ঋণ উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখবে

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথ দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে সহায়তা করবে। এ ঋণ সংকট মোকাবিলা ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভের ওপর চাপ কমবে। সম্প্রতি আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকে দেওয়া একটি চিঠিতে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেখানে তিনি আরও বলেছেন, গত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আইএমএফ বিভিন্ন সুবিধা দিয়েছে। আমাদের অর্থনীতিতে আইএমএফ’র অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

এ চিঠি পাঠানোর আগে বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদনের খবর দিয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক কৃষ্ণমূর্তি ভেঙ্কটা সুব্রামানিয়ান চিঠি দেন অর্থমন্ত্রীকে। সেখানে তিনি বলেছেন, বর্তমান আর্থিক খাতে যে চ্যালেঞ্জ বহন করছে বাংলাদেশ এই ঋণ দিয়ে তা মোকাবিলা করতে পারবে। ঋণ পাওয়ার আগে আইএমএফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে চিঠি দিয়েছেন যৌথভাবে অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। ওই চিঠিতে দেশের অর্থনীতির পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, করোনা থেকে উত্তরণের পর নতুন করে দেশের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্য, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। বিশ্ব অর্থনীতিতে আঘাত করেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। বিশেষ করে জ্বালানি তেল, গ্যাস, সার এবং অন্যান্য পণ্যের আমদানি মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এক ধরনের বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা বৃদ্ধি করে। এর প্রভাবে বৈদেশিক রিজার্ভ কমতে থাকে। এছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সরকারি ভর্তুকি ব্যয়কেও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু একই সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। ফলে একদিকে সরকারের আমদানি ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে কমছে রেমিট্যান্স থেকে আয়। এতে চাপের মুখে পড়ে দেশের অর্থনীতি। ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বিনিময় ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) ওপর। কারণ টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। বিনিময় হার কমিয়ে আনা, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ঘাটতি কমিয়ে আনা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। সে কাজটি সরকারকে করতে হচ্ছে।

চিঠিতে বলা হয়, বিগত ১৩ বছরে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। এ সময় সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজের পাশাপাশি উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি করে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯। এর ধাক্কায় প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা বাধা সৃষ্টি করেছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধ অর্জন হয়নি।

ওই চিঠিতে ইতঃপূর্বে আইএমএফ থেকে ৭৩ কোটি মার্কিন ডলার পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, এই ঋণ বাজেট সহায়তা ও কোভিড মোকাবিলায় কাজে লেগেছে। এই অর্থায়ন দেশের অর্থনীতির ঝুঁকি কমিয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, জলবায়ু মোকাবিলায় জিডিপির ২-৩ শতাংশের অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি’র (ইসিএফ) অধীনে এসডিআর ৮২ কোটি মার্কিন ডলার, এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি ইএফএফ আওতায় ১৬৫ কোটি মার্কিন ডলার আইএমএফ’র বোর্ড সভায় অনুমোদনের অনুরোধ করা হয়। এটা অনুমোদন দেওয়া হলে তা ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ঘাটতি, বাজেট ঘাটতি অর্থনীতির চাপ মোকাবিলায় কাজ করবে। ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য আইএমএফ ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। এটি পাওয়া যাবে সাত কিস্তিতে। ইতোমধ্যে প্রথম কিস্তি ছাড় করেছে। বর্তমানে যে বৈদেশিক মুদ্রা সংকট চলছে, এই ঋণ সেটা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। আইএমএফ জানিয়েছে, আগামী ৪২ মাস ধরে মোট সাত কিস্তিতে এই ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ঋণের গড় সুদ হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ। বর্ধিত ঋণ সহায়তা বা বর্ধিত তহবিল সহায়তা থেকে পাওয়া যাবে ৩.৩ বিলিয়ন ও ৩৩০ কোটি মার্কিন ডলার এবং রেজিলিয়্যান্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির আওতায় ১.৪ বিলিয়ন বা ১৪০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে।

এ ঋণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংস্থা আইএমএফ এবং বাংলাদেশের মধ্যে একাধিক চিঠি চালাচালি হয়। এসব চিঠিতে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ঋণের প্রয়োজন কেন, কোন দিকে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতির অবস্থা, ঋণ পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে কি করা হবে-এসব বিষয়ও তুলে ধরা হয়।

সূত্রমতে, ঋণ পাওয়ার পর আইএমএফ’র উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে দেওয়া চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশকে আইএমএফ’র ঋণ অনুমোদনের বিষয়ে আপনার চিঠি পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। আমি বিশ্বাস করি, এ ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষে আপনার সদয় সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ঢাকায় আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সফরকালে আপনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহামারি পরবর্তী সময়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সব প্রচেষ্টার মূল্যায়ন করেছিলেন। এ বিষয়টি আমি আপনাকে স্মরণ করাতে চাই। অর্থমন্ত্রী ঋণ ইস্যু নিয়ে তার চিঠিতে বলেছেন, ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করা হয়েছে। এটি শুনে আমি (অর্থমন্ত্রী) খুব আনন্দিত। ১৯৭২ সাল থেকে আইএমএফ’র সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব রয়েছে। আমি এই বছরের বসন্তের ব্যাংক-ফান্ড বৈঠকে আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছি।

বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি মেটাতে গত বছরের ২৪ জুলাই আইএমএফ’র কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সময় ঋণের পরিমাণ জানানো হয়নি। ঋণের বিষয়ে আলোচনা করতে গত বছরের নভেম্বরে আইএমএফ’র কর্মকর্তাদের একটি দল বাংলাদেশ সফর করে। সেই সময় প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছায় আইএমএফ। ৩০ জানুয়ারি ঋণ অনুমোদন দেয়। তবে ঋণ পেতে বরাবরের মতোই বেশ কিছু সংস্কারের শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। যার মধ্যে রয়েছে জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতের ভর্তুকি কমানো, টাকার বিনিময় ব্যবস্থা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া, রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার, কর আদায়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আধুনিক মুদ্রানীতি তৈরি করা, আর্থিক খাতের দুর্বলতা দূর করা এবং নজরদারি বাড়ানো ইত্যাদি।

সূত্র: যুগান্তর