তিন সপ্তাহেও কার্যকর হয়নি বেঁধে দেওয়া পণ্যমূল্য

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :
এখনও বাড়তি দামেই পণ্য কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। দাম নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকারের অভিযান চললেও সুফল পাচ্ছে না ভোক্তা।  আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের বাজারে সরকারের নির্ধারিত দামের প্রতিফলন না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার বাজারগুলোতে এসব পণ্য এখনও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। দোকানিরা বলছেন পাইকারিবাজার ও আড়তে দাম না কমায় বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে এসব পণ্য।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। এসব বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, পেঁয়াজ দেশি ৯০ টাকা এবং ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৭০ টাকা আর প্রতিটি ডিম ১৩ টাকা; প্রতি হালি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কৃষি পণ্যের মূল্য পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় ডিম, আলু ও পেঁয়াজের খুচরা পর্যায়ের দাম বেঁধে দেয়। প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ খুচরা দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা এবং প্রতি পিস ফার্মের ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

সরকার আলুর দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা বেঁধে দিয়েছে বেশি নিচ্ছেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মিরপুরের শেওড়াপাড়া বাজারের আলু পেঁয়াজ-ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে বলেন, সরকার যে দাম দিয়েছে সেই দামে তো পাইকারি বাজার থেকেও পণ্য কেনা যায় না। পাইকারি বাজার থেকে আলু আমার দোকান পর্যন্ত আসতে ৪৫ টাকা কেনা পড়ে যায়। কেজিতে ৫ টাকা লাভ না করতে বাঁচবো কিভাবে।

৫০ টাকা হালি ডিম বিক্রি করলে এক হালিতে ১ টাকা লাভ হয় আর যদি কোন ক্রমে একটা ডিম পঁচা বা ভেঙে যায় তাহলে লাভ থাকেনা বলে জানালেন মিরপুরের মুদি বিক্রেতা আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, ১২ টাকা দরে ডিম কিনে কত করে বিক্রি করবো? শুধু তাই নয় আলু ও পেঁয়াজ দামের কারণে আগের মতো বিক্রিও নেই। এছাড়া পাইকারি বাজারে দাম কমলে আমরাও দাম কমিয়ে বিক্রি করি।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যদি কেউ বেশি মুনাফা লাভের জন্য অবৈধ মজুদ বা অন্য কোনো বেআইনি কাজ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা। তাদের মতে মনিটরিং দুর্বলতার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগে শত শত কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন।

এব্যাপারে বাজার করতে আসা সফিকুর রহমান বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের দুষছেন, পাইকাররা আড়তদারদের কিন্তু কোথায় যে সমস্যা সেটা সরকারই জানেন। সরকারের মনিটরিং দুর্বলতা এমনি হচ্ছে।

তিনি বলেন, শুধু জরিমানা করে কাজ হবে না অসাধু ব্যবসায়দের কঠোর শাস্তি দিতে হবে তাহলেই বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসবে। দ্রব্যমূল্যের কারণে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো জীবন ধারণ কষ্টকর হয়ে গেছে, আর  চলতে পারছিনা এটা যদি সরকার না বুঝে তাহলে দেশের এই উন্নয়ন কোন কাজে আবে না বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বাজার করতে আসা সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজার সিন্ডিকেটের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে গেছি, তারা তাদের ইচ্ছেমত পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন আর আমরা অসহায়ের মতো প্রতিনিয়ত সেটা কিনে খাচ্ছি, আমাদের কথা শুনবে কে? তিনি বলেন, ‍শুধু আলু-পেঁয়াজ কেন সব পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দেখবে কে? দুই দিন আগে কাঁচামরিচ ১৬০ টাকা করে কিনলাম আজ ৩২০ টাকা কিছুই বলার নেই। বাজারে নিয়ন্ত্রণ কার কাছে এটাই বোঝা যায় না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে বাজার তদারকি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রেখেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ঢাকাসহ দেশব্যাপী তাদের অভিযান চলছে।

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও প্রচার) আতিয়া সুলতানা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আজও ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সারা দেশে বাজার অভিযান পরিচালনা করছে। ঢাকা মহানগরীতে অধিদপ্তরের ২ টি টিম বাজার অভিযান পরিচালনা করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।