ঢাকায় মোটরবাইক সার্ভিস নিতে গিয়ে নারীরা হচ্ছেন বিব্রত

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

কয়েক বছর ধরে ঢাকায় চলাচলের ক্ষেত্রে অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেলের জনপ্রিয়তা বেশ চোখে পড়ার মতো। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও নিয়মিত ব্যবহার করছেন এসব পরিবহণ পরিসেবা।

তবে একজন পুরুষের জন্য এই রাইড ব্যবহার যতোটা সহজ ও স্বাচ্ছন্দের, নারীদের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। অন্তত ঢাকার কজন নারীর অভিজ্ঞতা সেটাই।

রাইডারদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গতি, অশোভন আচরণের অভিযোগ করেছেন এসব অ্যাপ ব্যবহারকারী নারীরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বেশি মুনাফা করতে গিয়ে এই পরিসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো নারী নিরাপত্তার বিষয়টিকে কোন আমলেই নিচ্ছেনা।

মিরপুরের বাসিন্দা মাইমুনা রুমকি তার গুলশানের অফিসে আসতে বেশিরভাগ সময় ব্যবহার করেন অ্যাপভিত্তিক মোটর সাইকেল পরিসেবা। তবে একজন পুরুষের জন্য এই রাইড ব্যবহার যতোটা স্বাচ্ছন্দের নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা পুরোপুরি উল্টো বলে তিনি মনে করেন।

মিস রুমকি বলেন, “বাইকে অপরিচিত চালকের পেছনে বসি দেখে মানুষ এমনভাবে তাকায় যেন আমি কোন ভীনগ্রহের প্রাণী। আর চালকরাও মাঝে মাঝে খুব স্পিডে চালায়, হার্ড ব্রেক করে। আমি তো চালককে ধরে বসিনা। তাই খুব সমস্যা হয়।”

“একবার এক রাইডার আমাকে বলে যে আপা ধরে বসেন। আমি বললাম যে না আমি ঠিক আছি। কিন্তু লোকটা আধাঘণ্টার রাস্তায় আমাকে পাঁচ ছয়বার একই কথা বলল। খুবই বিরক্তিকর।”

মোটরসাইকেল

মিস মাইমুনার মতো মারফিয়া হায়দারও উত্তরা থেকে বাংলামটর দ্রুত যাওয়া আসার জন্য ব্যবহার করেন এই অ্যাপভিত্তিক মোটর সাইকেল সার্ভিস।

তিনি কয়েকবার বেপরোয়া গতিতে বাইক চালানো এবং বাইকারদের খারাপ আচরণের শিকার হয়েছেন।

কিন্তু তিনি এই অভিযোগ কার কাছে কোথায় করবেন সে বিষয়ে অ্যাপে কোন উল্লেখ থাকেনা বলে তিনি জানান।

“আমার সঙ্গে যদি কেউ খারাপ আচরণ করে আমি জানিনা কার কাছে অভিযোগ করবো। অ্যাপগুলোয় কোন ফোন নম্বর নাই। ওরা কেবল স্টার রেটিং দেয়ার অপশন রাখে। যেটা দিয়ে অভিযোগ ব্যাখ্যা করা সম্ভব না।” বলেন মিস হায়দার।

এছাড়া বাইকে চড়ার বিষয়টি বেশিরভাগ নারীর পরিবার নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে বলে তিনি জানান।

মোটরসাইকেল

আবার বাংলাদেশের নারীরা যে পোশাক পরেন এবং তারা বাইরে যেভাবে বসেন সেটা অনেক সময় নারীদের মোটর সাইকেলে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। সম্প্রতি বাইকের চাকায় কাপড় পেঁচিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন অ্যাপ ব্যবহারকারী নাদেদজা আর্নিক।

তিনি বলেন, “আমরা যে ধরণের ড্রেস পরি, সেটা নিয়ে ঠিকভাবে বাইকে বসা যায়না। আর আমাদের দেশের মেয়েরা সাইড হয়ে বাইকে বসে। যার কারণে ব্যালান্স থাকেনা। অ্যাক্সিডেন্টের রিস্ক অনেক বেড়ে যায়।”

তবে মোটরসাইকেলকে গাড়ির চাইতে নিরাপদ বলে মনে করেন, সহজ রাইডস পরিসেবার প্রতিষ্ঠাতা মালিহা কাদির।

তবে এই যানটিতে চলাচল আরও নারীবান্ধব করে তুলতে পরিসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

এক্ষেত্রে তিনি প্রতিটি অ্যাপে জরুরি যোগাযোগের ফোন নম্বর থাকা, চালকদের ঠিকানা যাচাই, সেইসঙ্গে সঠিক প্রশিক্ষণ দেয়ার ওপর জোর দেন।

এছাড়া রাইড চলাকালীন নারীদের সঠিকভাবে বসা, নম্বর প্লেটের সঙ্গে রাইডের পরিচয় মিলিয়ে নেয়া, এবং অ্যাপ ছাড়া রাইড ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন তিনি।

মোটর সাইকেল

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইডের ওমেন এন্ড জেন্ডার ইকুইটির ব্যবস্থাপক কাশফিয়া ফিরোজ মনে করেন, গণপরিবহনগুলো এখন পর্যন্ত নারীবান্ধব না হয়ে ওঠার কারণেই নারীদের বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে মোটর সাইকেল চড়তে হচ্ছে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা করার লোভে নারীর নিরাপত্তার বিষয়টিকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন মিস ফিরোজ।

তিনি বলেন, “পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পর্যাপ্ত ও নারীবান্ধব হলে কোন নারী বাইকে চড়তো না। তাছাড়া আমাদের নাগরিক কাঠামো কি সামগ্রিকভাবে নারী বান্ধব? সেটাও একটা প্রশ্ন।”

“গ্রাহকদের অভিযোগ দায়েরের জন্য প্রয়োজনীয় মেকানিজম থাকতে হবে। এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা প্রচার করতে হবে। যেন সবাই সচেতন হয়।

মোটর সাইকেল

সম্প্রতি ঢাকার মহাখালীতে এমনই একটি অ্যাপভিত্তিক পরিসেবার মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী।

পরবর্তীতে জানা যায় চালক যে ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধন করেছেন সেটা ভুল। সুতরাং প্রশ্ন উঠছে এই রাইডগুলোকে নিরাপদ করতে পরিসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো কতোটুকু তৎপর।

সূত্র: বিবিসি বাংলা