পরাগ নন, মলিকুলার বায়োলোজিতে দক্ষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমানসহ আরও কিছু চিকিৎসকে সাথে নিয়ে প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে করোনাযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। করোনা ল্যাবে কাজ করে যাচ্ছে দক্ষতার সঙ্গে।
তাদের একজন রাবির সাবেক শিক্ষার্থী রওশন আলী অয়ন। অয়ন জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজের করোনা শনাক্তকরণ ল্যাব চালু হওয়ার পর থেকেই তিনি সেখানে কাজ করে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাশ্রমে।

এই শিক্ষার্থীরা রংপুর সিএমএইচ, বগুড়া সিএমএইচ, কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজে এবং এখন নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজসহ দেশের ৮ টি ল্যাবের সাথে কাজ করছেন ।

ওই শিক্ষার্থীরা আরও জানান, দেশের চিকিৎসক এবং ল্যাব টেকনোলজিস্টরা কোভিডি ১৯ এর জন্য আরটি-পিসিআর যে টেস্ট করেন, এই টেকনোলজি বা এর জন্য যে মলিকুলার বায়োলজির জ্ঞান প্রয়োজন তা অনেকের জানা নেই। দেশের বাইরে থেকে আসা এই শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের চিকিৎসক ও ল্যাব টেকনোলজিস্টদের সেই প্রশিক্ষণ দেয়া থেকে শুরু করে এবং ল্যাবে তাঁদের সঙ্গে কাজ করে তাঁদের দক্ষ হিসাবে গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করছেন।

কাজী পরাগ বলেন, ‘দেশের বাইরে পড়া-লেখা করে যে জ্ঞান আমি অর্জন করলাম সেটি যদি দেশমাতৃকার পয়োজনে কাজে না লাগাতে পারি, তাহলে আমি এই দেশের সন্তান হয়ে জন্ম নিলাম কেন? এমন বিবেকের তাড়না থেকেই আমরা বাইরের দেশে এই জ্ঞান অর্জন করা বন্ধুরা দেশের করোনযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। আমার দেশের জন্য আমার জ্ঞান কাজে লাগতে পারছি।’

কাজী পরাগ বলেন, ‘প্রথমে মা কোনো ভাবেই এই কাজে যোগ দিতে অঅনুমতি দিতে চাননি। শুধু মাকে একটা কথা বলতাম, ‘যে আমাদের এখন দেশের প্রয়োজনে আমাকে এখন এই কাজে নামতে হবে। মা এখন আগের মতো টেনশন করেন না। উনি প্রতিদিন আমাকে এখন অনুপ্রেরণা দেন।’
এদিকে দেশের প্রয়োজনে করোনা ল্যাবেক কাজে নামতে প্রস্তুত থাকা বিদেশফেরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পর্তুগালের লিসবন ইউনিভার্সিটির শিক্ষীর্থী জহুরুল ইসলাম মুন বলেন, আমি এই যুদ্ধে অংশ নিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমার মতো আরও অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী এই কাজে অংশ নিতে চান। আমরা দেশের প্রয়োজনেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে চাই।’

একই আগ্রহ ব্যক্ত করেন চীনের হুয়াজং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দম্পতি সামিউল ইসলাম ও রাজিয়া সুলতানা মৌসহ আরও অনেকেই।

স/আর