তৃণমূল নেতাদের জনপ্রিয়তা দেখতে চায় আ.লীগ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

স্থানীয়ভাবে নিজস্ব বলয় তৈরি করে কিংবা দলের প্রভাবশালীদের ‘বিশেষ আশীর্বাদ’ নিয়ে অতীতে অনেক অজনপ্রিয় নেতাও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ভাগিয়ে নেন। এমনকি ‘বিশেষ আশীর্বাদ’ কাজে লাগিয়ে অনেকে জয়লাভও করেন। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্তে দলটির সেই সব ‘আশীর্বাদপুষ্ট’ নেতা পড়েছেন টেনশনে। এর বিপরীতে ‘স্থানীয় বলয়’ ভেদ করে কেন্দ্রের সুদৃষ্টি কাড়তে না পারা জনপ্রিয় নেতাদের মধ্যে বইছে আনন্দধারা। আবার এমনও দেখা গেছে, যথেষ্ট জনপ্রিয়তা না থাকার পরও স্থানীয় কোন্দলের কারণে অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হতেন। এই তিন পক্ষের ‘কাড়াকাড়িতে’ অনেক

সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। এবার এসব পরিস্থিতি এড়িয়ে আওয়ামী লীগ চাচ্ছে, প্রকৃত জনপ্রিয় নেতারাই স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি হিসেবে জয়লাভ করুক।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, মূলত বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত, স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উৎসবমুখর করে তোলা এবং বিগত সংসদ নির্বাচন ও অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সহিংসতা বিশ্লেষণ করে আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীক প্রদান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, স্থানীয়ভাবে দলীয় বিভেদ এবং জাতীয় নির্বাচনপরবর্তী কোন্দল আরও বাড়তে পারার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া নিজ দলের কোন্দলের সুযোগ নিতে পারে বিএনপি বা অন্য কোনো দলের প্রার্থীরা। এমন বাস্তবতা সামনে রেখেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ৮ মে ১৫২টি উপজেলায় প্রথম ধাপে নির্বাচন হবে। গতকাল পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণার আগেই ভোটের তারিখ জানিয়ে দেওয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে কাজ শুরু করেন।

উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বা প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অনেকে দলটির জন্য চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করছেন। তবে এটাকে নির্বাচনে প্রতিযোগিতার নামে সংঘাতে জড়ানো বা কোনো অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে দেরি হবে না বলেও হুশিয়ারি রয়েছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তৃণমূল নেতা ও নবনির্বাচিত দলীয় এমপি এবং দল অনুমোদিত স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন। কেউ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ভুল করবেন না বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। গত বুধবার কয়েকজন কবি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সিটি করপোরেশনের মেয়র, এমপি, তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে গণভবনে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানেও ঐক্যবদ্ধ থাকার বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে কথা বলেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল রাজনীতির মাঠ সরগরম করে রাখছেন প্রার্থীরা। শোডাউন, বৈঠক, কর্মিসভা, পথসভা, মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন তারা। এবার স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ও এমপির চেয়ে জনগণের সুদৃষ্টির দিকে বেশি মনোযোগ উদীয়মান প্রার্থীদের। অন্যদিকে পুনরায় যারা প্রার্থী হচ্ছেন তারা স্থানীয় বলয় তৈরি করেই ফের নির্বাচিত হতে চান। ফলে নতুন-পুরাতনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত হচ্ছে কোথাও কোথাও। সামনে আরও বেশি হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। এ বিষয়টিকে আমলে নিয়েই যেসব এলাকার চিত্র নেতিবাচক, সেসব এলাকার নেতাদের পর্যায়ক্রমে ঢাকায় ডেকে পাঠানো হচ্ছে। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা কথা বলবেন এবং দলীয় হাইকমান্ডের বার্তা পৌঁছে দেবেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার ভাষ্য, উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে দেশের বেশকিছু এলাকায় দ্বিধাবিভক্তি লক্ষ করা গেছে। বিএনপি নির্বাচনে না আসার কথা বললেও সারাদেশের বেশ কিছু স্থানে তাদের দলের প্রার্থীদের শোডাউন দেখা যাচ্ছে। ফলে দলে এই দ্বিধাবিভক্তি না কাটাতে পারলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নেবে। এই বোধ থেকেই তৃণমূলকে পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রে ডাকা হচ্ছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দলে যে সিদ্ধান্ত আছে, এতে মনে হয়েছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কার কতটা জনপ্রিয়তা তা যাছাই-বাছাইয়ের উৎকৃষ্ট সুযোগ। সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থীই জনপ্রতিনিধি হয়ে আসবে। নির্বাচন উৎসবমুখর হবে, অংশগ্রহণমূলক হবে। এই কারণ থেকেই এটা করা (প্রতীক ছাড়া নির্বাচনের সিদ্ধান্ত) হয়েছে। এতে দলে বিভাজন বা দ্বন্দ্ব- সেটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আংশিক হলে হতে পারে। তবে তা নিরসনের জন্য নেতৃবৃন্দ ব্যবস্থা নেবেন অবশ্যই।’

উপজেলা নির্বাচনে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কিনা জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি বলেন, ‘আমরা তো দলীয় প্রতীক দিয়ে কোনো নির্বাচন করছি না। সুতরাং ওই অর্থে কোনো চ্যালেঞ্জ আমি দেখি না। আমরা শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। যে নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবে। জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করুক সেটা আমরা চাই।’

দলীয় কোন্দল বৃদ্ধির শঙ্কা বাড়বে কিনা জানতে চাইলে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দলের বিরুদ্ধে দল, নৌকার বিরুদ্ধে নৌকা যেন না হয় সে কারণেই দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছি না। তাতে এলাকাভিত্তিক জনপ্রিয়তায় প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রতি কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে। সেখানে কোনো সংঘাত হয়নি, রক্ত ঝরেনি।’

উপজেলা নির্বাচনে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন না দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরাও। কথা হয় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম ও সুজিত রায় নন্দীর সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, এত আলোচনা-সমালোচনার পর জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেল। বিএনপিবিহীন ওই নির্বাচনে ভোট কাস্টিং, অংশগ্রহণমূলক করাসহ নানা চ্যালেঞ্জ ছিল। সেটিও ভালোভাবে সম্পন্ন হয়ে গেছে। সুতরাং স্থানীয় নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের কিছু নাই।

যেসব এলাকায় জটিলতা আছে তাদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে বসবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আগামী ৩০ মার্চ রংপুর বিভাগ নিয়ে বসার কথা আছে বলে জানান ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। সিলেট বিভাগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঈদের পর কথা হতে পারে বলে জানান ওই বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।