ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু আজ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রেলওয়েতে ঈদের সময় কিংবা অন্য সময় ‘ভিআইপি কোটা’র নামে ৫ থেকে ১০ শতাংশ টিকিট বরাদ্দ ছিল। কোটার ওই টিকিট রেখে দেয়া হতো।

পরে তা ইচ্ছামতো যাকে খুশি তাকে দেয়া হতো। কিন্তু দীর্ঘ ২০ বছরের এ প্রথা ভেঙে দিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। আর এতে খুশি সাধারণ যাত্রীরা। এদিকে আজ থেকে ৫ দিনব্যাপী ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে। প্রথম দিন ৩১ মের টিকিট বিক্রি হবে।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘রেলপথমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে, কোনো অবস্থাতেই ভিআইপি কোটার নামে টিকিট দেয়া যাবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। মন্ত্রীর নির্দেশনার পরও রেলভবন, কমলাপুর ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে এমপি, মন্ত্রীদের ডিও লেটারসহ সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিদের কাছ থেকে অগ্রিম টিকিটের জন্য চাহিদাপত্র আসছে। এতে ভয়-আতঙ্কে রয়েছেন টিকিট বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের চোখ রাঙানোসহ ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জানান, সাধারণ যাত্রীদের হক মেরে ভিআইপি কোটার বাণিজ্য চলবে না। ট্রেন সব মানুষের, ট্রেন সাধারণ মানুষের বাহন। এখানে সব মানুষ সমান। আমরা ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ টিকিট ই-টিকিটে দিয়ে দিয়েছি। ভিআইপিরা কি ই-টিকিটে টিকিট কাটতে পারেন না? এ সেবা পেতে তো তাদের জন্য নিষেধ নেই। আমরা চেষ্টা করছি রেলের সব টিকিটই ই-টিকিটের মাধ্যমে দেব।

রেলমন্ত্রী বলেন, ঈদে যাত্রীসেবা নিশ্চিত ও অতিরিক্ত যাত্রী বহনে আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। চলমান ট্রেনের সঙ্গে ঈদ স্পেশাল ট্রেন ও অতিরিক্ত যাত্রীবাহী কোচ দিয়ে ঈদযাত্রা সাজিয়েছি। কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটবেন আর কেউ অনায়াসে টিকিট পেয়ে যাবেন- এটা চরম বৈষম্য। ভিআইপি কোটার নামে কোনো যাত্রী কিংবা গোষ্ঠী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিটি স্টেশনসহ স্টেশন চত্বর সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। এবার ঢাকায় ৫টি স্থান থেকে টিকিট দেয়া হবে। সব ক’টি স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রেলভবন ও কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে জানা যায়, আজ (২২ জুন) থেকে ৫ দিনব্যাপী ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে। রাজধানীর ৫টি স্থান ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৯টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। আর ঢাকার একজন সংসদ সদস্য একাই ২টি ডিও লেটারের মাধ্যমে ৮৩টি টিকিটের চাহিদাপত্র দিয়েছেন। অপর এক সংসদ সদস্য ডিও লেটার দিয়েছেন ৫৭টি টিকিটের জন্য। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ২৩টি ডিও লেটার এসেছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে অপারেশন বিভাগ। এসব ডিও লেটার ছাড়াও প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা লিখিতভাবে শত শত টিকিট চেয়েছেন। এছাড়া রেলওয়ের প্রায় সব কর্মকর্তার মোবাইলে মেসেজ দিয়ে টিকিটের চাহিদা চাচ্ছেন। যে কোনো মূল্যে টিকিট দিতে হবে বলে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে কর্মকর্তারা বিব্রতবোধ করছেন। তারা জানান, রেলের কোনো আইনে ভিআইপি কোটা নামে টিকিট নেই। এমনকি এমপি-মন্ত্রীদের নামেও নেই। চাহিদা অনুযায়ী মন্ত্রী সেলুন পেতে পারেন। ২০ বিশ বছর আগে নেপথ্যে সীমিত সংখ্যক টিকিট কোটায় দেয়া শুরু হয়। কিন্তু গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এক প্রকার জোর করে রেলের কর্মকর্তাদের ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভিআইপি কোটায় টিকিট দিতে বাধ্য করা হয়। সেই থেকে অনিয়মটি নিয়মে পরিণত হয়। সেই অনিয়ম ভেঙে দিয়েছেন বর্তমান রেলপথমন্ত্রী। তার সাহসের প্রশংসা করেছেন সাধারণ মানুষ।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়াজাহান জানান, প্রচুর ডিও লেটার আসছে। এমপি-মন্ত্রী আমাদের কাছে খুবই সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের ডিও লেটার সম্মানের সঙ্গে রাখতে হয়। প্রতিটি ডিও লেটারের বিষয়ে আমরা রেলপথমন্ত্রীকে অবগত করছি। মন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে ভিআইপি নামে কাউকে টিকিট দেয়া যাবে না। হোক ডিও লেটার, কিংবা নানা নামে লিখিত চাহিদাপত্র। তিনি বলেন, চাপ সইতে পারছি না। ফোনের পর ফোন। মোবাইল বন্ধ করেও রাখতে পারছি না। অনলাইনে ৫০ শতাংশ টিকিট রয়েছে। ভিআইপিরা অনলাইন কিংবা কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করলে সাধারণ যাত্রীরা খুশি হবেন।

