তুই দলিত সম্প্রদায়ের, তোর কেন থাকবে এমন শানদার গোঁফ?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

তুই হলি দলিত সম্প্রদায়ের। তোর কেন থাকবে এমন শানদার গোঁফ? এমনি মনোভাব নিয়ে ভারতের গুজরাটে এক দলিত যুবকের সুশোভিত-সৃদৃশ্য গোঁফ কেটে-চেঁছে সাফ করে দিয়েছে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকজন। সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ আর জাতপাতের খোঁচাখুঁচির এ এক নয়া উদাহরণ যেন।

মঙ্গলবার নবভারতটাইমস.কম জানায়, সাবরকান্ঠা জেলার ইডার তালুকা এলাকায় গোরল গ্রামে ঠাকুর সম্প্রদায়ের আট যুবক মিলে দলিত সম্পদ্রায়ের যুবক অল্পেশ পান্ডিয়াকে ধরে শুধু মারপিট আর হেনস্থাই করেনি- শেষতক তার পৌরুষের অহংকার স্বরূপ নাকের নিচে থাকা সুদৃশ্য গোঁফজোড়াও চেঁছে দিয়েছে।

আলোচিত ওই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত স্থানীয় সাবরকান্ঠা পুলিশ এসসিএসটি আইনে অভিযুক্ত আট যুবকের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছে।

এফআইআর সূত্রে জানা গেছে, দুই বন্ধুর সঙ্গে অল্পেশ মোটরবাইকে করে মন্দিরে যাচ্ছিলেন। পথে লোহার রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ঠাকুর সম্প্রদায়ের ওই যুবকদল তাদের আটকে গালিগালাজ শুরু করে। ‘ছোট জাতের’ হয়ে অমন শানদার গোঁফ সে কীভাবে রাখতে পারে- এমন প্রশ্ন করে তাকে যুবকরা। একদিকে প্রশ্ন চলছিল আরেকদিকে যুবকদের কয়েকজন এসে তাকে মারপিট শুরু করে দেয়।

প্রাণ বাঁচাতে অল্পেশ দৌড় লাগায়। কিন্তু হামলাকারী যুবকরা তাকে পাকড়াও করে পাশের এক ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে রেজার এনে তার ‘প্রাণপ্রিয়’ গোঁফজোড়া সেভ্ড করে দেয়।

অল্পেশ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, দলিত সম্প্রদায়ের বলে আমাকে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়েছে এবং গোঁফ চেঁছে দিয়েছে। তিনি জানান, গ্রামে কারো সঙ্গে তাদের শত্রুতা নেই এবং ঠাকুর সম্প্রদায়ের কারো সঙ্গেও তাদের কোনো ঝগড়া নেই।

বুকের ভেতর গুমরে ওঠা কষ্ট চেপে তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে আমি গোঁফ বড় করছিলাম। এখন আমি চোখে চশমা (সানগ্লাস) লাগিয়ে মোচে তাও দিয়ে ঘুরে বেড়াতে গিয়েছি তাতে তাদের সমস্যা দেখা দিয়েছে!

তিনি অভিযোগে আরো জানান, শানদার গোঁফের জন্য শুধু তাকেই নয়, তার বাবা-মাকেও পেটানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে গ্রামের সারপাঞ্চ (পঞ্চায়েত প্রধান) বলেন, পান্ডিয়া গুরুব্রাহ্মণ সম্পদ্রায়ের লোক, ওই সম্প্রদায়টি একটি দলিত উপজাতি। এ ঘটনার ২০ দিন আগে ঠাকুর সম্প্রদায়ের এক তরুণীর সঙ্গে তার বচসা হয়। মোচ-চাঁছা ঘটনার পেছনে ওই ঘটনা কারণ হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

২৩ বছর বয়সী অল্পেশ পান্ডিয়া সোশাল ওয়ার্কে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করছেন। জাতপাতের হিংসায় জ্বলা ঠাকুর সম্প্রদায়ের যুবকদের মারপিটে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবরে গুজরাতেরই গান্ধিনগর এবং লিন্বদরা এলাকায় অপর দুই দলিত যুবককে বর্ণবাদী সাম্প্রদায়িক হামলার মুখে পড়তে হয়।