দুর্গাপুরে ইউনিয়ন আ.লীগের কমিটি নিয়ে ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে চলছে রাজশাহীর উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। তৃনমূলকে শক্তিশালী করতে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হলেও কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন না ত্যাগী নেতারা। অনেক ইউনিয়ন পর্যায়ে পকেট কমিটি করার অভিযোগ রয়েছে। এতে বর্তমান পক্ষপাতিত্ব করে যাদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে, তাতে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী না হয়ে আরো ঝিমিয়ে পড়বে এমনটাই মনে করছে রাজশাহীর তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তবে এবার উপজেলা নেতৃবৃন্দ তাদের পছন্দের লোকজনদের সভাপতি, সম্পাদক নির্বাচিত করতে বিধিব্যস্ত এমনটাই বলছে তৃণমূলের নেতাবর্মীরা।

জানা গেছে, গত ১৫ মার্চ দুর্গাপুর উপজেলার ২নং কিশমত গণকৈড় ইউনিয়নে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন সম্মেলন উপলক্ষে উজালখলসী মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে স্থানীয় এমপি, জেলা, উপজেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন শুরুতে ইউনিয়নের সভাপতি সম্পাদক নির্বাচন করার লক্ষ্যে ভোটাভোটির সিদ্ধান্ত হয়। নেতৃবৃন্দ জানান, ভোটের মাধ্যমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে দলের যেমন ভাবমুর্তি উজ্জল হবে, তেমনি যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত হলেও এ ইউনিয়নে ভোট বিহীন গুরুত্বহীন ব্যক্তিকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে
তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এদিকে এবার ২নং কিশমত গণকৈড় ইউনিয়নে সভাপতি পদে এ ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম সাইফুল ইসলাম, তাহেরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান ও নূর মোহাম্মদ প্রার্থী ছিলেন। এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন, ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও আব্দুল মজিদ মেম্বার।

সম্মেলনের দিন নিয়ম অনুযায়ী ৫জন প্রার্থীকে ১০ মিনিট করে সময় দেয়া হয় এক হওয়ার জন্য। কিন্তু প্রার্থীরা এক হতে না পারায় ভোটারদেরকে নিয়ে একটি কক্ষে প্রবেশ করেন নেতৃবৃন্দ। সেখানে ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার কথা ছিল। কিন্তু ভোটারের কাছ থেকে ভোট বা তাদের মতামত না নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ রুম থেকে বেরিয়ে আসেন নেতৃবৃন্দ। সেখান থেকে এসে ঘোষণা দেয়া হয় যে আজকে ফলাফল দেয়া সম্ভব হলো না, পরবর্তীতে জানানো হবে। কিন্তু গত রোববার (২০মার্চ) রাজশাহী থেকে এই ইউনিয়নের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে নূর মোহাম্মদকে আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বর্তমান এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদকে। রাজশাহী থেকে কমিটি ঘোষণার পর তৃণমূলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, তাদের মতামত না নিয়ে এভাবে রাজশাহী থেকে কমিটি ঘোষণা করা ঠিক হয়নি। কারণ যে কমিটি দেয়া হয়েছে এটি পকেট কমিটির সামিল। এই কমিটি দিয়ে দল সুসংগঠিত করা সম্ভব হবে না। যাকে সভাপতি করা হয়েছে তার
কোনো জনপ্রিয়তা নেই। এমনকি তিনি একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি। কিশমত গণকৈড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হলে এই কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করতে হবে। নইলে এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিরুপ প্রভাব পড়বে। এছাড়াও
সদ্য ঘোষিত সভাপতিকে বয়কট করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

এব্যাপারে দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন জানান, এই ইউনিয়নে যাকে সভাপতি করা হয়েছে তিনি একজন মাদকাশক্ত ব্যক্তি আমি জানি। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান নজরুল
ইসলামের লোক হওয়ার কারণে তাকে সভাপতি করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু কিশমত গণকৈড় ইউনিয়নে নয়, রাজশাহীর বেশিরভাগ ইউনিয়নে পকেট কমিটি হয়েছে। যা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরুপ প্রভাব পড়েছে। তবে দুর্গাপুর
উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সাথে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এব্যাপারে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন জানান, ইউনিয়নের কমিটি গঠনের জন্য জেলা উপজেলার নেতৃবৃন্দদের নির্দেশ দেয়া আছে। তারা কাউন্সিলের মাধ্যমে যোগ্য সভাপতি, সম্পাদক
নির্বাচিত করবেন। সম্মেলন স্থলে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা না করে রাজশাহীতে ঘোষণার বিষযে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমি জানিনা, যাদের দাযিত্ব দেয়া হযেছে তারা কেনো সেখানে ঘোষণা দিলেন না সেটা আমি জানিনা। তবে অভিযোগ থাকলে
খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এএইচ/এস