তথ্যমন্ত্রীর ফোনে সুমিকে রিকশা দিলেন রাজশাহীর আ.লীগ নেতা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রিকশাচালক সুমির জন্য সহানুভূতির হাত বাড়িয়েছেন অনেকেই। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ফোন করেছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের কাছে। সুমির জন্য প্রয়োজনীয় যা লাগে করার জন্য বলেছেন তথ্যমন্ত্রী। আজ সোমবার দুপুরে ডাবলু সরকার একটি নতুন অটোরিকশার চাবি তুলে দেন সুমির হাতে। আর এই সংকটপূর্ণ সময়ে যাতে রিকশা চালাতে না হয়, এ জন্য তাঁকে নগদ ৫ হাজার টাকাও দিয়েছেন।

এরপর থেকে দেশ-বিদেশ থেকে ফোন আসতে থাকে। অনেকেই তাঁর খবর জানতে চান। কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, এ ব্যাপারে পরামর্শ চান।

মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ডাবলু সরকার রোববার রাতেই ফোন করে সুমির খোঁজখবর নেন। আজ দুপুর ১২টার দিকে সুমি একটি ভাড়ার রিকশা চালিয়ে নগরের বোয়ালিয়া থানার সামনে আসেন। সেখানেই ডাবলু সরকার তাঁর হাতে একটি নতুন অটোরিকশার চাবি তুলে দেন। আর এই সংকটপূর্ণ সময়ে যাতে রিকশা নিয়ে বাইরে বের হতে না হয়, সে জন্য নগদ ৫ হাজার টাকা দেন। সুমি বলেন, ‘আমাকে আর অন্যের রিকশা চালাতে হবে না। ভাড়া না পেলে জমার টাকার জন্য কাঁদতে হবে না। আমার রাজশাহীতে আসার ১৫ বছরের জীবনে আজ একটা ইতিহাস হয়ে গেল।’

রাজশাহী শহরের ভোটার না হওয়ার কারণে স্থানীয় কোনো সাহায্য পান না—এ খবর পেয়ে রাজশাহী নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান সোমবার খুব সকালেই সুমিকে খুঁজে বের করেন। তাঁকে তিনি ১৫ কেজি আটা, ৪ কেজি ডাল ও ৫ কেজি আলুর একটি প্যাকেট ধরিয়ে দেন। রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক রাতেই বলেছিলেন, তিনি এই সংকটপূর্ণ সময়ে রিকশাচালক সুমির দায়িত্ব নিতে চান। সকালে তিনি সুমিকে নগদ ৩ হাজার টাকা, আপত্কালীন সময়ের জন্য প্রস্তুত চাল-ডালসহ শুকনা খাবারের প্যাকেট ও একটি মশারি দেন। আর এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে রিকশা চালাতে বারণ করেন।

রিকশা নেওয়ার পরে সুমি দেখা করতে আসেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ হীল বারীও আসেন। তিনি লকডাউন সময়ের জন্য সুমির পরিবারের প্রয়োজনীয় খাবার কিনে দিতে চান। তিনি সুমিকে নিয়ে নগরের সাহেব বাজারের দিকে যান। পরে সুমি জানান, ওই ছাত্রনেতা তাকে চাল, ডাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ কিনে দিয়েছেন।

এর আগেই রাজশাহীর বাইরে থেকে কয়েকজন সহৃদয় ব্যক্তি সুমিকে সংকটের এ সময়ে খাবার কেনার জন্য কিছু টাকা পাঠিয়েছেন। সুমি জানিয়েছেন বিকাশে পাঠানো সেই টাকা তিনি পেয়েছেন। যাঁরা দিয়েছেন তাঁদের পরিচয় সুমি ঠিকমতো বলতে পারেননি। তিনি লিখতেও পারেন না। তিনি সবার জন্য দোয়া করেছেন বলে জানিয়েছেন।

সুমির বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায়। স্বামীর মৃত্যুর পরে প্রায় ১৫ বছর আগে দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে রাজশাহী শহরে আসেন সুমি। এখন তিনি শহরে রিকশা চালান।
সুমি বললেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি রাজশাহী শহরে আছেন কিন্তু তাঁকে কেউ এই শহরের মানুষ মনে করেন না। কারণ তিনি এখনো বড়াইগ্রামের ভোটার। শহরের যেখানেই সাহায্য দেওয়া হয়, সেখানেই তিন যান। গেলেই কথা ওঠে তিনি বাইরের মানুষ। কোনো সাহায্য পান না।

গতকাল দেখা হওয়ার সময় খুবই হতাশা প্রকাশ করে সুমি বলেছিলেন, ‘সারা দিন রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে খুব কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় মরেই যাব।’ জমার ২০০ টাকার ভাড়া না হওয়ার জন্য তিনি কাঁদছিলেন।