তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে রাবি

রেদওয়ানুল হক বিজয়, রাবি
একুশ শতকের এই বিশ্বায়নের যুগে সর্বত্রই তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার বিদ্যমান। বাংলাদেশে একটু দেরিতে হলেও এর ব্যবহার ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করছে। গবেষণা, শিক্ষা, চিকিৎসা, মহাকাশ, মহাসমূদ্র, ব্যবসা, কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার পৃথিবীকে এনে দিয়েছে মানুষের হাতের মুঠোয়।

আজ বাংলাদেশ সেই ক্ষেত্রে অনেক বেশি সফল। ‘কৃষি কল সেন্টারের’ সাহায্যে কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানসহ পরামর্শ মিলছে ১৬১২৩ নাম্বারে ডায়ালের মাধ্যমেই। সাথে কৃষি কথা ডট কমে কৃষি বিজ্ঞানীরা কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান মেটাচ্ছেন সাথে সাথে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রযুক্তির সাথে সাথে এতো বেশি এগিয়ে গেছে যে এখন অকাল মৃত্যুর হার অনেক কম। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত উপকরণ আজ বাংলাদেশেও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে আমাদের আর বিদেশি চিকিৎসার উপর নির্ভর করতে হয় না। মোবাইলে স্বাস্থ্য সেবা, অনলাইন স্বাস্থ্য সেবা যেটা টেলিযোগাযোগের উৎকর্ষতা ছাড়া সম্ভব ছিল না, আজকে আমরা সেটা হাতের নাগালেই পাচ্ছি।

শিক্ষা ক্ষেত্রে আজ ফলাফল নেওয়া থেকে শুরু করে আরও সেবা এখন মানুষের হাতের নাগালে। যেটা মানুষের ভোগান্তির সাথে সাথে সময়ও বাঁচিয়ে দিয়েছে। যেখানে রাজধানী ঢাকা ছাড়া কোন শিক্ষা সেবা সাধারণ মানুষের পাওয়া সম্ভব ছিল না সেখানে আজ মোবাইল এবং অনলাইনে ঘরে বসেই সকল শিক্ষা সেবা পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নামের একটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে ছোট থেকেই শিক্ষার্থীরা বিষয়টির সাথে পরিচিত এবং ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থায় আজ আমুল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সাথে। যেখানে কোন সংবাদ পাঠাতে ২-৩ দিন লেগে যেত সেখানে আজ সেকেন্ডের মধ্যেই সংবাদ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কর্মক্ষেত্র যেখানে আগে পেপার কাগজে ভর্তি থাকতো। এখন সেটা সম্পূর্ণ কম্পিউটার কেন্দ্রিক। মানুষের চাহিদা এখন মুহূর্তের মধ্যেই মানুষকে দেওয়া যায়। এখন কোন কিছু জানার প্রয়োজন হলেই আমরা তথ্য নেওয়ার জন্য ইন্টারনেটে বসে যাই।

সরকারি প্রায় সকল সেবা এবং ব্যাংক এখন অনলাইন নির্ভর। অনলাইন নির্ভর হওয়ায় দিনের পর দিন কোন জরুরী কাজ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সরকার ‘ই-তথ্য সেবার’ মাধ্যমে মানুষের সামনেই উপস্থাপন করে দিচ্ছে সকল তথ্য এবং সেবা।

প্রযুক্তি মানুষকে পরিবর্তিত বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্য-জ্ঞান-দক্ষতা-কৌশল-প্রবণতা এবং যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ করে তুলছে। কার্ল মার্কসের ভাষায় ‘প্রযুক্তি হচ্ছে মানুষের প্রতিদিনের সাথী।’

একসময় বলা হতো কম্পিউটার এলে অনেকের চাকুরি চলে যাবে, বেকারত্ব বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে কথাটি সম্পূর্ণ বিপরীত। কম্পিউটারের মাধ্যমেই হাজারও লোকের মিলছে কর্মসংস্থান। এমনকি কোন চাকুরির জন্য এখন কম্পিউটার ব্যবহারের দক্ষতা যাচাই করা হয়ে থাকে।

