রাজশাহীতে দুর্গাপূজার প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ২২ অক্টোবর থেকে এই পূজা শুরু হবে। সেই হিসেবে এক মাসেরও কম সময় রয়েছে। পালরা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

জানা গেছে, পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন। পরদিন সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আচার অনুষ্ঠান। ২৬ অক্টোবর মহাদশমীতে বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

রাজশাহী নগরীর মন্দির ও পাল বাড়িগুলো ঘুরে ব্যস্ততার চিত্র চোখে পড়েছে। আসন্ন দুর্গা পূজাকে সামনে রেখে নগরীর মিয়াপাড়ার ধর্মসভা, গণকপাড়ার বৈষ্ণবসভা, ঘোড়ামারা, শেখেরচক, কুমারপাড়া ও মিয়াপাড়া এলাকায় পুরোদমে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। কারিগররা বলছেন- এবছর প্রতিমা তৈরির তেমন অর্ডার নেই। কেউ কেউ দলবদ্ধভাবে কাজ সম্পন্ন করছেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) সকালে নগরীর বেশ কয়েকটি মন্দিরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কাঠ-বাঁশ দিয়ে ফ্রেম তৈরি করে খড় (ধানের আউড়) দিয়ে সাজিয়ে কাঁদা-মাটি লাগানো হচ্ছে। কারও কারও প্রতিমা রূপে এসেছে। কারওটার আবার শুধুই কাঠামো দেখা যাচ্ছে। বাকি পড়ে আছে পোশাক ও গয়না পরানো।

জানা গেছে, এবছর মহামারি করোনা ভাইরাসে এবারের দুর্গোৎসবের চির পরিচিত আমেজ থাকছে না। মহালয়া থেকে শুরু করে শারদীয় এই উৎসবের সব ক্ষেত্রেই থাকছে স্বাস্থ্যবিধির কড়া নির্দেশ।

হিন্দু রীতি অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে অনুষ্ঠিত হয় দুর্গোৎসব। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আশ্বিন মাসের এই শুক্ল পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের শুরু হয় যে অমাবস্যায়, সেদিন বলা হয় মহালয়া। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সেদিন ‘কন্যারূপে’ মর্ত্যে আসেন দেবী দুর্গা।

এবছর মহালয়া হবে ১৭ সেপ্টেম্বর। কিন্তু পঞ্জিকার হিসাবে এবার আশ্বিন মাস ‘মল মাস’, মানে অশুভ মাস। সে কারণে এবার আশ্বিনে দেবীর পূজা হবে না। পূজা হবে কার্তিক মাসে। সেই হিসাবে এবার দেবী দুর্গা ‘মর্ত্যে আসবেন’ মহালয়ার ৩৫ দিন পরে।
নগরীর আলুপট্টির কুমারপাড়া এলাকার প্রতিমা কারিগর কার্তিক চন্দ্র পাল বলেন, হাতে এখনও এক মাসেরও বেশি সময় আছে। ‘ভাদ্র মাস শুরু হয়েছে, অথচ এখন রাজশাহীতে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। হঠাৎ আকাশে মেঘ করে বৃষ্টি আসলে বাইরে থেকে প্রতিমা ঘরে তুলতে হচ্ছে। এতে সময় ও শ্রম দুটো যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আরও এক মাস আগেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছি। এবছর এখনও পর্যন্ত ১২টি প্রতিমা তৈরি করেছি। তবে অর্ডার পেয়েছি চারটির। তবে কেউ দাম বলতে চায় না। সবাই বলে করোনার কারণে টাকা নেই হাতে। এবছর ১২ থেকে ২০ হাজার টাকার উপরে দাম বলে না।

রাজশাহী হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, এখনো জানা যায়নি কতটি মন্দির ও মন্ডুপে দুর্গাপূজা হবে। তবে ধারণা করা হচ্ছে গত বছরের চেয়ে এবছর জেলা ও নগরে কমবে দুর্গাপূজা।

স/আ