দেশপ্রেমের কঠিন পরীক্ষা, কারণ তাঁরা ‘ভাড়াটে’!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

এবারের অলিম্পিক হ্যান্ডবলে সোনা জয়ের অন্যতম দাবিদার নাকি কাতার!
অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিশ্ব হ্যান্ডবলের খোঁজখবর রাখার মানুষ খুব বেশি না থাকলেও একটি তথ্য জেনে রাখুন, গত বছর এই কাতার সারা দুনিয়াকে চমকে দিয়ে জিতে নিয়েছিল হ্যান্ডবলের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি ধনী, তেলসমৃদ্ধ, সন্দেহ নেই। কিন্তু র‍্যাঙ্কিংয়ের ১০৮ নম্বর স্থানে থেকে কোন জাদুবলে তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো! কাতারের বিশ্বসেরা হওয়ার ব্যাপারটাও কিন্তু চমকে দেওয়ার মতোই গল্প।

কাতারের হঠাৎ ইচ্ছা হয়েছে হ্যান্ডবলে সাফল্য পাওয়ার। পেট্রো-ডলারের কল্যাণে তার ব্যবস্থা ভালোভাবেই করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেরা হ্যান্ডবল খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠন করেছে জাতীয় দল। এ ক্ষেত্রে হ্যান্ডবলের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার নাগরিকত্বসংক্রান্ত আইনের শিথিলতা ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে বেশ ভালোভাবেই। হ্যান্ডবল দুনিয়ায় জোর বিতর্কও তৈরি হয়েছে এ নিয়ে। অনেকেই বলছেন, কাতারের পতাকাতলে আদতে একটি ‘বিশ্ব একাদশ’ই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে হ্যান্ডবলের শীর্ষ দেশগুলোর সঙ্গে।

এবারের অলিম্পিক হ্যান্ডবলেও কাতার ‘ফেবারিট’। সেই প্রমাণ তারা রেখেছে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই। ক্রোয়েশিয়াকে ৩০-২৩ গোলে হারিয়ে নিজেদের শক্তির মহড়াটা দিয়ে দিয়েছে তারা। অলিম্পিকে কাতারের ১৪ সদস্যের হ্যান্ডবল দলে ‘ভাড়াটে’ খেলোয়াড়ের সংখ্যাই ১১।
কাতার-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের সময় বড় সমস্যায় পড়েছিলেন কাতারের ‘ক্রোয়াট’ তারকা মার্কো বাগারিচ। ক্রোয়েশিয়া দলের হয়ে খেলেছেন এই কিছুদিন আগেই। ক্রোয়েশিয়া দলের অনেক খেলোয়াড়ই তাঁর বন্ধু, এককালের সতীর্থ। প্রিয় ও পরিচিতজনদের বিপক্ষে খেলার চেয়েও মাতৃভূমির বিপক্ষে খেলাটা তাঁর মনে তৈরি করছিল প্রচণ্ড চাপ, ‘খুব খারাপ লাগছিল জাতীয় সংগীতের সময়। কিন্তু আমি কী করতে পারি? কাতার আমাকে অলিম্পিকে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে। অলিম্পিকে অংশ নেওয়াটা তো যেকোনো ক্রীড়াবিদের জন্যই আজীবনের লালিত স্বপ্ন। খুব কঠিন সময় কেটেছে নিজের দেশের বিপক্ষে মাঠে নেমে।’
বাগারিচের মতোই ‘অদ্ভুত’ অনুভূতি নিয়ে অলিম্পিকে কাতারের জার্সি গায়ে হ্যান্ডবলে নামবেন ‘ভাড়াটে’ খেলোয়াড়েরা। কাতারের ১১ জন ভাড়াটে খেলোয়াড়ের তালিকায় ক্রোয়েশিয়া থেকে আছেন পাঁচজন, দুই সিরিয়ান, এক ফরাসি, একজন স্প্যানিয়ার্ড, একজন কিউবান ও মিসর থেকে একজন। এই দলের কোচও একজন ফরাসি—ভালেরো রিভেরা।
টাকা থাকলে কী না হয়। অলিম্পিকের জন্য শক্তিশালী দলও গড়া যায়। আসল পরীক্ষায় তো এই ভাড়াটে কাতারিরা পড়তে পারেন সামনে; যদি ফাইনালে তাঁদের খেলতে হয় নিজের নাড়িপোঁতা দেশের বিপক্ষেই!

সূত্র: প্রথম অলো