ডেঙ্গু আর ডায়রিয়া, নতুন বিপদে রাজধানীবাসী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ডেঙ্গু নিয়ে তোলপাড়ের মাঝেই গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের প্রভাবে ঢাকায় দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই সঙ্গে ডেঙ্গু আর ডায়রিয়া এ বছর ঢাকায় নতুন এক বিপদ হয়ে উঠতে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগকে অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে, পাশাপাশি সুরক্ষার জন্য সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয় দুই হাজার ৭৬৭ জন। আর চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ৮৫২। এর মধ্যে চার হাজার ৮১৪ জনই ঢাকার, বাকি মাত্র ৩৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলের হাসপাতালে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ৩৬টি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২১৪ জন। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছে তারাও সবাই ঢাকার কোনো না কোনো হাসপাতালে এর আগে চিকিৎসা নিয়েছে। যদিও সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা তিন। তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু সন্দেহে আরো ১০ জনের বেশি মানুষের তথ্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) হাতে এসেছে বলে ওই ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়।

যদিও আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রক্রিয়া শেষ করে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মৃতের তথ্য প্রকাশ করতে চাই না। এটা করলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর সুযোগ থাকে।’

যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন রোগতত্ত্ববিদের কাছে নিজের মতামত তুলে ধরে বলেন, ‘মৃত্যুর সঠিক তথ্য প্রকাশে দেরি করা হলে কিংবা না করা হলে বরং তা নিয়ে মানুষের মধ্যে আরো বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হয়। তাই যে তথ্য আইইডিসিআরের হাতে আসে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ করে প্রকাশ করা উচিত।’

ডেঙ্গু নিয়ে এমন পরিস্থিতির মধ্যে ডায়রিয়াও জেঁকে বসেছে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়। এবার ডায়রিয়ার পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরো বেশি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

হেলথ ইমার্জেন্সি সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক জানান, গত ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে মোট দুই লাখ ৪৩ হাজার ১৬৩ জন। মারা গেছে তিনজন। এর মধ্যে গত সাত দিনে আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৮৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৭৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে মহাখালী আইসিডিডিআরবি হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছে ৪৩১ জন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সফি আহম্মেদ  বলেন, ‘এবার ডেঙ্গু এক্সটেন্ডেন্ট দেখা যাচ্ছে। যার প্রভাবে শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া দেখা যায়।’ তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন ও সাধারণ মানুষ কিভাবে ঘরের মশা নিয়ন্ত্রণ করবে তা নিয়ে তর্ক চলছে। কিন্তু তাতে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে বলে মনে হয় না। একদিকে সিটি করপোরেশন যেমন ঘরে ঢুকতে পারে না, অন্যদিকে সাধারণ মানুষও মশার লার্ভা নিধনের কোনো ওষুধ বাজারে পাচ্ছে না। যেসব স্প্রে ব্যবহার করা হয় সেগুলো শুধুই বড় মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য। এভাবে তো ডেঙ্গু মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

আন্তর্জাতিক উদারাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ার প্রকোপ যেন হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। এবার যেহেতু বৃষ্টি বেশি হচ্ছে আবার বন্যারও প্রভাব আছে, তাই বলাই যায় এবার ডায়রিয়ার প্রকোপ নিয়ে ভুগতে হবে বেশি। তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ডায়রিয়ার প্রভাব কেমন আছে সেটা নিয়ে নজরদারি দরকার আছে। এটা করা গেলে খুবই ভালো হবে। কারণ ডেঙ্গুর ধরন দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা  বলেন, ‘ডেঙ্গুর সঙ্গে ডায়রিয়া পরিস্থিতিও খারাপ হয় কিনা সেদিকে আমাদের নজর আছে। আমরা মানুষকে সচেতন ও সতর্ক করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচার চালাচ্ছি। মানুষের কাছে অনুরোধ থাকবে তারাও যেন নিজ থেকে একটু সতর্ক থাকে। কারণ শুধু সরকারের একার পক্ষে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বন্যাকবলিত এলাকায় এরই মধ্যে ডায়রিয়া প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে মেডিক্যাল টিমকে মাঠে নামিয়েছি। ঢাকায়ও প্রতিটি হাসপাতালে চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করা হয়েছে ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসার বিষয়ে। দেশের অন্যান্য এলাকায়ও একইভাবে সচেতনতামূলক কাজের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ বড়িও পাঠিয়েছি। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদেরও সতর্ক রাখা হয়েছে।’