দুর্গাপুরে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের স্বজনদের নাম ১০ টাকার চালে

ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
‘গরীব হয়েও ক্যুনো লাভ নাই, চেয়ারম্যান মেম্বারের লোক হলে কার্ড হবি। আমার এক কাটাও সম্পত্তি নাই, ম্যানষের জমিত ঘর কইরে আচি, কাম হলে গা খাওয়া জুটে, কাম না থাকলে না খ্যায়াই দিন পার করতে হয়। আবার আমারে কার্ডে নাম নাই, যারে দশ বিশ বিগে জমি আচে, তাদেরও কার্ড হছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমার কার্ড নাই।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের চৌবাড়ীয়া গ্রামের দিনমজুর শুকুর আলী।
অভিযোগ রয়েছে, এ ইউনিয়নে অধিকাংশ সাধারণ গরিব মানুষের নামে ১০ টাকা কেজির চালের তালিকায় নাম থাকলেও কার্ড হয়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের আত্মীয়-স্বজনদের নামে। যারা সম্পদশালী। আর এ নিয়ে বঞ্চিত হতদরিদ্র গত ১৬ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন।

 

ওই ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের চৌবাড়ীয়া গ্রামের জালাল হোসে সহ ৩০ জন হতদরিদ্র ব্যক্তি এ অবিযোগ করেন। এর আগে গত ১১ অক্টোবর পানানগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আজাহার আলীর বিরুদ্ধেও ১০ টাকা কেজির চালের কার্ড তৈরীতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয় হতদিরদ্ররা।
দুর্গাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে জানা যায়, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নে ৯১৯জন, কিশমত গনকৈড় ইউনিয়েনে ৯১৯জন, পানানগরে ৯১৯ জন, দেলুয়াবাড়ীতে ৯১৯ জন, ঝালুকায় ৯১৯ জন, মাড়িয়া ইউনিয়নে ৭৭০ জন এবং জয়নগর ইউনিয়নে ৯১৯ জনের তালিকা তৈরী করা হয়। উপজেলায় মোট ৬২৮৪ জন হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির এ তালিকা প্রস্তুত করে এরই মধ্যে চাল বিক্রিও হয়েছে অধিকাংশের কাছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাড়িয়া ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক তালিকা তৈরীতে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। তালিকায় লোক দেখানো দুই চারটি দরিদ্রদের নাম দিলেও অধিকাংশই নামই দিয়েছে সম্পদশালী বৃত্তবানদের। ৩-১০ বিঘা জমির মালিকদেরও তালিকায় নাম রয়েছে। যাদের মধ্যে আজিজুল মন্ডল কার্ড নম্বর ১, মহসিন খাঁন কার্ড নম্ব^র ১৬, সানোয়ার হোসেন কার্ড নম্বর ১৭।
তবে ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক দাবি করেন কার্ডধারীরা সবাই হতদরিদ্র। তাদের নিজ নামে কোনো সম্পত্তি নাই। থাকলে বাপের নামে সম্পত্তি রয়েছে।
অপরদিকে পানানগর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আজাহার আলী খাঁ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হতদরিদ্রদের তালিকায় নিজ ভাই সম্পদশালী আত্মীয় স্বজনদের নাম অন্তর্ভূক্তি করেছেন। পানানগর ইউপির হতদরিদ্রদের তালিকায় থাকা কার্ড নম্বর ৪২৮ ব্যাক্তিটি ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার আলী খাঁ’র আপন ভাই মোজাম্মেল খাঁ। তিনি নিজস্ব পাকাবাড়ীসহ ১০-১২ বিঘা জমির মালিক। ৪৬২ নম্বর কার্ডধারী ব্যাক্তি আবুল হোসেন শেখ তার নিকটাত্মীয়। ফ্লাটবাড়িসহ ২০ বিঘার উর্ধ্বে সম্পত্তির মালিক ৩৯২ নম্বর কার্ডধারী শামসুল ইসলামর চেয়ারম্যানের নিকটাত্মীয়। এছাড়াও চেয়ারম্যানের মামাতো ভাই বাবুল হোসেন, খালাতো ভাই নজরুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন বৃত্তবানের নাম রয়েছে ১০ টাকা কেজির চালের তালিকায়। যারা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগকর্মী বলে পরিচিত।
পানানগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজাহার আলী খাঁ’র সঙ্গেযোগাযোগ করা হলে তিনি তাঁর ভাইয়ের নামে কার্ড ইস্যু করার কথা স্বীকার করে বলেন, আত্মীয়-স্বজনদের নামে কার্ড ইস্যু করা যাবে না এমন কোনো আইন আমার জানা নাই। তারা যদি গরীব হয়, তাহলে তারাও এই চাল প্রাপ্য। তবে ফ্লাট বাড়ি ও সম্পত্তি থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুন্নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কিছু হতদ্ররিদ্র ব্যাক্তিরা পানানগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তালিকা তৈরীতে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। আমি এই বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স/আর