ত্রিপুরায় বিজেপি একটা দানবীয় দল চালাচ্ছে: মমতা

সম্প্রতি ত্রিপুরা সফরে গিয়ে হামলার শিকার হতে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জিসহ দলের কয়েকজন যুব নেতা-নেত্রীকে। ওই ঘটনার পিছনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’এর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন তৃণমূল প্রধান ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

তার অভিমত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই এই হামলা হয়েছে। না হলে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের এতো সাহস হয় না। ত্রিপুরায় আক্রান্ত অভিষেকের নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মমতা।

গত ২ আগষ্ট সোমবার ত্রিপুরায় অভিষেকের গাড়ি বহরে হামলার পর গত ৭ আগষ্ট শনিবার ওই রাজ্যের ধলাই জেলার আমবাসায় দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু ভট্টাচার্য, ত্রিপুরার দায়িত্বপ্রাপ্ত যুব তৃণমূল নেত্রী জয়া দত্ত ও সুদীপ রাহা। এরপরই নিরাপত্তার দাবিতে খোয়াই থানার সামনে বিক্ষোভে বসেন হামলার শিকার নেতা-নেত্রীরা। কিন্তু কোভিড স্বাস্থ্য বিধি অমান্য করার অভিযোগে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে ওই তিন নেতা-নেত্রীসহ তৃণমূলের ১৪ জনকে গ্রেফতারও করা হয়। আর তাদের ছাড়িয়ে আনতেই ত্রিপুরায় উড়ে যান মমতার ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জি। এরপর রবিবার ত্রিপুরার আদালত থেকে জামিন পেয়ে রাতেই বিশেষ বিমানে আগরতলা থেকে কলকাতায় ফেরেন দেবাংশু-সুদীপ-জয়া’রা। পরে রাতেই কলকাতা বিমানবন্দর থেকে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয় জয়া-সুদীপকে।

সোমবার সকালের দিকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত যুব তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুদীপ রাহা, জয়া দত্তকে দেখতে যান মমতা ব্যানার্জি, আর ফোনে দেবাংশুর সাথে কথা বলেন তিনি। পরে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তোপ দাগেন মমতা। তিনি বলেন ‘ত্রিপুরাতে দেবাংশু ওরা গিয়েছিল। এই ছাত্র-ছাত্রীদের যেভাবে মারধর করা হয়েছে, পাথর ছোঁড়া হয়েছে, গুলি চালানো হয়েছে, গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে… আশ্চর্যের বিষয় পুলিশের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে মারা হয়েছে। মারধরের পর ৩৬ ঘণ্টা কোন চিকিৎসা করতে দেওয়া হয়নি। এসময় এক গ্লাস পানিও তাদের খেতে দেওয়া হয় নি। ওরাই মারলো, আবার ওরাই আটক করলো।’

এরপর মমতার অভিযোগ ‘বিজেপি ত্রিপুরায় একটা দানবীয় দল চালাচ্ছে। বিজেপির যে কোন রাজ্যেই এই অবস্থা চলছে। এনআরসি’এর সময় আসামে আমাদের প্রতিনিধি দলকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে গণধর্ষণের সময় আমাদের প্রতিনিধি দলকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি ত্রিপুরাতেও অভিষেকের গাড়িতে হামলা চলেছে। ও প্রশাসনের কাছ থেকে একটা বুলেট প্রুফ গাড়ি পেয়েছিল, ওটা যদি সাধারণ গাড়ি হতো ভেঙে চুরমার হয়ে, অভিষেকের মাথাটাও ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে পারতো এবং এর সবটাই পুলিশের সামনে হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এই সবকিছুই কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে হয়েছে। তা না হলে ত্রিপররার মুখ্যমন্ত্রীর এত সাহস হতে পারে না। এমনকি অনেক জায়গায় বলে দেওয়া হয়েছে যাতে এদের প্লেনের টিকিট না দেওয়া হয়, কোন প্লেন ভাড়া না দেওয়া হয়। কোন হেলিকপ্টার ভাড়া না দেওয়া হয়। নানা পরিকল্পনা করা হয়েছে। এমনকি অভিষেক যদি প্লেনে যায়, তার পাশে পাঁচটা আসন বুক করে পাঁচটা গুন্ডা তুলে দেওয়া হচ্ছে। তাই ওর জীবন খুব বিপদের মধ্যে আছে। আমি মনে করে এই ঘটনার প্রতিবাদে সমস্ত শিক্ষার্থী সমাজের গর্জে ওঠা উচিত।’

এদিকে ত্রিপুরায় দলের যুব নেতা-নেত্রীদের ওপর হামলার আঁচ গিয়ে পড়েছে ভারতের সংসদেও। সোমবার দিল্লিতে সংসদের গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূলের সাংসদরা। নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী এদিন সংসদ শুরুর আগে থেকেই গান্ধী মূর্তির পাদদেশে জমায়েত হন তারা। মুখে কালো মাস্ক পরে এবং হাতে পোস্টার নিয়ে প্রতিবাদে সামিল হন সুদীপ ব্যানার্জি, কল্যাণ ব্যানার্জি, ডেরেক ও ব্রায়েন, সৌগত রায়, জহর সরকার, সুখেন্দু শেখর রায়, শতাব্দী রায়, অর্পিতা ঘোষের মতো সাংসদরা।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন