দুর্বার ডিজে, যাত্রার নামে চলল ‘চিকনি চামেলি’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জামার হাতায় মুখ মুছে ছেলেটি বলছে, ‘‘ওহ কি বলব দাদা! যেন খোদ কোলকাতার একটা বার উঠে এসেছে ভগবানগোলায়!’’

খুব ভুল কি? প্রচারটা ছিলই, নাচের সঙ্গে ‘প্রয়োজনীয়’ সব কিছুই মিলবে, ‘কোনও চিন্তা নেই!’ গোটা গ্রাম জুড়ে মাইকে তার প্রচার হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে ‘বিরাট যাত্রানুষ্ঠান’। প্যান্ডেল করে ঘিরে ফেলা হয়েছে মাঠ, যাতে বাইরে থেকে কিছু দেখা বা বোঝা না যায়। তারই মধ্যে উঁচু করে তৈরি হয়েছে মঞ্চও। মঞ্চের দু’পাশে বাঁধা হয়েছে চারটি করে মোট আটটি ডিজে বক্স। রাত এগারোটার পর সমান তালে সেখানে শুরু হয়েছে, কখনও ‘চিকনি চামেলি’ কখনও বা ভোজপুরি গান,  তার মধ্যে স্টেজের ওপর চলেছে কাটো পোষাকে এক দল তরুণীর উদ্দাম নাচ। মাঝে মাঝে ফোন নম্বর লেখা চিরকুট উড়ে যাচ্ছে মঞ্চের দিকে। তবে সেই প্যান্ডেলের ভিতরে মদ্যপানের ব্যবস্থা নেই, সে ব্যবস্থা রয়েছে বাইরে, সেখানে ঢালাও মদের সহ্গেই মিলছে ‘প্রয়োজনীয়’, সালাড, ছোলা ভাজা, মাংসের চপ।

টিকিট— চেয়ারে বসে দেখলে সত্তর টাকা, মাটিতে  চল্লিশ টাকা। কার্যত সরকারের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চার রাত্রি ধরে যাত্রা ও নাটকের নাম করে তারস্বরে ডিজে বক্স বাজিয়ে এমনই ‘যাত্রা পালা’ ভগবানগোলার কান্তনগরে। অভিযোগ এর পিছনে ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান। শেষতক, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয় সেই পালা। আটক করা হয় ডিজে বক্স-সহ দু’জনকে।

স্থানীয় একটি সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, ‘‘রাত এগারোটার পর থেকে শুরু হয়েছে ডিজে’র অত্যাচার। বুঝতেই পারলাম, যাত্রার আড়ালে ভেতরে চলছে অশ্লীল নাচ। কাকে কি বলতে যাব বলুন তো, বললেই মার খাব। খুনও হয়ে যেতে পারি।’’

সামনেই উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট, বই নিয়ে বসেছিল দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল হালিম, সে বলছে, ‘‘একটা শব্দও মাথায় ঢুকছে না। এমন বক্স বাজলে হয়! বারহণ করারও উপায় নেই, তা হলেই কপালে জুটবে মার।’’

গ্রামের অধিকাংশেরই আঙুল উঠেছে, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের তাঞ্জুরা বিবির দিকে। তবে, তাঁকে বার বার ফোন করেও কোনও সাড়া মেলেনি। কান্তনগর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য আব্দুল আলি হাসান অবশ্য এ ব্যাপারে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন, ‘‘এই অনুষ্ঠানের জন্য প্রধান আমার কাছ থেকে কোনও অনুমতি নেয়নি, যাত্রার নাম করে যা হয়েছে দল তা সমর্থন করে না।’’ ভগবানগোলা ব্লকের তৃণমূল সভপতি আফরোজ সরকারও বলেন, ‘‘দল এমন অশ্লীল অনুষ্ঠান সমর্থন করে না। জানি না কার অনুমতি নিয়ে প্রধান এমন অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করলেন।’’

ভগবানগোলা থানার ওসি উৎপল কুমার দাস বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যাত্রাপালার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। প্রশাসনের কোনও নিয়মই মানা হয়নি। রাতে খবর পেয়েই সেখানে গিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। দু’জনকে আটকও করা হয়েছে।’’

প্রায় একই সুরে ভগবানগোলা ১ ব্লকের বিডিও পুলককান্তি মজুমদার বলেন, ‘‘শুনেছি, যাত্রাপালার নাম করে এই রকম বেয়াদপি হয়েছে।  কখনওই বরদাস্ত করা হবে না এসব।  ইতিমধ্যেই আমরা ওখানকার প্রধানকে লিখিত নোটিস পাঠানো পাঠিয়েছি।’’