থোকায় থোকায় আপেল ঝোলে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

ভিনদেশি হলেও সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হিসেবে বহুকাল ধরেই এ দেশের মানুষের কাছে অতিপরিচিত ও প্রিয় একটি ফল আপেল। তিন বছর আগে পরীক্ষামূলক ৩৫টি আপেলের চারা রোপণ করেছিলেন সিরাজগঞ্জের বোরহান উদ্দিন। সফলতা পাওয়ায় এখন দেড় বিঘা জমিজুড়ে তার বাগান। বাগানের গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে আপেল। স্বাদও ভালো। বিদেশি ফলের দেশি বাগানের কথা প্রচার হতে সময় লাগে না। বোরহানের এই সফলতা দেখে এলাকাবাসীর মধ্যেও আপেল চাষে উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বড়হর ইউনিয়নের খাসচর জামালপুর গ্রামে তিন বছর আগে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত আড়াই শতক জমিতে ৩৫টি আপেলগাছের কলম চারা রোপণ করেন বোরহান। সেখানে সফল হওয়ার পর এখন বাগান বাড়াচ্ছেন। তিনি এই আপেল বাগানের নাম দিয়েছেন ‘হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্স আপেল অর্চার্ড’।

বাগান মালিক রোবহান উদ্দিন জানান, চারা রোপণের ১১ মাস বয়সেই গাছগুলো বেশ বড় হয়ে ওঠে। ফুলে ফুলে ভরে যায় ৩০টি গাছ। ধীরে ধীরে গাছে ফল ধরতে থাকে এবং তা বড়ও হয়ে ওঠে। বিদেশি ফলের দেশি বাগানের কথা প্রচার হতে সময় লাগে না। দেখতে আসতে থাকেন মানুষ। এই চাষের খবরে দূরের জেলা থেকেও মানুষ এসে চাষ পদ্ধতি জানতে আসছেন। বাংলাদেশে এই ফলের যে চাষ করা সম্ভব, সেটি জেনে অবাক হচ্ছেন অনেকেই।

ভারতের হিমাচল প্রদেশের টিস্যু কালচার ল্যাবে আপেল চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন বোরহান। দেশের মাটিতে ফলটি ফলে কিনা, সেটি পরীক্ষা করতেই রোপণ করেন চারাগুলো। গাছগুলো বড় হয়, ফুল আসে, ফল ধরে। সে ফলের মিষ্টতাও ভালো। পরে ২০১৯ সালে দেড় বিঘা জমিতে পাঁচ জাতের ২০০ কলম (প্লান্ট) চারা রোপণ করেন। আগামীতে বাগান আরও বড় করার ইচ্ছা আছে বোরহানের। এসব জাতের মধ্যে রয়েছে আন্না, ডোবশেক গোল্ডেন, এইচআরএমএম-৯৯, টফিক সুইট ও গ্রিনিস মিস। এসব জাতের কলমও (প্লান্ট) তিনি হিমাচলের হর্টি কার্লচার বাগান থেকে সংগ্রহ করেন।

বোরহান উদ্দিন আরও জানান, বাড়িতে আপেলের বাগান তৈরির ব্যাপারে তিনি হিমাচল প্রদেশের ননি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়জন গবেষক শিক্ষকের পরামর্শ নেন। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, কানাডা, আমেরিকা এবং ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের হর্টি কার্লচার ডিভিশনের গবেষকদের সঙ্গেও অনলাইনে মতবিনিময় করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

প্রথমে গোবর সার দিয়ে চারাগুলো রোপণ করেন বোরহান। পরে ইউরিয়া, পটাশ, জিপসাম, দস্তা, বোরণ ও ম্যাগনেসিয়াম সার গাছে প্রয়োগ করেন।গত বছর বাগানে ৩০টি গাছে ফল ধরেছিল। ফেব্রয়ারি মাসের শেষের দিকে গাছে ফুল ধরে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে আপেলগুলো গাছে পরিপক্ব হয় এবং এ সময় গাছ থেকে আপেল সংগ্রহ করেন। তার বাড়িতে মধ্যম পর্যায়ে গাছগুলো এখন ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু হয়েছে। গত বছরের জুন-জুলাইয়ে তিনি প্রথমবার ৩০ থেকে ৪০টি আপেল তোলেন। গাছ পরিপূর্ণ হলে প্রতিটি গাছে এক থেকে দেড় মণ করে আপেল তুলতে পারবেন বলে আশাবাদী বোরহান।

এর আগে দেশের সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় অনেক মানুষ শখ করে বাড়ির ছাদ বা জমিতে আপেলগাছ রোপণ করেন। অল্প বিস্তর ফলও পেয়েছেন বলে জেনেছেন বোরহান। তবে বাগান তার আগে কেউ করেনি বলে দাবি তার।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমি বলেন, বোরহান উদ্দিন তার বাড়িতে ও জমিতে আপেল চাষ করার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি বিভাগ তার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। সহকারী উপজেলা কৃষি অফিসার হিরণ আলীকে সার্বক্ষণিক বোরহান উদ্দিনের আপেল বাগান দেখাশোনা ও পরামর্শের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

 

সূত্র: আমাদেরসময়