ঢাকাতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৭ লক্ষাধিক হতে পারে: দ্য ইকোনমিস্ট

কম সংখ্যক পরীক্ষার কারণে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা অনেক ভয়াবহ হতে পারে বলে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেই আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে সাত লাখের বেশি হতে পারে। শুক্রবার ‘ইনফেকশন্স আর রাইজিং ফাস্ট ইন বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান’ শিরোনামের প্রতিবেদনে এই দাবি করেছে সাময়িকীটি। খবর বাংলাট্রিবিউন

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইসিডিডিআর,বি)-এর কর্মকর্তা জন ক্লেমেনসের অনুমান, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেই করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ইতোমধ্যে সাড়ে সাত লাখ ছাড়িয়ে থাকতে পারে। তবে সরকারের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ হাজারের কম।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অনুসারে, শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৮ শতাধিক মানুষের। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আক্রান্ত শনাক্তের ৯০তম দিনে এসে করোনাভাইরাস সংক্রমিত শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় ঢুকে গেছে বাংলাদেশের নাম।

লকডাউন প্রত্যাহারে দ্রুত ছড়াতে পারে সংক্রমণ

গত সপ্তাহ থেকে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জারি করা লকডাউন প্রত্যাহার করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারত। দ্য ইকোনমিস্ট লিখেছে, ‘বিশ্বের মোট জনসংখ্যা এক-পঞ্চমাংশের বেশি ১৭০ কোটি মানুষকে বিধি-নিষেধ মুক্ত করে দেওয়ায় বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরবে’।

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় রোগের বিস্তার মোটামুটি শ্লথ করতে পেরেছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো কিন্তু থামাতে পারেনি। লকডাউন প্রত্যাহারের ফলে আবারও সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে পারে।’

‘সরকারিভাবে প্রকাশিত সাড়ে ৩ লাখের বেশি আক্রান্ত এবং প্রায় ৯ হাজার মানুষের মৃত্যু নিয়ে পরিসংখ্যানকে অপেক্ষাকৃত পরিমিত দেখাচ্ছে। তবে এখনও অনেক মানুষ আক্রান্ত হলেও গণনার বাইরে রয়েছেন; লকডাউন প্রত্যাহারের আগে থেকেই তা নিয়ে ভয় ছিল। এখন সেই ভয় আরও বাড়ছে’- উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘সংক্রমণের বর্তমান গতি অনুসারে প্রতি দুই সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। তবে কিছু মডেলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, এই অঞ্চলে করোনা সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছাবে আগামী জুলাইয়ের শেষের দিকে। শুধু তাই নয়, সেই সময়ে সরকারি পরিসংখ্যানেও আক্রান্ত ৫০ লাখে পৌঁছাতে পারে এবং মৃত্যু ছাড়াতে পারে দেড় লাখ।’

মর্গ বা কবরস্থান পাওয়া কঠিন

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই তিন দেশে করোনায় মৃতদের জন্য মর্গে, কবর স্থানে ও শ্মশানঘাটে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। নারায়ণগঞ্জের পৌর কবরস্থানে মে মাসে ৫৭৫ জনের দাফন করা হয়েছে। সাধারণ প্রতিমাসে সেখানে আড়াইশ’র কম দাফন করা হয়।

তবে গত মাসে দাফন করা ৫৭৫ জনের মধ্যে মাত্র ৭০ জন করোনায় আক্রান্ত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে চট্টগ্রামে কবর খনন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফরিদ উদ্দিনের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেছেন, অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।

তিনি ও তার সঙ্গীরা গত চারদিন ধরে ঘুমানোর সময় পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ফরিদ উদ্দিন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রচণ্ড চাপে আছি। দোয়া করুন যেনও সৃষ্টিকর্তা আমাদের ক্ষমা করে দেন এবং রোগটি ফিরিয়ে নেন।’