দুর্গাপুরে ইটভাটা দখল করে সংখ্যালঘুকে ভারত চলে যেতে বললেন আ.লীগ নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর দুর্গাপুরে এক হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ী নিকট থেকে চাঁদার দাবিতে ইটখোলা দখলের অভিযোগ উঠেছে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। ইটখোলাটি দখল নিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে এলাকা ছেড়ে ভারত চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারত চলে না গেলে তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়েছে। প্রাণভয়ে ভোলানাথ ঘোষ নামের ওই ব্যবসায়ী এখন আর ইটখোলাতে যেতে পারছেন না। এই সুযোগে ইটখোলার সব ইট বিক্রি করে দিচ্ছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাহার আলী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরীফসহ তাঁেদর বাহিনী। গত প্রায় দেড় মাস ধরে এ কাজ করে চলেছেন তারা।

ভ’ক্তভোগী ভোলানাথ ঘোষ শেষ পর্যন্ত রাজশাহী আদালতে মামলাও দায়ের করেছেন। কিন্তু পুলিশ বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে ওই ইটখোলাটি এখনো দখলে রেখেছেন আজাহার, শরীফুজ্জামান শরীফসহ তাঁদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা।
ভূক্তভোগী ভোলানাথ ঘোষ জানান,তাঁর বাড়ি জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে। তিনি প্রায় ছয় বছর ধরে দুর্গাপুরের কিশোরপুরে ইটখোলা নির্মাণ করে ব্যবসা করে আসছেন। মাঝে কিছু সমস্যার কারণে তিনি আর্থিকভাবে সঙ্কটে পড়েন। এর জন্য ইটখোলার ইটের ওপর আিগ্রম কিছু টাকা দাদন নেন স্থানীয় সুদখোরদের নিকট থেকে। এরই মধ্যে যার নিকট থেকে সুদসহ সাত লাখ টাকা নিয়েছেনতাকে ছয় লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন।

 

এভাবে প্রায় সব টাকায় পরিশোধ করে ফেলেছেন তিনি। ইটখোলায় এখানো প্রায় ১৫ লাখ ইট আছে। বাকি ইটগুলো দিয়ে দেনা পরিশোধ করা ছাড়াও তার বেশকিছু টাকা লাভ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে গত ৩০ মার্চ দুর্গাপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ শরিফুজ্জামান শরীফ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শরিফুল ইসলাম, নাজমুল হক,কুদ্দুস ও হামিন মিলে ভোলানাথকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তারা হামিনের বাড়িতে আটকে রেখে ৪০লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।

ভোলানাথ গতকালে অভিযোগ করেজানান, চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় আজাহার এবং তাঁর সাঙ্গ-পাঙ্গরা মিলে ভোলানাথ ঘোষকে আটকে রেখে জোর করে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়ার সময় বিষয়টি কাউকে না জানালে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে দ্রুত এলাকা ছেড়ে ভারত চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন আজাহার এবং শরিফ বাহিনী। এরপর থেকে ওই ইটখোলাটির দখল নিয়ে নেয় আজাহার এবং শররিফ বাহিনী। এরপর থেকে তারা ইটখোলাটি থেকে ইচ্ছে মতো ইট বিক্রি করে দিচ্ছে। ইটখোলার দখল নিতে গেলে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে আজাহার বাহিনী। ভয়ে আতঙ্কে ভোলানাথ আর ইটখোলার আশে-পাশেও যেতে পারেননি।

ভোলানাথ অভিযোগ করে বলেন, ইটখোলা দখল এবং চাঁদা দাবির ঘটনায় তিনি আাদলতে মামলা করার পর থেকে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আজাহার বাহিনী। আজাহার এবং শরিফসহ তাঁদের লোকজন অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। উপায়ান্তর না পেয়ে ভোলানাথ ঘোষ এখন বাড়ি থেকেও বের হচ্ছেন না। এই অবস্থায় গত শনিবার বিষয়টি মীমাংসা করার নাম করে ভোলানাথকে ডেকে নেন আজাহারসহ তাঁর লোকজন। ভোলানাথ তাঁর ঘোনিষ্ট কয়েকজন লোক নিয়ে ইপখোলায় যান। কিন্তু আজার এবং তার বাহিনীর লোকজন ভোলানাথকে ইটখোলার মধ্যে পিটিয়ে আহত করে। মেষে স্থানীয় নারীরা এসে কোনো মতে ভোলানাথ এবং তার লোকজনকে উদ্ধার করেন। এরপর সেখান থেকে কোনো মতে বাড়ি ফিরে যান ভোলানাথ ঘোষ।

ভোলানাথ গোষ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি নিরুপায় হয়ে পড়েছি। আমি সংখ্যালঘু বলে আমাকে তারা একের পর এক নির্যাতন করে যাচ্ছে চাঁদার দাবিতে। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও এ নিয়ে কোনো ভ’মিকা নিচ্ছে না। ফলে আজাহার, শরিফসহ তাদের বাহিনীর লোকজনের দাপট চলছেই। তারা আমার ইটভাটা (ইটখোলা) দখল করে নিয়ে ইচ্ছে মতো ইট বিক্রি করে দিচ্ছে। আমি প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছি না। আবার ইটখোলার দখল ছেড়ে আামকে ভারত চলে যেতে বলা হয়েছে-তা না হলে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে আজাহার এবং তার লোকজন। এই অবস্থায় আমি এখন কোথায় যাব?’

তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা আজাহার আলী বলেন, কিছু লোকজন ভোলানাথের কাছ থেকে টাকা পাবে। যারা টাকা পাবে,তারাই ইটভাটা দখল করেছে। আমি দখল করিনি। তাকে ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়টি সঠিক নয়। এমনকি তাকে মারপিটের বিষয়টিও সঠিক নয়।
ছাত্রলীগ নেতা শরিফুজ্জামান শরিফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

দুর্গাপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, মামলার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছে। মামলাটি তদন্তাধীন আছে।

প্রসঙ্গত, দুর্গাপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজাহার আলী এর আগে গত বছর পৌর যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন টুটুলকে থানার ভিতরেই ধরে মারপিট করেন। এছাড়াও গড়ত কয়েক বছরে টেন্ডারবাজি, দখলবাজি থেকে শুরু করে নানা অপকর্মের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। একই অবস্থা শরিফুজ্জামান শরিফেরও। এই শরীফ দিনমজুর থেকেএখন কোটিপতি বনে গেছেন নানা অপকর্মের মাধ্যমে।

 

স/আর