দুই কৃষকের আত্মহত্যা : স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

 

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় গত ২৩ মার্চ ধানের জমিতে পানি না পেয়ে দুই আদিবাসী কৃষক কীটনাশক পান আত্মহত্যার ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চেয়ে ও বিএমডিএর গভীর নলকূপ পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আদিবাসীরা। রক্ষগোলা সমন্বয় কমিটির আয়োজনে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সোমবার (১১ এপ্রিল) রাজশাহী জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।

স্মারকলিপিতে রক্ষগোলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি সরল এক্কা, উপদেষ্ঠা প্রসেন এক্কা, সিসিবিভিওর প্রতিনিধি আরিফ, মৃত কৃষক অভিনাথ মার্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম, মৃত রবি মার্ডির বড় ভাই সুশীল মার্ডি ও রক্ষগোলা সমন্বয় কমিটির সদস্য রঞ্জিত পাহাড়িয়ার স্বাক্ষর রয়েছে।

পরে তারা আদিবাসীদের অংশ গ্রহণে বিশাল মিছিল নিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) প্রধান কার্যালয়ের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। তবে বিএমডিএর চেয়ারম্যান অফিসে না থাকায় বিএমডিএর সচিব ইকবাল হোসেনের সাথে দেখা করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর যে স্মারকলিপি ও দাবি তা আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন।

আদিবাসীরা এই ঘটনায় সুষ্ঠ বিচার হস্তক্ষেপ কামনা করে স্মারকলিপিতে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- গত ২৩ মার্চ বিকেলে পেদাগাড়ী উপজেলাধীন নিমঘুটু সপ্তাল পল্লীর অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি ধানের জমিতে সেচের পানি না পেয়ে এবং বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের অসদাচারণের ফলে বিষপানের করণে ওই দিনই অভিনাথ মার্ডি মৃত্যু বরণ করেন। আর তার ভাই রবি মার্ডি ২৫ মার্চ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হৃসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের নামে দীর্ঘদিন ধরেই সেচের পানি প্রদানের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ থাকলেও তিনি সেগুলোর কোন তোয়াক্কায় করেননি। উপরস্তু সেই গভীর নলকূপের আওতাধীন চাষযোগ্য জমির অর্ধেক কৃষক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি হওয়া সত্ত্বেও বরাবরই তাদের দেরীতে গভীর রাতে সেচের পানি প্রদান করা হতে। আত্মহত্যার পূর্বে অভিনাথ ও রবি মার্ডি প্রায় ১২-১৫ দিন ধরে ধানের জমিতে পানি সেচের কথা নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতকে বলে আসছিলো কিন্তু তাদের জমিতে পানি প্রদান করা হয় নি।

গোটা বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচের পানি গভীর নলকূপ অপারেটরদের কব্জায়, যাদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে প্রায় ৪ লাখ কৃষক। নলকূপ অপারেটর নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ স্বার্থবাদী চক্র ও দলীয় সমর্থন বিবেচনায় রাখে যার ফলে নলকূপগুলোর পানি বণ্টন নীতি দলীয় নেতা-কর্মীদের স্বেচ্ছাচারিতার অংশ হয়ে গেছে, এক্ষেত্রে এসকল অসৎ নলকূপ অপারেটররা যে ক্ষমতাসীন দলের নামের অপব্যবহার করছে তাতে কোন সন্দেহ নেই বলেও তারা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়- ডীপ টিউবয়েলের কোন কিছু নষ্ট হলে ৫০০ টাকার খরচের জন্য কৃষকদের কাছে থেকে ৫০০০ টাকা আদায় করতো সাখাওয়াত। আমাদের পানি উত্তোলনের কার্ড থাকলেও অপারেটর তার নিজের কার্ড ব্যবহারে বাধ্য করতো। বেশি টাকা আয়ের জন্য নির্ধারিত স্কিমের চেয়ে দ্বিগুণ জমিতে সেচ দিত। ডীপ অপারেটর নীতিমালার বাইরে জমি প্রতি টাকা ও ধান উত্তোলন করতো। ডীপ অপারেটরের মতের সাথে সম্মতি না দিলে সেচের পানি দেয় না। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি কৃষকদের ক্ষেত্রে গভীর রাত ছাড়া সেচের পানি প্রদান করে না। ডীপ অপারেটরের নিজস্ব আবাদী জমিতে জোরপূর্বক কম মজুরিতে কাজ করাতে বাধ্য করতো।

আদিবাসীদের বর্গা চাষের জন্য ১০ বিঘা জমি থাকলে পানি না দেওয়ার হুমকি দিয়ে ২ বিঘা জমি জোর পূর্বক বর্গা চাষের জন্য কেড়ে নিত বলেও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া স্মারকলিপিতে নিম্নলিখিত দাবিগুলো তুলে ধরা হয়।

অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডির আত্মহত্যায় প্ররোচণা প্রদানকারী সাখাওয়াত হোসেনকে বিচারের মাধ্যমের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ কার্যক্রমের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের জন্য বিএমডিএ কর্তৃপক্ষকে তদন্তের আওতায় এনে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলে ডীপ পরিচালনার ক্ষেত্রে কৃষকবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং সুষ্ঠু তদারকির বিধান রাখতে হবে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে ডীপ অপারেটর হিসেবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের ও প্রপ্তিক কৃষকদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের ও প্রন্তিক কৃষকদের পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচের পানির অভিগম্যতার সুযোগ নিশ্চিতকল্পে নীতিমালায় সুস্পষ্ট বিধান থাকতে হবে।

এএইচ/এস