দেশের সাবেক কোচদের জন্য বিসিবির কাছে রফিকের আর্জি

বাংলাদেশের ক্রিকেটে বরারবরই স্থানীয় তথা দেশি কোচদের মূল্যায়ন কম। আজকাল ভিনদেশি কোচিং স্টাফে সয়লাব দেশের ক্রিকেট। জাতীয় দলের হেড কোচ থেকে শুরু করে ব্যাটিং কোচ, পেস বোলিং কোচ, স্পিন কোচ, ফিল্ডিং কোচ, ট্রেইনার, ফিজিও, কম্পিউটার অ্যানালিস্ট পর্যন্ত সবই বিদেশি। তাদের পেছনে প্রতি মাসে ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

সে তুলনায় বোর্ডে যেসব দেশি কোচরা কাজ করছেন তাদের মিলছে অনেক কম অর্থ। এখন বোর্ডে যেসব স্থানীয় কোচরা কাজ করছেন, তাদের কারো বেতনই আহামরি নয়। অথচ জাতীয় দলে এমন অনেক কোচিং স্টাফ আছেন যাদের দৈনিক বেতন বেশিরভাগ স্থানীয় কোচদের মাসিক বেতনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

সেটাই শেষ কথা নয়। সাবেক কোচদের অবস্থা আরও খারাপ। বাংলাদেশে অবশ্য সব ক্ষেত্রেই সাবেকদের মূল্যায়ন ও কদর কম। সাবেক জাতীয় কোচরা জীবিত অবস্থায় সেভাবে কদর পান না।। মৃত্যুর পর তাদের নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়। তাদের কর্মকান্ডের প্রশংসা করা হয়। তিনি এই করেছেন, সেই করেছেন, খুব ভাল মানুষ ছিলেন, এ দেশের ক্রিকেটের তার অবদান অপরিসীম, দেশের ক্রিকেটাঙ্গন তাদের অবদানের কথা চিরদিন স্মরণ রাখবে- এ জাতীয় কথাই উচ্চারিত হয় সবার মুখে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য জীবিত অবস্থায় তাদের মূল্যায়ন খুব একটা হয় না। অথচ কঠিন সত্য হলো, সাবেক জাতীয় কোচরা জীবনের বড় সময় দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করেছেন, ক্রিকেটারদের মান উন্নত করতে নিরলসভাবে পরিশ্র করে গেছেন। কী পেয়েছেন, কী পাননি- সে হিসেব না করে সামর্থ্যের শেষবিন্দু দিয়ে চেষ্টা করেছেন। সেই সত্তর-আশি দশক থেকে বর্তমান শতাব্দীর শুরুর সময় পর্যন্ত দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে সাবেক কোচদের অবদান অসামান্য।

অথচ অবসরে যাওয়ার পর তাদের নিয়ে যে কিছু করতে হবে, তাদের পাশে দাঁড়ানো যে বোর্ডের কর্তব্য- সেই বোধ, চিন্তাই আসেনি এখনও। দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা বিসিবির কোন কমিটি সাবেক জাতীয় কোচরা অবসরে যাওয়ার পর সেভাবে পরিকল্পনা সাজিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেনি। একদম করে না বা কিছুই করেনি- এটা ঠিক নয়। কেউ জটিল রোগে আক্রান্ত হলে বোর্ড তাকে এককালীন একটা মোটামুটি ভাল অর্থ সাহায্য দেয়। কারও কারও হাসপাতাল বিল দেয়ার নজিরও আছে বিসিবির।

কিন্তু অনেকেরই মত, শেষসময়ে এভাবে পাশে না দাঁড়িয়ে সেই সাবেক কোচরা যখন ক্লাব ও জাতীয় পর্যায়ের কোচিং ছেড়ে অবসরে চলে যান, তখন তাদের পেনশনের মত একটা মোটামুটি মাসোহারার ব্যবস্থা করলে সেটা বরং তাদের উপকারে আসবে।