ঢাকা রেলওয়ের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, ভিআইপি কোটায় টিকিট বিক্রি সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু যারা এ কোটায় টিকিট নিতে আসছেন তাদের কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা রীতিমতো আতঙ্কে আছি। এতদিন এ প্রথা এক প্রকার অবৈধভাবেই চলে আসছিল। প্রতি বছরই কোটার টিকিট বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হতো। এবার এ থেকে মুক্তি পাব বলে আশা করছি। ভিআইপি কোটায় টিকিট না থাকায় স্টেশনে সংঘাতের আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কমলাপুরসহ ৫টি স্থান থেকে এবার ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। এটা আমাদের জন্য একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ। সফল হব কিনা জানি না।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক বাণিজ্যিক কর্মকর্তা জানান, বেশ ভয়ে আছি। কোটায় টিকিট দেয়া হবে না এমনটা শুনে অনেকে হাসি-তামাশা করছেন। কেউ কেউ বলছেন, যে কোনো মূল্যে তারা টিকিট নেবেন। ইতিমধ্যে যারা ভিআইপি কোটায় টিকিটের চাহিদা চেয়েছেন তারা স্টেশন তথা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অফিসে ভিড় করছেন। কেউ হুমকি দিচ্ছেন বদলি করার। কেউ বলছেন, চট্টগ্রামে চাকরি করতে হলে চাহিদা অনুযায়ী টিকিট দিতে হবে।

জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী রফিকুল আলম বলেন, পৃথিবীর কোথাও ট্রেনের টিকিট কোটা সিস্টেম কাটা হয় না। কোটা প্রথায় সাধারণ যাত্রীরা হতাশ হন। টিকিট বিক্রয় কার্যক্রমেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মন্ত্রী স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী কোটা ছাড়াই এবার টিকিট বিক্রয়ের সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ নিয়ে একাধিক বার বৈঠকও হয়েছে।

অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু আজ : আজ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত (৫ দিনব্যাপী) ঢাকার কমলাপুর, বিমানবন্দর তেজগাঁও, বনানী, পুরাতন ফুলবাড়িয়া ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিক্রি হবে। কাউন্টারে মোট অগ্রিম টিকিটের ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হবে। বাকি ৫০ শতাংশ ই-টিকিটে বিক্রি হবে। কাউন্টার এবং ইন্টারনেটে একই সময়ে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইন্টারনেটে টিকিট বিক্রি না হলে সেই সব টিকিট কাউন্টারে চলে আসবে। কাউন্টার থেকে সাধারণ যাত্রীরা সেই টিকিট কাটতে পারবেন।

আজ ৩১ মে’র অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে। কাল (২৩ জুন) ১ জুলাই, ২৪ জুন ২ জুলাই, ২৫ জুন ৩ জুলাই এবং ২৬ জুন ৪ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দেয়া হবে, ঢাকা থেকে রাজশাহী, খুলনা, পঞ্চগড়, চিলাহাটি, রংপুর, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ ও ঈশ্বরদীগামী ট্রেনের টিকিট। বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিক্রি হবে, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী ট্রেনের টিকিট। তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিক্রি হবে ঢাকা থেকে তারাকান্দি, দেওয়ানগঞ্জ ও জামালপুরগামী ট্রেনের টিকিটি। বনানী স্টেশনে থেকে দেয়া হবে, ঢাকা থেকে নেত্রকোনা ও মোহনগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট। ফুলবাড়িয়া পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন থেকে দেয়া হবে, ঢাকা থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট।