রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনের ঘটনায় একসঙ্গে দুই মেয়েকে হারিয়েছেন দুদকের সহকারী পরিদর্শক কবির হোসেন জুয়েল। এ ঘটনায় শোকে পাথর হয়ে পড়েছেন তিনি। মেয়েদের জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া দুই মেয়ে হলেন মেহেরা কবির দোলা (২৯) ও মাইশা কবির মাহী (২১)। বড় মেয়ে মেহেরা কবির দোলার কিছুদিন আগে বিয়ে হয়। তিনি আইএফআইসি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। আর ছোট মেয়ে মাহী স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সাইন্সের দ্বিতীয় সেমিস্টারে অধ্যায়নরত ছিলেন বলে জানা গেছে।
কবির হোসেন জুয়েল রাজধানীর সরকারি এজিবি কলোনীতে স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন। তিন মেয়ের মধ্যে মারা যাওয়া দুই মেয়ে বড় সন্তান। মর্মান্তিক এমন মৃত্যুর ঘটনায় দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ শোক প্রকাশ করেছেন।
একইসঙ্গে শোক প্রকাশ করেছেন দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (ডুসা) সভাপতি মশিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম। দুর্ঘটনার খবর শুনে দুদক চেয়ারম্যান, দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জুয়েলের কাছে ছুটে গেছেন।
মৃত দুই মেয়েকে রাজধানীর শাহজাহানপুরে কবরস্থানে দাফন হয়েছে বলে জানা গেছে। মেয়েদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় দোয়া চেয়েছেন তাদের বাবা সহকারী পরিদর্শক কবির হোসেন জুয়েল।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে ভবনটিতে আগুন লাগে। আগুন নেভানোর পর হতাহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। দগ্ধ ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ভবনটিতে ২টি লিফট ও একটি সরু সিঁড়ি ছিল। তবে জরুরি ফায়ার এক্সিট ছিল না। ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা ও লোকজন বের হওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে।
বেইলি রোডের যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেটি সাত তলা। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামে খাবারের দোকান রয়েছে। তৃতীয় তলায় একটি পোশাকের দোকান ছাড়া উপরের তলাগুলোতেও রয়েছে খাবারের দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় হয়। অনেকেই পরিবার নিয়ে সেখানে খেতে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভবনটি প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পাশাপাশি ক্রেনের সাহায্যে ভবনের সপ্তম তলা ও ছাদে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের নামিয়ে আনতে থাকেন তারা। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।