তরুণীকে বীভৎস কায়দায় যৌন নির্যাতন, চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছে পুলিশ

পাচার হওয়ার পর নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি তরুণীকে উদ্ধারে ভারতের কেরালা রাজ্যে অভিযান চালাচ্ছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে এই অভিযান চলছে বলে বেঙ্গালুরু পুলিশ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগকে জানিয়েছে।

শুক্রবার রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই তরুণীকে উদ্ধরের কোনো খবর জানাতে পারেনি পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে তারা সার্বক্ষণিক বেঙ্গালুরু পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। ওই তরুণীকে উদ্ধারের পর বেঙ্গালুরুতে নেওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেরের উপস্থিতিতে তার জবানবন্দি নেওয়া হবে।

এদিকে বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরু পুলিশ দুই নারীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার সকালে গ্রেফতারদের নিয়ে আবারও অভিযানে যায় পুলিশ। পালানোর চেষ্টার সময় দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলেও জানিয়েছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন- ঢাকার মগবাজারের তরুণ রিফাজুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক বাবু ও তার সহযোগী সাগর। গ্রেফতার ব্যক্তিরা সবাই বাংলাদেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিগগিরই তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলার সূত্র ধরে নির্যাতনের ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে পাচারকারীদের হাত থেকে পালিয়ে দেশে ফিরেছেন এমন এক তরুণীর তথ্য পাওয়া গেছে। ওই তরুণীও টিকটক করতেন। তিনিও চক্রের অন্যতম সদস্য টিকটক বাবুর মাধ্যমে চক্রের ফাঁদে পড়ে ভারতে যান। সেখানে তাকে বিক্রি করার চেষ্টা করেছিল চক্রের সদস্যরা। তবে তিনি কৌশলে পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে পুলিশ। ওই তরুণীর কাছ থেকে এই চক্রের বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, পাচারকারী চক্রের বিষয়ে এরই মধ্যে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। চক্রের বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। দ্রুতই এই চক্রের নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। বেঙ্গালুর পুলিশের সঙ্গেও আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এডিসি হাফিজ আল ফারুক বলেন, হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা মামলার সূত্র ধরে তদন্তে নেমে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছি। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই চক্রের মাধ্যমে পাচার হওয়ার পর কৌশলে দেশে ফিরে আসা ভুক্তভোগীও পেয়েছি আমরা। ওই তরুণীর জবানবন্দি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাচারের শিকার এক বাংলাদেশি তরুণীকে বীভৎস কায়দায় নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ২৩ বছর বয়সী ওই তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতনের পর দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়। ভিডিওটির সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার ছয়জনের ওই দলটিকে গ্রেফতার করে বেঙ্গালুরু পুলিশ। গ্রেফতার সবাই একই গ্রুপের এবং তারা বাংলাদেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পালানোর সময় দুজন গুলিবিদ্ধ: ভারতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় দুজন পালানোর চেষ্টার সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। ভারতীয় গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কীভাবে কী ঘটেছিল জানতে গ্রেফতার ছয়জনকে শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ঘটনাস্থরে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। সেখানেই গুলির ঘটনা ঘটে।

পূর্ব বেঙ্গালুরু পুলিশের ডেপুটি কমিশনার শরণাপ্পা এসডিকে উদ্ধৃত করে এনডিডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রাইম সিন থেকে দুজন পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি ছোড়ে। পরে তাদের আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বেঙ্গালুরু পুলিশের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, নির্যাতনের ওই ঘটনাটি ঘটেছে ছয় দিন আগে। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি দেখার পর প্রথম পদক্ষেপ নেয় আসাম পুলিশ। ওই ভিডিও থেকে পাঁচ নিপীড়কের ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য টুইটারে পুরস্কারের ঘোষণা দেয় তারা।

হিন্দুস্থান টাইমসের খবরে বলা হয়, ওই ভিডিওর উৎস খুঁজতে গিয়ে আসাম পুলিশ জানতে পারে, নির্যাতনে জড়িতরা আছে বেঙ্গালুরুতে। তারপর সেই তথ্য কর্ণাটক পুলিশকে সরবরাহ করে তারা। পরে বেঙ্গালুরু পুলিশ ওই ভিডিওর সূত্র ধরে ছয়জনকে গ্রেফতার করে।

বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশের কমিশনার কামাল পান্ট টুইটারে জানান, এ ঘটনায় ধর্ষণ, নির্যাতন ও অন্যান্য অভিযোগে একটি মামলা করা হয়েছে ওই ছয়জনের বিরুদ্ধে। তারা সবাই বাংলাদেশি বলে তারা ধারণা করছেন। আর নির্যাতনের শিকার তরুণীও বাংলাদেশি, তাকে পাচারের জন্য ভারতে আনা হয়েছিল।

এদিকে কর্ণাটক রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসবরাজ বোমাই স্থানীয় সংবাদিকদের বলেছেন, মানবপাচারের ওই চক্রে কেরালার আরও কয়েকজন জড়িত বলে গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে পুলিশ।