মূলত স্যাটেলাইট টেলিভিশনকে কেন্দ্র করেই আমাদের দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিপ্লব শুরু। স্যাটেলাইট টেলিভিশনের বদৌলতে মানুষ গ্রামের মাঝেও শহুরে জীবনের ছোঁয়া পাচ্ছে। গ্রামের মানুষ তাদের মুর্খতা, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে অনেকখানিই। আর সেখানে ক্রমশ স্থান করে নিচ্ছে পরিশীলিত জীবনবোধ, উন্নত চিন্তা-চেতনা, রুচিবোধ প্রভৃতি। চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত নাটক, সিনেমা, সিরিয়ালে দেখা জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাস আমাদের সংস্কৃতিতে প্রভাব ফেলেছে।

বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে মোবাইল ফোন। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব সেবাই মোবাইলকে ঘিরে গড়ে উঠছে। সরকার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের সব নাগরিক সেবার তথ্য এখন মোবাইলে দিচ্ছে। এছাড়া বিকাশ, মোবিক্যাশ, মানিট্রান্সফার, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফি জমা, পরীক্ষার ফলাফল আমরা মোবাইলের মাধ্যমেই করছি।

মনোকিচিৎসকদের মতে, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার অবশ্যই ইতিবাচক তবে এটি আমরা অনেক ক্ষেত্রে নেতিবাচক হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। যা আমাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা দেয়। আর আমরা এটাও জানি যে, অসুস্থতা দ্রুত সংক্রমিত হয়। তেমনি প্রযুক্তি ব্যবহারের নেতিবাচক দিকগুলোও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যৌনতা, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় উগ্রতা এসব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে। যে কোনো সম্পর্কের ভিত্তি হতে হবে বাস্তবতা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রযুক্তি আসক্তি আমাদের এটি থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তাই নিজের অজান্তেই আমরা অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। এছাড়া অধিক প্রযুক্তি আসক্তি মেধাবিকাশ, ক্যারিয়ার এবং পরিশ্রম কম করায় শারীরিক সমস্যারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও এর অবস্থা বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার চক্রবর্তীর সাথে। তিনি সিল্কসিটি নিউজকে  জানান, প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আজ আমাদের জীবন হয়ে উঠেছে খুব বেশি প্রোডাক্টিভ। বর্তমানে কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ সফট্ওয়্যার রপ্তানি করছে। এটা আমাদের অর্থনীতিকেও অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ব্যবহার সম্পর্কে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ভর্তি প্রক্রিয়া ইত্যাদি সবকিছু এখন অনলাইন কেন্দ্রিক। শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন, রেজাল্ট, সার্টিফিকেট তৈরি ইত্যাদিতে অনেকটা সময় লেগে যায়। এতে করে শিক্ষার্থীদের অনেকটা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এই সমস্যা দূর করার জন্য আমরা নতুন একটা সফট্ওয়ার নিয়ে কাজ করছি। কাজটা প্রায় শেষের দিকে।
তার বিভাগের (সিএসই) ছাত্রদের প্রযুক্তির চর্চা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আমাদের বিভাগের ছাত্রদের তথ্য প্রযুক্তির চর্চা ও তাদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য তিন বছর আগে হাইয়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহেনজমেন্ট প্রজেক্টে’র (হেকেপ) সহযোগিতা করে। আমাদের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অ্যাপস্ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করছে। এছাড়াও আমাদের ল্যাবে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহারিক উপকরণ রয়েছে।

বাংলাদেশের উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে ফলপ্রসূ হতে পারে বিষয়ে তিনি বলেন, প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেক দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে অনেক দেশের তুলনায় বেশি সমৃদ্ধ। সেহেতু বাংলাদেশ যদি প্রযুক্তিতে আরও বেশি এগিয়ে যায় তাহলে সেসবের সঠিক ব্যবহার হবে অনেক দ্রুত। এতে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে সমৃদ্ধশালী একটি দেশ। স/আর