তানোরে বিষে নীল আলু চাষিদের স্বপ্ন: আজ পরিদর্শনে ‘এন্টাকল’ কোম্পানি

শাহিনুল আশিক, তানোর থেকে ফিরে:


শুরুতেই হোঁচট খেলেন তানোরের বেশ কিছু আলু চাষি। কীটনাশক কোম্পানি বায়ারের ‘০০৯৯’ ব্যাচের এন্টাকল ছত্রাকনাশক বিষ আলুর এমন সর্বনাশ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা জানান, আলুর জমিতে যেসকল কৃষক এন্টাকল ছত্রাকনাশক বিষ প্রয়োগ করেছেন তাদের আলু গাছ পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে এক প্রকারের হতাশায় রয়েছেন আলু কৃষকরা। তাদের দাবি, জমি, আলুর দাম, সার-বিষ, সেচের খরচ, শ্রমিক বিবেচনা করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা। কারণ আলু চাষের জন্য অনেকেই ঋণগ্রস্থ হয়েছেন।



সরেজমিনে সোমবার (২১ ডিসেম্বর) গিয়ে জানা গেছে, তানোরের চিমনার মাঠে শাহিন আলমের প্রায় সাত বিঘা, সেন্দুকার বিলে মজাহারের ৮ বিঘা, সরনজাই বিলে আকবরের ১০ বিঘা, তানোর পৌর সদরের সেকেন্দার আলীর ৭ বিঘা জমির আলুর গাছ নষ্ট হয়েছে। এছাড়া এন্টাকল ছত্রাকনাশক বিষ ব্যবহারে আরও কৃষকের জমির আলু নষ্ট হয়েছে।

অন্যদিকে, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের জমি পরিদর্শনে মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) বায়ার কোম্পানির প্রতিনিধিদের আসার কথা রয়েছে বলে জানান, তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার একটি কমিটি গঠন করার কথা রয়েছে।’
কমিটিতে কে কে থাকবে এমন কথার উত্তরে এই কৃষি কর্মকর্তা জানান, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে থেকে একজন প্রতিনিধি, বায়ার কোম্পানির একজন প্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি অফিসের প্রতিনিধি থাকার কথা রয়েছে।

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে তানোরের চিমনার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, শাহিন আলমের প্রায় ৭ বিঘা জমির আলু নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি জানান, ‘০০৯৯’ এই ব্যাচের এন্টাকল প্রতিষেধক দেওয়ার কারণে পুরো জমির আলু পুড়ে গেছে।

শাহিন আলম আরও জানান, ‘চার বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছেন তিনি। কদিন আগে আলুর জমিতে ‘০০৯৯’ এই ব্যাচের এন্টাকল ছত্রাকনাশক বিষ দেন। এর ফলে আলু পাতা পুড়ে গাছ মারে যাচ্ছে।’
তিনি জানান, আলুর গাছ মারা যাওয়ার বিষয়টি ডিলারকে জানানো হয়েছিল। তিনি কোম্পানির লোকজন নিয়ে জমি পরিদর্শনের কথা জানিয়ে ছিলেন। কিস্তু আসেননি। পরে তিনি মোবাইলে বলেন, জমি দেখতে এসে একটু সমস্যা হয়েছে। আলুর ক্ষতির জন্য ১০ জন কৃষক যে টাকা পাবে, আপনিও সেই টাকা পবেন।

তিনি আরও জানান, এবছর আলুর বীজের দাম বেশি ছিলো। তার পরেও কৃষক বেশী টাকা দরে আলু কিনে জমিতে রোপন করেছেন। এভাবে আলু চাষের শুরুতে নষ্ট হয়ে গেলে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
আলু চাষি এমদাদ জানান, দুপুরে কৃষি কর্মকর্তারা এসে আলুর জমি পরিদর্শন করেছে। তারা জমির মালিক ও আশে-পাশের আলু চাষিদের সাথে কথা বলেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বায়ার কোম্পানির প্রতিনিধিদের আসার কথা রয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, তানোর গোল্লাপাড়া বাজারের সৈয়ব আলী ট্রেডার্স এর মালিক সৈয়ব আলী বায়া’র কোম্পানির পরিবেশক (ডিলার)। তার মাধ্যমে এন্টাকল নামক ছত্রাকনাশক ঔষুধ নেয়া হয়েছিল। পরে আলু চাষীরা জমিতে স্প্রে করে। এর পরে আলুর গাছ পুড়ে যায়।

বায়া’র কোম্পানির পরিবেশক সৈয়ব আলী ট্রেডার্সের মালিক সৈয়ব আলী বলেন, কোম্পানির লোকজনদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা সরেজমিনে তদন্ত করছে।

তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে কোম্পানির লোকজন আসার কথা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করা হচ্ছে। এছাড়া কোম্পানি ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা বিষয়টি মাঠ পর্যায় থেকে দেখছে। আসলে কি কারণে এমনটি হলে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স/আ