দেশে অমন কোচের সংখ্যা আসলে হাতে গোনা। যারা সুস্থ থাকা অবস্থায় এবং বিপাকে না পড়লে কখনও বোর্ডের কাছে হয়তো একটি টাকাও চান না, চাইবেন না। কিন্তু দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে তাদের অবদানের কথা মাথায় রেখে সেই সব কোচদের মাসে একটি মোটামুটি অঙ্কের মাসোহারা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া যেতেই পারে।

দেশের ক্রিকেট নিয়ে গালভরা বুলি আওরানোর মানুষের কমতি নেই। এখন এক গ্রুপ তৈরি হয়েছে ‘তেলে মাথায় তেল ঢালার।’ সব সুযোগ-সুবিধা খালি বর্তমান প্রজন্মের জন্য। ভাবটা এমন আগে যারা ছিলেন তারা কিছু জানতেন না, কিছু পারতেন না। তাদের কোন অবদানও নেই দেশের ক্রিকেটে- এ বোধটাই ভুল।

অনেক বড় দেশি ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিতদের লজ্জায় ঢেলে শুক্রবার রাতে ঠিক সেই নির্মম সত্য কথাই বলেছেন মোহাম্মদ রফিক। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবসময়ের অন্যতম সেরা এ বাঁহাতি স্পিনার নামী ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের ইউটিউব লাইভে এসে সাবেক কোচদের প্রতি আরও আন্তরিক এবং যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তার কথা, ‘কোচরা জীবিত অবস্থায় তেমন মূল্যায়ন পান না। তাদের কদর থাকে না। পৃথিবী থেকে পরপারে পাড়ি দেয়ার পর তাদের নিয়ে কথা হয়। তা না করে জীবদ্দশায় বোর্ড তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে। তাদের মাসিক বেতনের মত দিতে পারে।’

নিজের জীবনে যাদের হাতের ছোয়ায় বেড়ে ওঠা ও পরিণত হওয়া সেই প্রশিক্ষক সৈয়দ আলতাফ হোসেন এবং ওসমান খানের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে রফিক বলেন, ‘শ্রদ্ধেয় ওসমান ভাই আছেন, তিনি আমার গুরু। প্রয়াত আলতাফ ভাইও আমার গুরু ছিলেন। প্রথম কোচ ছিলেন আলতাফ ভাই। তারপরের প্রশিক্ষক ওসমান ভাই। সত্যি কথা বলতে কি বাংলাদেশের ক্রিকেট উত্তরন কিন্তু মূলত তাদের হাত দিয়েই।’

‘আমি মনে করি, বাংলাদেশের ক্রিকেট ঐ দুজনার কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখ লাগে সেই সব গুণী মানুষজন অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট যাদের জন্য আজকের অবস্থানে তাদের কোন খবর নেই। মৃত্যুর পর অবশ্য অনেক কথাই শোনা যায়। বলা হয় আমরা তার জন্য এই করেছি, সেই করেছি। আমার কথা হলো, যেটা করেছেন, তা ভাল। তবে মৃত্যুর পর না দিয়ে জীবিত অবস্থায় ঐ সব নিবেদিতপ্রাণ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ান। তাতে তার ও তার পরিবারের উপকার হবে।’

‘আজকে বোর্ডের টাকার অভাব নেই। আমি মনে করি সেই সব সাবেক কোচদের যদি বোর্ড থেকে মাসিক বেতন বা ভাতার ব্যবস্থা করা হয়, তা অনেক ভালো হবে। দেশের ক্রিকেটের জন্য কাজ করা ও সর্বস্ব উজার করে দেয়া মানুষগুলো একটা অন্যরকম সন্তুষ্টি পাবেন। দুঃখ পাই তাদের অবস্থা দেখে। আলতাফ ভাইয়ের পরিণতি দেখে খারাপ লেগেছে। এখন ওসমান ভাইকে দেখেও মনটা কেমন বিষাদে ভরে যায়। দুঃখ লাগে এই মানুষগুলো আমাদের নিয়ে কাজ করেছেন, দিনের পর দিন শ্রম দিয়েছেন। তাদের হাত ধরেই আমরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। কিন্তু তাদের অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। আমার মনে হয় জীবিত অবস্থায় তাদের পাশে দাঁড়ালে তাদের উপকার হবে।’

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