তেল নেই রাসিকের মশা মারা কামানের !

নিজস্ব প্রতিবেদক
মশা মারতে কি কামান লাগে ? লাগতেও পারে। যদি মশার সে উৎপাত বেশি থাকে তাহলে হয়তো বা লাড়তে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ফগার মেশিনের তেলের (ওষুধ) অভাবে বন্ধ হয়ে আছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মশা নিধন কার্যক্রম। ফগার মেশিনের ওষুধ নেই এমন কারণে কেটেছে মাসের পর মাস। তারে পরে ব্যবস্থা করতে পারে মেশিনটির তেল। তাই মশার কামড় খেয়েই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবযাপন করতে হচ্ছে নগরবাসীদের।

মশার কামড়ে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে নগরবাসী। ভুগছে বিভিন্ন মশাবাহিত রোগেও। ঘরে-বাইরে, রেস্তোরাঁয়, অফিসে, স্কুল-কলেজে কোথায় নেই মশা। রাত্রে মশার কামড়ে ঘুমাতেও পারছে না মানুষজন। মশার উপদ্রব এমন বেড়েছে যে, দিনের বেলাতেও ঘুমাতে মশারি টানাতে হচ্ছে মানুষদের। অথচ গত এক বছর ধরে মশা নিধনে কোনো ধরনের কার্যক্রম নেই সিটি করপোরেশনের।

নগরবাসী বলছে, সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে অবহেলার কারণে মশার এমন উৎপাত সহ্য করতে হচ্ছে। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, তেলের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে ফগার স্প্রে মেশিন বন্ধ হয়ে আছে। সরকার থেকে তেল কেনার কোনো বরাদ্দও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দ্রুতই মশা নিধনের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে রাসিক।

অথচ মশার উপদ্রবে বেড়েছে জনগণের ভোগান্তি। দীর্ঘদিন ধরে নেই মশা নিধনের কোনো কার্যক্রম। রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা আশরাফুল হক বলেন, ফগার মেশিনের তেলের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে মশা নিধন কার্যক্রম। মশা নিধনের জন্য প্রায় ২৫ লাখ টাকার তেল কেনা হচ্ছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই নগরীতে মশা নিধন কার্যক্রম শুরু হবে।

অন্যদিকে, মশার কামড়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। মশার কারণে কোন স্থানে একদণ্ড স্থির হয়ে দাঁড়ানো সম্ভব হচ্ছে। সব জায়গায় মশার উৎপাত। এর কমতি নেই রাজশাহী মেডিকেল হাসপতালেও। ওয়ার্ডগুলোর ভেতরে ও বাইরে মশার কামড়ের জ্বালায় টেকা যায় না। মশার কামড়ে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে রোগীরা। রাসিকের মশক নিধন কার্যক্রম বন্ধের কারণে মশার জীবাণুবাহী রোগের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে নগরীর প্রায় আট লাখ মানুষ।

নগরীর আলুপট্টি এলাকার বাসিন্দা বিজয় জানান, শীত শেষে গরম নামে অনেক দ্রুত। আর গরমে দরজা-জানালা খুলে রাখা হয়। কিন্তু দরজা-জানালা খোলা রাখলেই মশার কারণে বাসায় অবস্থান করা কষ্টকর হয়ে যায়। দিনের যে সময়ই হোক মশার জন্য কয়েল জ্বালিয়ে আবার সন্ধ্যার পর মশারি টাঙিয়ে বসে থাকতে হয়। ছেলেমেয়েরা এখন পড়াশোনা করে খাটে মশারির ভেতরে।
জহুরুল ইসলাম জানান, বাসায় কয়েল জ্বালালেও মশার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। শুধু বাড়িতে নয় অফিসেও মশার জ্বালা। অ্যারোসল ও কয়েলে কাজ হয় না। আবার চিকুনগুনিয়া হয়ে যায় কি না এই আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বেশিরভাগ ড্রেনগুলো অপরিষ্কার। অথচ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য নেই তেমন কোনো কার্যক্রম। এই কারণে নগরীজুড়ে বেড়েছে মশার দাপট। কয়েল কিংবা অন্য কোনো উপায়েও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই মিলছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মশার কামড়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করতে সমস্যা হচ্ছে। আর এসব মশা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সময়ের সবচেয়ে আলোচিত রোগ চিকনগুনিয়ার।

চিকিৎসকরা বলছেন, রাজশাহীতে মশা নিধন বন্ধ থাকায় জাপানি এনকেফেলাইটিস রোগের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। এছাড়া চিকনগুনিয়া রোগ হয় এডিস মশা থেকে। আর এনকেফেলাইটিস হয় কিউলেক্স মশা থেকে। রাজশাহীতে এ দুই ধরনের মশাই আছে। এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে-জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথা ও হাড়ে ব্যথা।

রাজশাহীর বারিন্দ মেডিকেলে কলেজের মেডিকেল অফিসার (অর্থপেডিকস) শফিউল আলম বলেন, আমাদের বাড়ির আশেপাশের ফুলের টব, নারিকেলের খোসা ও এসিতে পানি জমতে দেয়া যাবে না। এসব স্থানে মশার বংশবৃদ্ধি ঘটে। আমরা মশা তাড়াতে বিভিন্ন কয়েল বা অ্যারাসল ব্যবহার করে থাকি। এগুলোও স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকর। এখানে সিটি করপোরেশন বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তারা ফগার মেশিনের সাহয্যে মশা নিধন করতে পারে।

রাসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, রাজশাহীতে খুবই মশা কম। তিনি গত কয়েকদিন আগে ঢাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে প্রচুর মশা। সেই তুলনায় নগরীতে মশা কম।

 

স/আ