ডলারের একক দর কার্যকর হচ্ছে

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) আরও একটি শর্ত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আওতায় ডলার বেচাকেনায় হরেক রকম উপকরণ ও দাম উঠে যাবে।

ডলারের একক দর কার্যকর হবে। এতে ডলার বেচাকেনায় স্বচ্ছতা আসবে। গ্রাহকরাও ডলারের দর সম্পর্কে সহজে বুঝতে পারবে। ডলারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার দামের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন উপকরণ উঠে যাবে। কার্যকর হবে একক দর।

এর আগে আইএমএফ ডলারের দরের হরেক রকম উপকরণ এবং এগুলোর বিভিন্ন ধরনের দাম নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তারা বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করার শর্ত দেয়। এর সঙ্গে ডলার বেচাকেনায় স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে দামের ক্ষেত্রেও একক দর চালুর কথা বলে। এ শর্ত জুনের মধ্যেই বাস্তবায়ন করতে হবে।

সূত্র জানায়, এ শর্ত বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ডলারের দাম নির্ধারণ করে। এর আলোকে সব ব্যাংক একই দরে ডলার বেচাকেনা করে।

ডলার কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো প্রায় একক দরে চলে এসেছে। তবে বিক্রির ক্ষেত্রে এখনো ভিন্নতা রয়েছে। এখন সব ব্যাংক ডলার কিনছে গড়ে ১০৩ টাকা করে। এর মধ্যে রপ্তানি বিল, টিটি (টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার) ক্লিন বা অনলাইনে ডলার স্থানান্তর, ওডি (ওভার ড্রাফট) বা চেক বা ড্রাফট আকারে ডলার কেনা হচ্ছে ১০৩ টাকা করে।

প্রায় সব ব্যাংকই এসব উপকরণ একই দরে কিনছে। আগে উপকরণগুলো বিভিন্ন ব্যাংক ভিন্ন দামে কিনত। তবে নগদ ডলার এখনো বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্ন দামে কিনছে। ব্যাংকভেদে সর্বনিু ১০৪ থেকে সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা ৭৫ পয়সা দরে কেনা হচ্ছে। গড়ে নগদ ডলার কিনছে ১০৬ টাকা ২৮ পয়সা দরে। রেমিট্যান্স কিনছে সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা দরে। তবে অনেক ব্যাংক এর চেয়ে কম বা বেশি দামেও কিনছে।

ডলার বিক্রির ক্ষেত্রে প্রায় সব ব্যাংকেই বিভিন্ন দর রয়েছে। এর মধ্যে আমদানির জন্য ডলার বিক্রি হচ্ছে সর্বনিু ১০৪ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা ৩৫ পয়সা দরে। ডলার কেনার গড় খরচের ভিত্তিতে এ খাতে দাম নির্ধারিত হচ্ছে। যেসব ব্যাংক বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনছে, তারা আমদানির ক্ষেত্রেও বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে।

ওই দরেই ব্যাংকগুলো টিটি বা ওডির মাধ্যমে ডলার বিক্রি করছে। নগদ ডলার বিক্রি করছে ১০৭ থেকে ১০৮ টাকা ৭৫ পয়সা দরে। তবে ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান অনেক কমে এসেছে। এ ক্ষেত্রে এখন ব্যবধান হচ্ছে ২ থেকে ৩ টাকা। আগে ব্যবধান ছিল ৫ থেকে ১১ টাকা।

আগে ডলার কেনার ৫ থেকে ৬ ধরনের উপকরণ ছিল। উপকরণভেদে দামও ছিল ভিন্ন ভিন্ন। এখন উপকরণ কমে দাঁড়িয়েছে তিনটিতে। তবে দাম একই। ডলার বিক্রির উপকরণ ছিল ৪ থেকে ৫ ধরনের। এগুলোর দামও ছিল ভিন্ন ভিন্ন। এখন উপকরণ কমে ২টিতে দাঁড়িয়েছে। দাম একই।

ডলারের দাম বিভিন্ন ধরনের হওয়ায় গ্রাহকরা ব্যাংকে গিয়ে ডলার কিনতে বিপাকে পড়তেন। কারণ, উপকরণগুলো সম্পর্কে গ্রাহকদের স্বচ্ছ ধারণা ছিল না। ফলে তারা উপকরণভেদে বেশি দামেও ডলার কিনতে বাধ্য হতেন। নতুন পদ্ধতি চালুর ফলে ডলার বেচাকেনায় স্বচ্ছতা ফিরে আসবে বলে মনে করেন গ্রাহকরা।

এর আগে সরকার আইএমএফ-এর ঋণের বেশকিছু শর্ত বাস্তবায়ন করেছে। আগামী জুনের মধ্যে ছয়টি শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ডলারের বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নিট রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ, সুদের হারের সীমা তুলে দেওয়া, ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন সংশোধন প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন উল্লেখযোগ্য।

সূত্র: যুগান্তর