রাবিতে ড্রেনের ১৪ কোটি টাকা নালাতেই যাচ্ছে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে প্রায় ১৪ কোটি টাকায় ড্রেন নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করেও কাজ না হওয়ায় কয়েক দফা বন্ধ করে দেওয়া হয় কাজ। কিন্তু অজানা কারণে কিছুদিন পর ফের কাজ শুরু হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী বলছেন, কাজ শুরুর বিষয়টি তাঁরা জানেন না। দফায় দফায় অভিযোগ ওঠার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রকল্প পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর একনেকে ৫১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেটের একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়। ওই প্রকল্পের অধীনে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে ড্রেনেজ সিস্টেমের আওতায় আনতে ১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৫ শতাংশ কমে ১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকায় টেন্ডারের মাধ্যমে যৌথভাবে এ কাজ পায় মাইশা কনস্ট্রাকশন ও হোসাইন এন্টারপ্রাইজ। কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে।
তবে কাজ শুরুর পর থেকে ঢালাইয়ের নিচে পর্যাপ্ত বালু না দেওয়া, কিউরিং না করা, শার্টারিং বাঁকা, ড্রেন বাঁকা করাসহ একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এসব বিষয়ে কয়েকবার মৌখিকভাবে ঠিকাদারকে সতর্ক করা হয়। এরপরও অনিয়ম চলতে থাকায় দুই দফায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সর্বশেষ এ মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে শোকজ করে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু গতকাল সোমবার পর্যন্ত জবাব দেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ড্রেনের লাইন বাঁকা হওয়ায় গত ১০ সেপ্টেম্বর তৃতীয়বারের মতো কাজ বন্ধ করে দেন প্রধান প্রকৌশলী।

অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসাইন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমরা শিডিউল মোতাবেক সবকিছু দিয়েছি।

তবে সমান করতে গিয়ে কোথাও দুই ফুট আবার কোথাও কোথাও চার ইঞ্চি বালু পড়েছে। এ ছাড়া পানি, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের লাইন রক্ষা করতে গিয়ে কিছু কিছু জায়গায় লাইন বাঁকা হয়েছে। শার্টারিংয়ে কিছু জায়গায় সমস্যা ছিল সেটিও সংস্কার করা হয়েছে।’

এদিকে তৃতীয় দফা কাজ বন্ধ করার সপ্তাহ না যেতেই কাজ ফের কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলমান কাজগুলো দেখার জন্য ১৩ সদস্যের একটি মনিটরিং কমিটি রয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া। গত ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁর সভাপতিত্বে বিশ্বদ্যিালয়ের সিনেট ভবনে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রকল্পের আওতায় চলমান কাজগুলোর ঠিকাদারদের ডাকা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের প্রকৌশলীরাও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকের পরের দিন ফের ড্রেনের কাজ শুরু হয়।

কাজ শুরুর বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার রশিদ বলেন, ‘বৈঠকে আমরা সব অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়েছি। তাই এর পরের দিন থেকে কাজ শুরু করেছি।’

তবে ড্রেন নির্মাণকাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলছেন কাজ বন্ধ রয়েছে। কাজ শুরুর বিষয়টি তাঁর জানা নেই। একই কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ ও প্রকল্প পরিচালক খন্দকার শাহরিয়ার রহমান।

প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে তা জানি না।’

আর প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী খন্দকার শাহরিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা ড্রেন নির্মাণকাজের বেশ কিছু অনিয়ম পেয়েছিলাম। যার কারণে দুই দফা কাজ বন্ধ করা হয়। সর্বশেষ কাজ বন্ধ করেছেন প্রধান প্রকৌশলী। কাজ শুরু করার অনুমতি ঠিকাদার কার কাছ থেকে নিয়েছেন আমার জানা নেই।’

সার্বিক বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম  বলেন, ‘বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। মনিটরিং টিমের বৈঠকে আমিও ছিলাম। সেখানে আমি জোর দাবি জানিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে।’- আজকের পত্রিকা