থেমে নেই গায়েবি মামলা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পুলিশ সদর দফতরের কড়া বার্তার পরও ‘গায়েবি’ মামলা করা থেমে নেই। মামলায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আসামি করার ক্ষেত্রে ভালোভাবে যাচাই করার নির্দেশনা থাকলেও তা প্রতিপালন করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র মতে, গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে পুলিশ সদর দফতর থেকে ইউনিটপ্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এতে বলা হয়, পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। মামলা করা বা আসামি করার ক্ষেত্রে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। ওই নির্দেশের পর কয়েকদিন রাজনৈতিক মামলা করার ক্ষেত্রে সতর্ক ছিল মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। সম্প্রতি আবারও শুরু হয়েছে এমন মামলা করা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার যুগান্তরকে বলেন, গত এক মাসে সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪ হাজার ৯৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলোর এজাহারে আসামি হিসেবে ৮৪ হাজার ৮৪০ জনের

নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ৭৩০ জনকে। এসব মামলায় গত এক মাসে পুলিশ ৪ হাজার ৩১৯ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। রিজভী বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর বিএনপির সমাবেশের দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরদিন হাতিরঝিল থানায় দেয়া হয়েছে ‘ভুতুড়ে’ মামলা। এ বিএনপি নেতার অভিযোগ, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে পুলিশ অনেক ‘আজগুবি’ এবং ‘গায়েবি’ মামলা করছে। কোনো ঘটনা না ঘটলেও মামলা করছে। গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি, বিদেশি অবস্থানকারী, এমনকি মৃত ব্যক্তিকেও এসব মামলায় আসামি করা হচ্ছে।

বিএনপি নেতারা জানান, মামলা করার মতো কোনো ঘটনা না ঘটলেও ১ অক্টোবর হাতিরঝিল থানায় কেন্দ্রীয় ১০ নেতাসহ ৫৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকেও আসামি করা হয়। এজাহারে বলা হয়, ৩০ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলীয় সমাবেশে তারা ‘সরকারবিরোধী উসকানিমূলক’ বক্তব্য দিয়েছেন। ওই দু’জনসহ কেন্দ্রীয় ১০ নেতার উসকানিমূলক বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে রাতে দলীয় অন্য নেতাকর্মীরা মগবাজার রেলগেট এলাকায় পুলিশকে মারধর করে। তারা গাড়ি ভাংচুরসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে মগবাজার এলাকায় কোনো নাশকতামূলক ঘটনা ঘটেনি। অন্যদিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও রুহুল কবির রিজভী সমাবেশেই ছিলেন না। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ২৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। তিনি এখনও ঢাকায় ফেরেননি। অন্যদিকে রুহুল কবির রিজভী ওইদিন সারাদিন পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ছিলেন।

এ বিষয়ে রিজভী যুগান্তরকে বলেন, আমি এবং আমীর খসরু যেহেতু সমাবেশেই ছিলাম না, সেহেতু সেখানে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগও ভিত্তিহীন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের কাছে আষাঢ়ে গল্পের একটা ফরমেট (কাঠামো) রয়েছে। সময়মতো সেগুলো ব্যবহার করা হয়। তিনি আরও জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে থানা, ওয়ার্ড, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের সব নেতাকে ‘গায়েবি’ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও রুহুল কবির রিজভীকে আসামি করার বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিরঝিল থানার ওসি আবু মো. ফজলুল করিম  কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। রাজধানীর অন্যান্য থানায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়ার এখতিয়ার আমার নেই।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি সোহেল রানা বুধবার   বলেন, ‘গায়েবি’ মামলা বলতে কোনো মামলা আইনি ভাষায় নেই। ঘটনা না ঘটলেও যেসব মামলা হয় সেগুলোকে মিথ্যা মামলা বলা যেতে পারে। দেশের কোথাও যাতে কোনো মিথ্যা মামলা করা না হয়, এমনকি হয়রানিমূলকভাবে যাতে কাউকে আসামি না করা হয়- সে বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে সব ইউনিটপ্রধানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরও যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের মাধ্যমে তদন্ত করে ওইসব ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়। কেউ যদি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা অমান্য করে তাহলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

মিথ্যা বা গায়েবি মামলা করার কারণে গত এক মাসে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে এআইজি বলেন, এ বিষয়ে সবশেষ তথ্য আমার জানা নেই।