দুই বছর পর সিরিজ হারল বাংলাদেশ

সিল্কসিটিনিউজ ক্রীড়া ডেস্ক:

২০১৪ সালের নভেম্বরে শুরু হয়েছিল এই জয়যাত্রা। অবশেষে এসে থামল ২০১৬ সালের অক্টোবরে। টানা প্রায় দুই বছর পর ওয়ানডেতে কোনো সিরিজ হারল বাংলাদেশ। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারানো গেলেও পারা গেল না ইংল্যান্ডকে। আজ সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে গেল ৪ উইকেটে।
বাংলাদেশের দেওয়া ২৭৮ রানের লক্ষ্যটা এক রকম অনায়াসে ছুঁয়ে ফেলল ইংল্যান্ড। ৪৭তম ওভারের পঞ্চম বলে ইংল্যান্ড জিতল বটে, তবে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের সময় একবারও মনে হয়নি, ম্যাচটা তারা হারতে পারে। জিততে হলে চট্টগ্রামের এ মাঠে রান তাড়া করে জেতার নতুন রেকর্ড গড়তে হতো। কন্ডিশন এতটাই ইংলিশদের দিকে হাত মেলে দিল, বাংলাদেশের বোলাররা হয়ে গেল নির্বিষ। ইংল্যান্ড রেকর্ড গড়েই জিতল ম্যাচ। প্রতিপক্ষের মাঠে তৃতীয় বৃহত্তম রান তাড়া করা জয় এটি ইংল্যান্ডের জন্য।
বাংলাদেশ আক্ষেপ করতে পারে, ব্যাটিংয়ে আরও ২০-৩০ রান হয়তো বেশি তোলার সুযোগ ছিল। এ নিয়ে আক্ষেপ না হলেও বাংলাদেশের নিশ্চিত আক্ষেপ হবে সিরিজের প্রথম ম্যাচ নিয়ে। ৫২ বলে ৩৯ রান দরকার, হাতে ৬ উইকেট-এই সমীকরণও মেলাতে পারেনি বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ের জন্য চট্টগ্রাম পর্যন্ত তো আসতেই হয় না!
তবু আক্ষেপ ঝেড়ে দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশকে আজ ব্যাটিংয়েও বেশ উজ্জীবিত মনে হয়েছে। কিন্তু তখনো বোঝা যায়নি, ম্যাচটা এত সহজে জিতে যাবে ইংল্যান্ড! টানা ছয়টি সিরিজ জেতার পর অবশেষে হারের মুখ দেখতে হলো মাশরাফি বিন মুর্তজার দলকে। এই ম্যাচেই মাশরাফি বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট (২১৬টি) নেওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। কিন্তু অধিনায়কের বিমর্ষ মুখটাই দেখতে হলো। টেস্টে মাশরাফি থাকছেন না। কিন্তু তাঁর লড়াইয়ের প্রেরণা খুব দরকার। ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হবে দুই টেস্টের সেই সিরিজ।
কিন্তু গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হাতেই বিদায় নেওয়ার পর ঢেলে সাজানো ইংল্যান্ডের তরুণ দলটা যেভাবে শেষ টেনে দিল, তাতে টেস্ট সিরিজেও মানসিকভাবে এগিয়ে থাকবে তারা। আর শক্তির বিচারে এগিয়ে তো আছেই। বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। টেস্টে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেওয়াই হবে পরবর্তী সিরিজে হাথরুসিংহের মূল মাথা ব্যথা। দাওয়াই খুঁজতে হবে কোর্টনি ওয়ালশকে। যদিও পুরো সিরিজ থেকে একটা ব্যাপার পরিষ্কার, ব্যাটিং উইকেট দিয়ে পারা যাবে না ইংল্যান্ডের সঙ্গে। পেস দিয়েও নয়। স্পিনারদের পছন্দের ধীর উইকেট দরকার। আবার ইংলিশ স্পিনাররাও যেন বাড়তি সুবিধা পেয়ে না বসে।
অবশ্য বাংলাদেশের বোলারদের এ ম্যাচে যতটা নির্বিষ মনে হয়েছে, আদতে তারা তা নন। ম্যাচ শেষে মাশরাফিও দুষলেন শিশিরকে। ভেজা বলে স্পিনাররা সুবিধা করতে পারেননি। তা ছাড়া বল উইকেটে স্কিডও করেছে। তারপরও ২৭৮ রান তাড়া করা সব সময়ই কঠিন মানসিক এক চ্যালেঞ্জ। শুরু থেকেই ঠান্ডা মাথায় সেই কাজটি করেছে ইংলিশরা। দলীয় ৬৩ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর একটু সময়ের জন্য মনে হয়েছিল, আশা আছে বাংলাদেশের। কিন্তু সেই আশা শিশিরের মুছে গেছে।
১ উইকেটে ১২৭, ২ উইকেটে ১৭২ এমনও দেখািচ্ছল ইংলিশ স্কোর। এ ম্যাচে তো বটেই, সিরিজেও বাংলাদেশের সফলতম বোলার মাশরাফি একটা শেষ চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু পারেননি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৭/৬ (তামিম ৪৫, ইমরুল ৪৬, সাব্বির ৪৯, মাহমুদউল্লাহ ৬, মুশফিক ৬৭*, সাকিব ৪, নাসির ৪, মোসাদ্দেক ৩৮; রশিদ ৪/৪৩, স্টোকস১/২৪, আলী ১/৪২)
ইংল্যান্ড: ৪৭.৫ ওভারে ২৭৮/৬ (ভিন্স ৩২, বিলিংস ৬২, ডাকেট ৬৩, বেয়ারস্টো ১৫, স্টোকস ৪৭*, বাটলার ২৫, আলী ১, ওকস ২৭*; মাশরাফি ২/৫১, শফিউল ২/৬১, সাকিব ০/৪৫, তাসকিন ০/৪৬, নাসির ১/৫৩, মোসাদ্দেক ১/২২)
ফল: ইংল্যান্ড ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ইংল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে জয়ী।

সূত্র: প্রথম আলো