তবুও থামেনি তাদের পদ্মা পারের আড্ডা

শফিক আজম:
‘স্কুল কলেজ ছেড়ে পদ্মাপাড়ে শিক্ষার্থীরা’- শিরোনামে চলতি বছরের শুরুতেই  সিল্কসিটি নিউজের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় রাজশাহী মহানগরীর নামি-দামি কিছু স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে আড্ডাবাজির কথা এরপর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া ক্লাস ফাঁকি বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের।

অপরদিকে দেশের চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে  পাঠানো কড়া নির্দেশনা। টানা ১০ দিন ক্লাসে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।

ক্লাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি শতকরা ৬০ ভাগের বেশি না হলে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেয়া হয় না অনেক কলেজেই। এই অবস্থায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজমুখি। তবে মাঝের কিছু ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অনেকেই ছুটছে নগরীর বিনোদন কেন্দ্র পদ্মাপাড় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পার্ক অথবা ভদ্রা পার্কে।

আবার অনেকেই ছুটছে ফাস্ট ফুড, রেস্টুরেন্টসহ নানা খাবারের দোকানেও। এসব স্থানেও আড্ডায় মেতে উঠতে দেখা যাচ্ছে নগরীর স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের। যে সময়ে তারা আড্ডায় মেতে উঠছে, সেসময়ে তাদের ক্লাসে থাকার কথা। কিন্তু দুপুর হতে না হতেই বা ১১টার পর থেকেই অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাস ফাঁকা হতে শুরু করে। আর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ওই শিক্ষার্থীরা ছুটছে আড্ডা দিতে। তবে অধিকাংশরই নজর পদ্মা পারের দিকে।

গত কয়েকদিন ধরে নগরীর বিনোদনকেন্দ্র থেকে শুরু করে, ফাস্ট ফুড ও নামি-দামি রেস্টুরেন্টগুলোতে সরেজমিন ঘুরে এমন দৃশ্যই ধরা পড়েছে সিল্কসিটি নিউজের কাছে।

13664322_1770807503208354_1889992799_n
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর দুইটা। রাজশাহীর বিনোদনকেন্দ্র পদ্মা গার্ডেন এবং এর পাশ ঘেঁষে প্রায় দু কিলোমিটার দূরবর্তী নগরীর টি বাধ এলাকা পর্যন্ত দেখা যায়, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অবাধ বিচরণ।

এদের মধ্যে একাদশ থেকে দ্বাদশ বা ডিগ্রিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আধিক্যই বেশি। অধিকাংশই এসেছে আবার দলবদ্ধ হয়ে বা জুটিবদ্ধ হয়ে। এসব শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। সেসব ফোন দিয়ে কেউ সেলফি তুলতে ব্যস্ত, কেউ অপরের ছবি তুলতে ব্যস্ত, আবার কেউ দলীয় ছবি তুলতেও ব্যস্ত। সেসব ছবি মূহুর্তেই তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকেও।

ঠিক একই সময়ে শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট কলেজে গিয়ে দেখা মেলেনি তেমন কোনো শিক্ষার্থীর।  ক্লাসে উপস্থিত না থাকলেও শিক্ষকদের কিছুই করার থাকে না। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে বললেও যেন দিন দিন বাড়ছেই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের আড্ডার মাত্রা।

জানতে চাইলে অড্ডায় মেতে উঠা রাজশাহী সিটি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিল্কসিটি নিউজকে জানায়, দুপুর ১২টার পর থেকে এ কলেজটি মুলত ফাঁকা হতে শুরু করে। আর সেই সুযোগে শিক্ষার্থীরাও বেরিয়ে পড়ে বিনোদনকেন্দ্রগুলোর দিকে। সেখানে বসে ঘুরা-ঘুরি করে বা আড্ডায় মেতে উঠে তারা বাড়ি ফিরে।

রাজশাহী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুেই শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, তাদের কলেজেও প্রায়একই অবস্থা। এ কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ক্লাস ছেড়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর ধার বা অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্রগুলো থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আড্ডায় মেতে উঠে।
রাজশাহী মহানগরীর সরকারি স্কুল-কলেজগুলো থেকে শুরু করে বেসরকারি স্কুল-কলেজেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।

শিক্ষার্থীদের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আড্ডায় মেতে উঠা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে  রাজশাহী নিউ গর্ভমেন্ট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এসএম জার্জিষ কাদির সিল্কসিটি নিউজকে বলেন,  ‘শিক্ষার্থীদের ক্লাস ফাঁকি রোধে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তারপরও কিছু শিক্ষার্থীরা একটু সুযোগ পেলেই ছুটে যাচ্ছে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে। তবে এদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে শিক্ষকদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান সিল্কসিটি নিউজকে বলেছিলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি শিক্ষকদের সুপারভিশন এবং মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকে, তবে সে প্রতিষ্টানে কখনও ভালো কিছু আশা করা যায় না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মনযোগী করতে শিক্ষকদের পাঠদানকে আকর্ষণীয় করতে হবে। নিয়মিত অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। তারা কেন ক্লাসে আসে না, ক্লাস বাদ দিয়ে কোথায় যায়-তা অভিভাবকদের কাছে জানতে হবে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, রাজশাহীকে প্রকৃত শিক্ষানগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রধানকে এগিয়ে আসতে হবে। সঠিক মনিটরিং করতে হবে। তা না হলে আমরা রাজশাহীর এই সাফল্যের ধারা ধরে রাখতে পারব না। আমরা পিছিয়ে যাব।

স/আর